ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ ;###;পার্বত্য এলাকায় যৌথ অভিযান শুরু হচ্ছে

বড় নাশকতার শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ মার্চ ২০১৫

বড় নাশকতার শঙ্কা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে বড় রকমের নাশকতার আশঙ্কা করছে সরকার। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ নিয়ে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনাও হয়েছে। নাশকতা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে পাবর্ত্য এলাকায় যৌথ অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এই নির্দেশ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য জনকণ্ঠকে বলেন, গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে, আন্দোলনের নামে দেশে বড় রকমের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। পাবর্ত্য চট্টগ্রামে ব্যাপক পরিমাণ অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। এরা রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট, শপিংমল, অফিস-আদালতে হামলার পরিকল্পনা নিয়েছে। এদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার পাশাপাশি সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন স্থাপনায় সতর্কতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাহাড়ী এলাকায় যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চালানোরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, আন্দোলনের নামে রবিবার হঠাৎ করে কারা হামলা চালিয়েছে তার অধিকাংশই পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। দ্রুত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এছাড়া অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা- নিয়েও আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। এতে বলা হয় হুমায়ুন আজাদের ঘটনার সঙ্গে এই ঘটনার অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ঘটনার স্থলও একেবারে কাছাকাছি। এটি পূর্ব পরিকল্পিত একটি ঘটনা। এছাড়া বিজিবির আদলে ব্যাটালিয়ন আনসার বাহিনীর আইনেও বিদ্রোহের শাস্তি যোগ করা হচ্ছে। ১৯৯৫ সালের ব্যাটালিয়ন আনসার আইন সংশোধনের খসড়া সোমবার মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হলে বিদ্রোহের শাস্তির বিষয়টি এতে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়। বৈঠকের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা দুটি অনুশাসন দিয়ে সংশোধিত আইনটি নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। একটি অনুশাসন হচ্ছে বিদ্রোহের জন্য শাস্তির বিধান যুক্ত করা, যা উত্থাপিত খসড়ায় ছিল না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিজিবি আইনে সংশ্লিষ্ট ধারায় বিদ্রোহের জন্য যে শাস্তির বিধান রয়েছে, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এখানে যুক্ত করতে হবে, যাতে এ আইন অসম্পূর্ণতা না থাকে। ২০০৯ সালে পিলখানায় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর রক্তাক্ত বিদ্রোহের পর আইন সংশোধন করে এর সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান যোগ করা হয়। আনসার বাহিনীতে ১৯৯৪ সালে একবার বিদ্রোহ হয়েছিল। সেনা সহায়তায় তখন ওই বিদ্রোহ দমন করা হয়, যাতে কয়েকজন হতাহত হয়েছিল। আনসার বাহিনীর সদস্য দুই ধরনের-ব্যাটালিয়ন আনসার ও অঙ্গীভূত আনসার। অঙ্গীভূত আনসার সদস্যরা ৯ বছর চাকরি করলে স্থায়ী হওয়ার একটি সুযোগ পান। ওই সময়সীমা ৬ বছর করার অনুশাসনও মন্ত্রিসভা দিয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে ব্যাটালিয়ন আনসারদের শৃঙ্খলাভঙ্গে বাধ্যতামূলক অবসরসহ আরও কয়েকটি শাস্তির বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন আনসারের কোন সদস্য অপরাধ করলে কী কী শাস্তি দেয়া যাবে, সেগুলোর ক্ষেত্রে কিছু তালিকা ছিল। সংশোধিত আইনে শাস্তি সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি নতুন কিছু যোগ করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে সর্বোচ্চ শাস্তি বরখাস্ত করা এবং দ্বিতীয়টা হলো অপসারণ। বাধ্যতামূলক অবসরের বিধান ছিল না এবং আরও কয়েকটি মধ্যম ধরনের শাস্তি ছিল না, যা এই সংশোধিত আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংশোধিত আইনে বাধ্যতামূলক অবসর, পদাবনতি, পদোন্নতি স্থগিত, বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, অবহেলার কারণে আর্থিক ক্ষতি হলে আনুতোষিক থেকে কেটে নেয়ার বিধান যুক্ত হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলাভঙ্গে যে যে শাস্তি দেয়া যায়, তার সব কিছু এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও মন্ত্রিসভা কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প এলাকার সামাজিক উন্নয়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনা নীতিমালা ২০১৫’র খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, কয়লাভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য গ্রাহকের কাছ থেকে ৩ পয়সা বাড়তি নেবে কোম্পানি। এ অর্থ দিয়েই প্রকল্প এলাকার জন্য সামাজিক উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হবে। তিনি বলেন, লক্ষ্যমাত্রানুযায়ী ২০২১ সালে ২৪ হাজার ও ২০৩০ সালে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করবে সরকার। এ বিদ্যুতের অর্ধেকই হবে কয়লা বিদ্যুত। যেসব এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে, সেসব এলাকায় এ তহবিলের অর্থ স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সড়ক, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে ব্যবহার করা হবে। এ তহবিল ব্যবহারের জন্য প্রতিটি এলাকায় কমিটি গঠন করা হবে। কমিটিতে কোম্পানি এবং জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। তারাই এ তহবিল পরিচালনা করবেন। মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, তহবিলে এ অর্থের যোগান দেবে কোম্পানি। এ জন্য গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি কিলোওয়াটের জন্য অতিরিক্ত তিন পয়সা ট্যারিফ নির্ধারণ করা হবে। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের উত্থাপিত ‘বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন আইন ২০১৫’র খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। তিনি বলেন, ১৯৭৬ সালের সামরিক শাসনের সময়কালের অধ্যাদেশটি বাংলায় অনুবাদের বাধ্যবাধকতা ছিল। মূল আইনে অনুমোদিত মূলধন ছিল এক কোটি টাকা। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে তা বাড়িয়ে পাঁচ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের অধ্যাদেশ অনুযায়ী এক জন চেয়ারম্যান এবং পাঁচ জন সার্বক্ষণিক ও দু’জন খ-কালীন পরিচালক ছিলেন। মন্ত্রিপরিষদ পাঁচ জনের স্থলে সাত জন সার্বক্ষণিক পরিচালকের পদ সৃষ্টির জন্য সুপারিশ করেছে। করপোরেশনে পেশাদার হিসাব কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য প্রস্তাব জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ। গণকর্মচারী (বিদেশী নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ) আইন, ১০১৫-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ১৯৭৬ সালের এই আইনটি হালনাগাদ করে তা বাংলায় করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে কূটনীতিকরা বিদেশী কোন নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন না। তবে সরকারী চকুরে অন্যরা রাষ্ট্রপতির অনুমতি নিয়ে বিদেশী নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন। সংশোধনীতে বলা হয়েছে, এই আইনে কূটনীতিকরাও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে বিদেশী নাগরিকের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবেন।
×