ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কুল বাগানেই পচে নষ্ট হচ্ছে

নীলফামারীর কুলচাষীদের মাথায় হাত, ভর্তুকি দাবি

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ৪ মার্চ ২০১৫

নীলফামারীর কুলচাষীদের মাথায় হাত, ভর্তুকি দাবি

তাহমিন হক, নীলফামারী ॥ অবরোধের কারণে স্মরণকালের বাজার ধসে দুইশত টাকা মণ দরে নেমেছে কুল। ফলে অর্থকরী ফল বিভিন্ন জাতের কুলের নীলফামারীতে বাম্পার ফলন হলেও বিএনপির নেতৃত্বে ডাকা লাগাতার অবরোধের সঙ্গে হরতালের কারণে মাথায় হাত পড়েছে কুলচাষীদের। স্থানীয়ভাবে বাজারে মূল্য কম এবং অবরোধ ও হরতালে ঝুঁকি নিয়ে অন্য স্থানে কুল প্রেরণে ট্রাকভাড়া তিনগুণ হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যে কুল এক সময় কুলচাষীদের স্বাবলম্বী করেছিল সেই কুল বিএনপি-জামায়াতের অবরোধের স্বাবলম্বীদের ফকির বানিয়ে দিচ্ছে। কৃষিবিভাগ সূত্র মতে, নীলফামারী জেলায় ১৩৯ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের অর্থকরী ফল কুল চাষ হয়েছে। প্রতিহেক্টরে সারে চার টন হিসেবে কুল উৎপাদন ধরা হয়েছে। গত কয়েক বছরে কুলের বাজার মূল্য বেশি ছিল। কিন্তু এবার এই কুল বাজারে আসার সময় শুরু হয় লাগাতার অবরোধ। ফলে শুরু থেকেই বাজারে মূল্য কমতে থাকে। অনেক কুল বাগানের কুল বাজারজাত করতে না পারায় বাগানেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার হিসাব মেলাই দুস্কর। বাগানের মালিকরা বাগানে কুলের মণ মাত্র দুইশত টাকায় হাক-ডাক দিলেও ক্রেতার অভাবে সেই কুলও বিক্রি হচ্ছে না। ফলে একটি বাগানের পরিচর্যায় যে শ্রমিকরা কাজ করছে কুল বিক্রি করেও তাদের মজুরী উঠছে না। অথচ একটি বছরে কুলের বাগান পরিচর্যায় খরচ হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। জেলার জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রাম ইউনিয়নের শালনগ্রামে লিনা ফ্রুট গার্ডেন নামের একটি বরই বাগানে গিয়ে দেখা যায় এখানে বাউকুল, আপেল কুল, নারীকেলী কুল ও থাইকুলে ভরা। গাছের বরই পেকে ও পচে মাটিতে পড়ে নষ্ট হতে শুরু করেছে। বাগানের ব্যবস্থাপক মীর মকছেদুল হোসেন জানান, এ বছর কুল বাজারজাতকরণের সময় থেকে অবরোধ শুরু হওয়ায় বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা আসতে পারেনি। আর আমরাও কুল বাজারজাত করতে পারিনি। ফলে লোকশান গুণতে হচ্ছে। সাড়ে ৬ একর জমির ওপর এ কুল বাগানের পরিচর্যা করতে প্রতিবছর ব্যয় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা। বছর শেষে কুল বিক্রি করে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ হচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি বাগান থেকে কুল তুলতে শুরু করা হলেও অবরোধের কারণে বাজারে দাম নেই। অথচ গত কয়েক বছরে প্রতিমণ কুল শুরুর দিকে ২২শ’ টাকা থেকে শেষের দিকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর এখন বাগানে দুইশত টাকা মণ দরে কুল ক্রয়ে লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এ বছর সর্বসাকুল্যে স্থানীয় বাজারে সাড়ে চার লাখ টাকার কুল বিক্রি হয়েছে। এখনও বাগানে প্রায় ২৫ লাখ টাকার কুল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোঃ ইদ্রিস আলী বলেন, জেলায় ১৩৯ হেক্টর জমিতে বরই চাষ হয়েছে। প্রতিহেক্টরে সাড়ে চার টন হিসেবে ৬২৫ মেট্রিক টন বরই উৎপাদন হয়েছে। হরতাল অবরোধেও যান চলাচল স্বাভাবিক আছে। তবে পরিবহন ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকদের সরকারীভাবে কিছু সহযোগিতা দেয়া হয়। এ পরিস্থিতিতে সরকারীভাবে কৃষকদের ক্ষতিপূরণের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত আমরা পাইনি।
×