ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

টিএফআইতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে

পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে মান্নার কাছে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩ মার্চ ২০১৫

পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে মান্নার কাছে

শংকর কুমার দে ॥ টাস্কফোর্স ইন্টারগেশন সেলে (টিএফআই) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে। বেগম খালেদা জিয়া স্বেচ্ছায় গুলশান দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার সহিংস তৎপরতার নীলনক্সার ছকের উৎস, ব্লগার লেখক অভিজিৎ হত্যাকা-ে জঙ্গীদের উস্কানি দেয়ার নেপথ্যে বিএনপি-জামায়াতের ভূমিকা, সেনাবিদ্রোহের উস্কানিতে জড়িতদের মধ্যে বেসামরিক-সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে জড়িত কারা, তাকে সেই ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপর্ণ ও চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত টিএফআই সেলে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে থলের বিড়াল বের হয়ে আসতে পারে বলে মনে করছে তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিবি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা, সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগ’-মান্না-খোকা ফোনালাপের ষড়যন্ত্রের শিকর অনেক গভীরে। রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের অনেকের নাম আসছে। বর্তমানে দেশে যে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা- চালানো হচ্ছে, সে বিষয়ে অনেক তথ্যই পাওয়া গেছে। পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের মধ্যেই বিএনপির গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে স্বেচ্ছায় অবস্থানরত দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন মান্না ও গণফোরামের প্রধান ড. কামাল হোসেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ আছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্প ধারার সভাপতি ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর। এ ছাড়াও অনেক রাজনীতিক ও সুশীল সমাজের নিরপেক্ষ ব্যক্তির নাম বলেছেন, যারা পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের উৎস সম্পর্কে ওয়াকিবাহল। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলা যাচ্ছে না। ডিবি সূত্র জানান, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা’ ও ‘সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগ’ মান্না-খোকা ফোনালাপ কেলেঙ্কারীর রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সেনা বিদ্রোহে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে গুলশান থানায় দায়ের করা মামলায় ১০ দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছেন মাহমুদুর রহমান মান্না। রাজধানীর মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে চলমান রাজনীতির বিষয়ে নানা তথ্য জানতে পেরেছে ডিবি। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা ও সেনা হস্তক্ষেপের ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে ডিবির সঙ্গে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা, গুলশানের বিএনপি কার্যালয়ে তল্লাশির নির্দেশ ও ব্লগার লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকা-ের ঘটনার ডামাডোলের মধ্যে মান্না-খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারীর ঘটনা অনেকটাই ধামাচাপা পড়ে আছে। তবে মান্নার ফোনালাপ কেলেঙ্কারী ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর তার পূর্ব নির্ধারিত শান্তি ও সংলাপের গণমিছিল কর্মসূচীতে না যাওয়ার এবং আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারই ঘনিষ্টরা। তবে তার ফোনালাপ কেলেঙ্কারী ফাঁস হলেও একই কর্মসূচী গণফোরাম নেতা ড. কামাল হোসেনে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি যাননি কেন, সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে মান্নাকে। ডিবি সূত্র জানান, বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটের ডাকা অবরোধ-হরতালের নামে সহিংস সন্ত্রাসী কর্মকা- চলার মধ্যেই মান্না কাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন ও মতামত বিনিময় করতেন সেই বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেশকিছু নাম পেয়েছে ডিবি। এমনকি নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে যেদিন মান্না ফোনালাপ করেছেন সেই দিনও আরও অনেকের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন তিনি। সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্রে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাকে। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সেই ব্যক্তিটি কে, যার সঙ্গে তিনি কথা বলে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাত করার কথা বলেছিলেন। মান্না ও খোকার ফোনালাপ ষড়যন্ত্র শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তজার্তিক পর্যায়েও এ ষড়যন্ত্র বিস্তৃত বলে মনে করেন গোয়েন্দারা। অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতাকে আড়াল করার জন্যই কি সংলাপ ও শান্তির আড়ালে তারা বিএনপি-জামায়েতের ‘বি টিম’ হিসেবে মাঠে নেমেছে কিনা সেই বিষয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের ষড়যন্ত্রের সব শিকড় গিয়ে মিশেছে একই জায়গায়, যেটা হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় টেনে হেঁচড়ে নামানোর নীলনক্সার ছক কী ? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তরে চুপ করে যান মান্না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, চলমান রাজনীতির কর্মসূচীর নামে পেট্রোলবোমার সহিংস সন্ত্রাসের সঙ্গে জামায়াতÑশিবিরের নাশকতা, জঙ্গী তৎপরতা, মান্না ও খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারীর ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করা হচ্ছে। মান্না-খোকার সঙ্গে মান্নার ফোনালাপে যে সব বিষয়বস্তু ও ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে, সেই বিষয়ে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে আরও যেসব তথ্যাদি অনুদঘাটিত রয়ে গেছে তার বের করার জন্য মান্নাকে টাস্কফোর্স ইন্টারগেশন সেলে (টিএফআই) নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
×