ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোয়া শ’ সক্রিয় সংগঠন শনাক্ত;###;অর্থ আসে বারোটি উৎস থেকে;###;সহায়তা করে ২৩১ এনজিও

দেশকে মেধাশূন্য করতে মিশনে নেমেছে জঙ্গীরা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৪ মার্চ ২০১৫

দেশকে মেধাশূন্য করতে মিশনে নেমেছে জঙ্গীরা

ফিরোজ মান্না ॥ দেশকে মেধাশূন্য করার মিশন বাস্তবায়নে নামা ধর্মান্ধ জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর ওপর কড়া নজরদারি শুরু করেছে প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা। মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের পর থেকে জঙ্গী সংগঠনগুলোর ওপর এই নজরদারি শুরু করে সংস্থাটি। তারা প্রকাশ্য ও গোপন ১২৫টি জঙ্গী সংগঠন চিহ্নিত করেছে। এই সংগঠনগুলো দেশে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে বেশ কয়েকটি সংগঠনের রয়েছে সামরিক প্রশিক্ষণ। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। অর্থসহ অস্ত্র সরবরাহ পর্যন্ত পাচ্ছে এসব উগ্র জঙ্গী সংগঠনগুলো। দেশকে তালেবানী রাষ্ট্রে পরিণত করতে তাদের গোপন মিশন এখন প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, দেশের জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চারটি আত্মঘাতী সংগঠন রয়েছে। এই সংগঠনগুলোর অনেক সদস্য দেশে-বিদেশে অস্ত্র পরিচালনায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের কর্মীবাহিনী কয়েকটি স্তরে সাজানো। এক স্তর টার্গেট মিস করলে অন্য স্তর ব্যবহার করা হয়। ১২টি উৎস থেকে জঙ্গী সংগঠনগুলোর বার্ষিক আয় প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। এ মুনাফার সর্বোচ্চ ২৭ ভাগ আসে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি থেকে আসছে। এদের কার্যক্রম ২৩১টি বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) যার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের অর্থনীতির উৎস বন্ধ না করার কারণে মুক্তমনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের আজ নির্মমভাবে প্রাণ দিতে হচ্ছে। এই জঙ্গী সংগঠনগুলো বাংলাদেশের জন্য মহাবিপর্যয়ের কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা। ২০০১ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে সারাদেশে জঙ্গী উত্থান ও কর্মকা- প্রমাণ করে তাদের অন্যতম টার্গেট বাংলাদেশ। জানা গেছে, বাংলাদেশে ধর্মান্ধ উগ্র জঙ্গীবাদী গোষ্ঠীগুলো হচ্ছে, আফগান পরিষদ, আহলে হাদিস আন্দোলন, আহলে হাদিস যুবসংঘ (এএইচজেএস), আহলে হাদিস তবলিগ ইসলাম, আহসাব বাহিনী (আত্মঘাতী সুইসাইড গ্রুপ), আল হারামাইন (এনজিও), আল হারাত আল ইসলামিয়া, আল ইসলাম মারর্টারস ব্রিগেড, আল ইসলামী সংহতি পরিষদ, আল জাজিরা, আল জিহাদ বাংলাদেশ, আল খিদমত, আল কুরত আল ইসলামী মার্টারস, আল মারকাজুল আল ইসলামী, আল মুজাহিদ, আল কায়েদা, আল সাঈদ মুজাহিদ বাহিনী, আল তানজিব, আল উম্মাহ, আল্লার দল, আল্লাহর দল ব্রিগেড (আত্মঘাতী), আল ইয়াম্মা পরিষদ, আমানাতুল ফোরকান আল খাইরিয়া, আমিরাত-ই-দিন, আমরা ঢাকাবাসী, আনজুমানে তালামিজিয়া ইসলামীয়া, আনসারুল্লাহ মুসলেমিন, আরাকান আর্মি (এএ), আরাকান লিবারেশন ফ্রন্ট (এএলপি), আরাকান লিবারেশন পার্টি, আরাকান মুজাহিদ পার্টি, আরাকান পিপলস আর্মি, আরাকান রোহিঙ্গা ফোর্স, আরাকান রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), ইউনাইটেড স্টুডেন্ট এ্যাসোসিয়েশন অব আরাকান মুভমেন্ট, ইবতেদাদুল আল মুসলিমা, ইকতেদুল তাহাল আল মুসলেমিন, ইকতেদুল তুহাল-আল-মুসলেমিন (আইটিএম), ইন্টারন্যাশনাল খাতমে নব্যুয়ত মুভমেন্ট, ইসলাহুল মুসলেমিন, ইসলামী বিপ্লব পরিষদ, ইসলামী জিহাদ গ্রুপ, ইসলামী লিবারেশন টাইগার অব বাংলাদেশ (আইএলটিবি), ইসলামী প্রচার মিডিয়া, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী সৈন্য, ইসলামিক সলিডারিটি ফ্রন্ট, ইয়ং মুসলিম, এবতেদাতুল আল মুসলামিন, এহসাব বাহিনী, ওয়ারেট ইসলামিক ফ্রন্ট, ওয়ার্ড ইসলামিক ফ্রন্ট ফর জেহাদ, কালেমায়ে-জামাত, কালেমা ই-দাওয়াত (অধ্যাপক আবদুল মতিন এ দলের প্রধান), কতল বাহিনী (আত্মঘাতী