ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মহিলা ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিতে চান সাবিনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ৪ মার্চ ২০১৫

মহিলা ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিতে চান সাবিনা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যতদিন বাংলাদেশের ফুটবল বেঁচে থাকবে, ততদিন সন্দেহতীতভাবে উচ্চারিত হবে দুটি নাম- কাজী মোঃ সালাউদ্দিন এবং সাবিনা খাতুন। বিদেশী কোন ক্লাবে খেলা প্রথম বাংলাদেশী ফুটবলার হলেন বাফুফের বর্তমান সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। তিনি ১৯৭৫ সালের হংকংয়ের এফসি ক্যারোলিনে খেলেছিলেন। এর ৪০ বছর পর বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ফুটবলার হিসেবে বিদেশী কোন ক্লাবের হয়ে খেলা প্রথম খেলোয়াড়ে পরিণত হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের সহ-অধিনায়ক এবং ফরেয়ার্ড সাবিনা খাতুন। সেই সঙ্গে গড়তে যাচ্ছেন ইতিহাস। ‘আমার পাঁচ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে এটাই হচ্ছে সর্বোচ্চ অর্জন। এ জন্য ধন্যবাদ বাফুফেকে, বিশেষ করে কিরণ আপাকে। তাঁর কারণেই আমার সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের বাইরের কোন ক্লাবের হয়ে খেলা। আমি ওখানে ভাল খেলার আপ্রাণ চেষ্টা করব।’ বাফুফে ভবনে বসে মঙ্গলবার যখন সাবিনা কথাগুলো বলছিলেন, তখন দৃঢ়প্রত্যয়ী দেখাচ্ছিল তাঁকে। এর আগেও বিদেশের মাটিতে খেলতে গিয়েছেন। তবে সেটা সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে। এই প্রথম বিদেশের কোন ক্লাবে খেলতে যাবেন, তাও একা। ভয় করবে না? ‘ভয়ের কি আছে?’ মুচকি হেসে পাল্টা প্রশ্ন করে ভয়কে যেন জয় করে ফেললেন সাবিনা। আরও জানালেন, তার এমন কৃতিত্বে মা-বাবা দারুণ খুশি হয়েছেন।’ গত বছরের ১৭ নবেম্বরের ঘটনা। পাকিস্তান অনুষ্ঠিত সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে ‘এ’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারিয়ে উন্নীত হয় শেষ চারে। দলের পক্ষে জোড়া গোল করেন সাবিনা খাতুন। সেই ম্যাচের পর থেকেই মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাব আগ্রহী হয়ে ওঠে তাদের ক্লাবে সাবিনাকে খেলাতে। সর্বশেষ এক মাস ধরে তারা বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিল। তারই চূড়ান্ত পরিণতি সাবিনার এ ক্লাবের হয়ে খেলা। এ ক্লাবের হয়ে আগামী ১৪ মার্চ থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মালদ্বীপে অনুষ্ঠিত হবে ক্লাবভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগিতা ‘ক্লাব মালদ্বীপস্ ওম্যান্স ফুটসাল ফিয়েস্তা ২০১৫’-এ অংশ নেবেন সাবিনা। এই টুর্নামেন্টে মোট ১৪ ক্লাব অংশ নেবেন। এখানে খেলে সাবিনা পাবেন প্রায় ৯০০ ডলার। মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবই সাবিনার ক্রীড়া সরঞ্জাম, থাকা-খাওয়া, আসা-যাওয়ার সব খরচ বহন করবে। এ আসরে খেলতে আজ বুধবার বিকেল সোয়া ৪টায় সাবিনা বিমানযোগে মালদ্বীপের উদ্দেশে রওনা হবেন। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাফুফে কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাবিনা ছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ, বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান ও এএফসির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মাহফুজা আক্তার কিরণ, বাফুফের মহিলা ফুটবল কমিটির দুই সদস্য আয়েশা জামান খুকী ও নাসরিন আক্তার বেবী। কিরণ বলেন, ‘বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল যে এগিয়ে যাচ্ছে, সাবিনার মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়াটা তারই প্রমাণ। আমি বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে সাবিনার মতো এদেশের অনেকেরই বিদেশী ক্লাবে খেলার পথ সুগম হবে।’ ফুটসাল টুর্নামেন্টে নিজের লক্ষ্য কী হবে, সেটাও স্থির করে ফেলেছেন সাবিনা, ‘মালদ্বীপ পুলিশ ক্লাব এই ফুটসাল টুর্নামেন্টে গত আসরে রানার্সআপ হয়েছিল। এবার আমি নিজের ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন করানোর পথে ভূমিকা রাখতে চাই। হতে চাই টুর্নামেন্টের শীর্ষ গোলদাতা।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাবিনা বলেন, ‘আমি ওখানে ভাল খেলে এটাই প্রমাণ করবÑ বাংলাদেশের মেয়েরা সত্যিই ভাল ফুটবল খেলতে পারে। আমি ভাল খেললে আমাদের দেশের অন্য মহিলা ফুটবলাররাও ভব্যিষতে বিদেশী ক্লাবগুলোতে খেলার সুযোগ পাবে।’ গত বছরের ডিসেম্বরে এশিয়ার সেরা ৭ মহিলা ফুটবলারের তালিকায় নাম উঠেছিল বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড সানজিদা আক্তারের। দিনটি ছিল বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জন্য ঐতিহাসিক। এবার আরেক মহিলা ফুটবলার বাংলাদেশের ফুটবলকে তুললেন নতুন উচ্চতায়। তিনি ২২ বছর বয়সী সাবিনা খাতুন। সাবিনার এ সাফল্যে বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি খুব খুশি যে, আমাদের একজন মেয়ে যাচ্ছে বিদেশী কোন ক্লাবে খেলতে। এটাকে আমি বলব শুরু। আমি সাবিনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। সে যদি মালদ্বীপে ভাল ফুটবল খেলতে পারে তাহলে আরও মেয়েরা ডাক পাবে বিভিন্ন দেশের ক্লাব থেকে।’ সাবিনার আদ্যোপান্ত ॥ বাবা : সৈয়দ গাজী, মা : মমতাজ বেগম, নিবাস : পলাশপুর, সাতক্ষীরা সদর, জন্ম : ২৫ অক্টোবর, ১৯৯৩, পরিবারে অবস্থান : ৫ বোনের মধ্যে চতুর্থ (বড় এবং মেজ বোনই এখন সংসার চালাচ্ছেন)। চাকরি : ২০১১ সাল থেকে বিজেএমসিতে এ্যাথলেট হিসেবে চাকরিরত; ফুটবল খেলা শুরু : ২০০৯ সাল থেকে, ফুটবলে হাতেখড়ি : সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল কোচ আকবর স্যারের মাধ্যমে, পড়াশোনা : উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে, ভবিষ্যত লক্ষ্য : দেশকে পরবর্তী সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে অন্তত রানার্সআপ করানো, উচ্চতা : ৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, আদর্শ ফুটবলার : আমিনুল হক, মার্তা এবং লিওনেল মেসি, আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার : গোলসংখ্যা ১০ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট : এসএ গেমস (২০১০), এএফসি অ-১৯ ওমেন্স ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ বাছাইপর্ব (২০১০), সাফ ওমেন্স ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১০), অলিম্পিক প্রি কোয়ালিফাইং রাউন্ড (২০১০), সাফ ওমেন্স ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ, শ্রীলঙ্কা (২০১২), বাংলাদেশ-কলকাতা প্রীতি ফুটবল ম্যাচ (২০১৩), এএফসি ওমেন্স এশিয়ান কাপ (২০১৩), সাফ ওমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ, পাকিস্তান (২০১৪), স্থানীয় ক্যারিয়ার : মোট গোল ১১৬, প্রথম ক্লাব : শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাব (২০১০), সর্বশেষ ক্লাব : ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব (২০১৪); টুর্নামেন্টসমূহ : সিটিসেল জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (২০০৯), ঢাকা মেট্রোপলিটন মহিলা ফুটবল লীগ (২০১১, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা), কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১২, সেরা খেলোয়াড়), কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১৩, সর্বোচ্চ গোলদাতা), কেএফসি জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ (২০১৩, সেরা খেলোয়াড়), কোচিং ক্যারিয়ার : ফিফা ওমেন্স কোচিং কোর্স (২০১৩), এএফসি ‘সি’ সার্টিফিকেট কোর্স (২০১৩)।
×