ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রফতানি খাত রক্ষায় ২১ দাবি ব্যবসায়ীদের

চলমান পরিস্থিতির জন্য বিএনপি দায়ী ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৩ মার্চ ২০১৫

চলমান পরিস্থিতির জন্য বিএনপি দায়ী ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের চলমান পরিস্থিতিকে অস্বাভাবিক উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আবারও বলেছেন, এজন্য বিএনপি দায়ী। তাদেরই উচিত এ অবস্থার অবসান ঘটানো। আর রফতানি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, দেশকে অকার্যকর ও অর্থনৈতিক কর্মকা- ধ্বংস করতেই হরতাল-অবরোধের নামে নাশকতা চলছে। এ অবস্থায় চলমান পরিস্থিতি থেকে রফতানি খাত রক্ষায় ২১ টি দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের এই দাবির বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি অর্থমন্ত্রী। সোমবার সচিবালয়ে রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর নেতারা দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যান। এ সময় রফতানিকারকদের পক্ষে বিজিএমইএ’র সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম চলমান হরতাল-অবরোধের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ অর্থমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। পুরো বিষয়টি লিখিত আকারে উপস্থাপন করেন এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ রফতানিকারকদের এই দাবি পূরণে অর্থমন্ত্রীকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য গুরুতর বাধা। প্রায় দুই মাসের হরতাল-অবরোধকে এক ধরনের জাতীয় সঙ্কট হিসেবে আখ্যায়িত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সঙ্কট বললে বিষয়টি অনেক বিরাট হয়ে যায়, বিষয়টি অত বিরাট নয়। তবে এটি উন্নয়নের জন্য গুরুতর বাধা। তিনি বলেন, আমি চিন্তিত এ ব্যাপারে। কারণ সময়টা অনেক বড় বিষয়। টানা প্রায় দুই মাস হয়ে গেল এ পরিস্থিতি চলছে। কিন্তু এর শেষ বা শেষ রাস্তাটা কোথায় সেটা তো আমাদের দেখতে হবে। কিন্তু এখনও এর কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির প্রসঙ্গে মুহিত বলেন, দলটি তো সংসদেও নেই। সংসদে থাকলে তো একটা ফোরাম থাকে। আলাপ-আলোচনার সুযোগ থাকে। এখন বিএনপি ও বিএনপির সমর্থকদের ডিউটি হচ্ছে এ অবস্থার অবসান ঘটানো। কারণ তারাও এ দেশের নাগরিক। আর বর্তমান পরিস্থিতিতে সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমান অবস্থার সুযোগে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতাদের বাংলাদেশে আসতে না দেয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন নতুন অর্ডারের সময়। আমি সবচেয়ে বেশি অরিড এজন্য যে, বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতাদের আসতে সাবধান করে দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। দেখছি কী করা যায়। এবারের প্রবলেমটা টোটালি আনএক্সপেকটেড। আমরা বিপদে আছি। দুই মাস থেকেই বিপদটা চলছে। বস্তুত দুই মাসও হয়নি। তবে এর প্রভাব কিছুদিন পর বোঝা যাবে। রফতানিকারকদের উদ্দেশে অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা যা বললেন আমি এ নিয়ে সব কিছু মন্তব্য করতে পারব না। আপনারা সকলেই জানেন কেন এটা হয়েছে। এটা অসহনীয় অবস্থা। তবে জীবনপ্রবাহ বন্ধ হচ্ছে ঠিক তা নয়। জীবন প্রবাহ ঠিকই আছে। মতবিনিময় সভায় বিজিএমইএ নেতারা চলমান পরিস্থিতিকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ইমেজ সমস্যা হিসেবে আখ্যায়িত করে রফতানিকারকদের জন্য সরকারের নীতিগত সহায়তা অব্যাহত রাখা, নগদ প্রণোদনা প্রদান ও দ্রুত ছাড়করণসহ ২১ দফা দাবি তুলে ধরেন। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, চলমান পরিস্থিতিতে সরকার বড় রফতানিকারকদের যেসব সুবিধা দেবে একই সুবিধা যেন অন্যান্য রফতানি খাতেও দেয়া হয়। কারণ তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তিনি বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ বেড়েছে। এদিকে, চলমান সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত রফতানিমুখী তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতসহ সব রফতানি খাতে সহযোগিতা প্রদানের যে ২১টি দাবি তুলে ধরা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে -রাজনৈতিক অস্থিরতার সময়কালে নতুন করে কোন রফতানি ঋণ শ্রেণীবিন্যাস না করা, এই সময়ের মধ্যে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে তিন মাসের পরিবর্তে ছয় মাসের মধ্যে ঋণ শ্রেণীবিন্যাস করা, পোশাকসহ সব রফতানিকারককে ঋণ পুনর্তফসিলীকরণ করার সুযোগ দেয়া, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুনর্তফসিলীকৃত ঋণের কিস্তি স্থগিত রাখা, পাঁচ বছরের প্রকল্প ঋণ তিন বছর বাড়িয়ে আট বছরের কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ দেয়া, ৫০০ কোটি বা তার চেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ পুনর্তফসিলের যে সুযোগ জানুয়ারিতে দেয়া হয়েছে, তা সব রফতানিকারকের জন্য প্রযোজ্য করা অন্যতম। মতবিমিনয় সভায় উপস্থিত ছিলেন, বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মোঃ সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বিটিএমএ’র সভাপতি তপন চৌধুরী, বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি মোঃ আসলাম সানী প্রমুখ।
×