গ্রুপ), খতমে নব্যুয়াত আন্দোলন পরিষদ বাংলাদেশ (এএনএপিবি), খতমে নব্যুয়াত কমিটি বাংলাদেশ, খিদমত-ই-ইসলাম, খিলাফত মজলিশ, খিতল-ফি-সাবিলিল্লাহ, খিলাফত-ই-হুকুমত, ছাত্র জামায়েত, জাদিদ-আল-কায়েদ, জাগ্রত মুসলিম বাংলা, জাগ্রত মুসলিম জনতা বাংলাদেশ (জেএমজেবি), জামাত-এশ-সাদাত, জামায়াত-উল-ইসলাম মুজাহিদ, জামা-তুল-মুজাহেদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), জামাত-ই-মাদারাসিন বাংলাদেশ, জামাত-ই-তুলবা, জামাত-ই-ইয়াহিয়া, জামাত-ইল-ফালিয়া, জামাতুল ইসলাম মুজাহিদ, জামাতে আহলে হাদিস, জামেয়া মোহাম্মদিয়া আরাবিয়া, জামিয়াতি ইসলামী সলিডারিটি ফ্রন্ট, জামিয়াতুল ইয়াহিয়া উত তুরাজ, জঙ্গী হিকমত, জাইশে-মুস্তাফা, জাইশে- মোহাম্মদ, জামাতুল-আল-শাদাত, ডেমোক্র্যাটিক পার্টি অব আরাকান, ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি অব আরকান (এনইউপিএ), নিজামে ইসলামী পার্টি, ফারইস্ট ইসলামী, তামির-উদ-দীন, তাহফিজ হারামাইন, স্বাধীন বাংলাদেশ কমিটি, তানজিম বাংলাদেশ, তানজিম-ই-খাতেমি নব্যুয়ত, তাওহিদী জনতা, দাওয়াত-ই-ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলাম রক্ষা কমিটি, বাংলাদেশ সন্ত্রাসবিরোধী দল, বিশ্ব ইসলামী ফ্রন্ট, মজলিশ-ই-তাহফিজে খাতমে নব্যুয়ত, মুজাহিদী তেয়্যবা, মুসলিম লিবারেশন ফ্রন্ট অব বার্মা, মুসলিম মিল্লাত শরীয়াহ কাউন্সিল, মুসলিম মুজাহিদীন বাংলাদেশ (এমএমবি), মুসলিম রক্ষা মুজহীদ দল, রোহিঙ্গা ইনডিপেন্ডেন্টস ফোর্স, রোহিঙ্গা ইসলামী ফ্রন্ট, রোহিঙ্গা প্যাট্রিয়াটিক ফ্রন্ট, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন, রিভাইভাল অব ইসলামী হেরিটেজ (এনজিও), লিবারেশন মিয়ানমার ফোর্স, লুজমা মক্কা আল খায়েরা, শাহাদাত-ই-আল হিকমা, শাহাদাত-ই-নব্যুয়াত, শহীদ নাসিরুল্লাহ খান আরাফাত ব্রিগেড (আত্মঘাতী গ্রুপ), সত্যবাদ, সাহাবা সৈনিক, হরকাত-উল-জিহাদ, হায়েতুল ইগাসা, হেফাজেতে খতমে নব্যুয়ত, হিজবু-ত-তাহরির, হিজবে আবু ওমর, হিজবুল মাহাদী, হিজবুল্লাহ আদেলী বাংলাদেশ, হিজবুল্লাহ ইসলামী সমাজ, হিজবুত-তাওহিদ ও হিকমত-উল-জিহাদ, আনসারুল্লাহ বাংলাটিম-৭ নামের সংগঠনগুলোর ওপর এই নজরদারি শুরু করেছে। সূত্র জানিয়েছে, প্রকাশ্য ও গোপন জঙ্গী সংগঠনের ১২৫টি চিহ্নিত সংগঠনের বাইরেও আরও কিছু সংগঠন দেশে সক্রিয় রয়েছে। যারা প্রকাশ্যে না এলেও গোপনে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনগুলোর ‘মাদার’ সংগঠন হচ্ছে জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবিরের দেয়া আর্থিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে তারা জঙ্গী কর্মকা- পরিচালনা করছে। জামায়াত শিবিরের অর্থ আয়ের উৎসগুলোর মধ্যে ব্যাংক, বীমা, লিজিং কোম্পানি থেকে সর্বোচ্চ আর্থিক সুবিধা যাচ্ছে। এর পরিমাণ মুনাফার ২৭ ভাগ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ৮ ভাগ যাচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা থেকে। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০ দশমিক আট ভাগ, ওষুধ শিল্প ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান থেকে আসে ১০ দশমিক ৪ ভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৯ দশমিক ২ ভাগ, রিয়েল এস্টেট ব্যবসা থেকে ৮ দশমিক ৫ ভাগ, সংবাদ মাধ্যম ও তথ্যপ্রযুক্তি থেকে আসে ৭ দশমিক ৮ ভাগ, পরিবহন যোগাযোগ ব্যবসা থেকে আসে ৭ দশমিক ৫ ভাগ। এর মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে বার্ষিক আয় ৫৪০ কোটি টাকার বেশি। খুচরা-পাইকারি-ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আয় ২১৬ কোটি টাকা, ওষুধ খাত থেকে আয় ২০৮ কোটি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১৮৪ কোটি, পরিবহন যোগাযোগ খাত থেকে বার্ষিক আয় দেড় শ’ কোটি টাকা। ২৩১টি বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) যার মাধ্যমে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গোয়েন্দারা অর্থের উৎসগুলোর ওপরও নজরদারি চলবে। ইতোমধ্যে জঙ্গী অর্থায়নের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওপর তারা নজরদারি করে যাচ্ছে।
×