ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লাগামহীন বাড়ছে ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সুদহার

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৩ মার্চ ২০১৫

লাগামহীন বাড়ছে ব্র্যাক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সুদহার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ লাগামহীনভাবে বেড়েই যাচ্ছে বেসরকারী খাতের ব্র্যাক ব্যাংক ও বিদেশী স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদ হারের ব্যবধান (স্প্রেড)। জানুয়ারি শেষে ব্যাংক খাতে গড় স্প্রেডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর ব্র্যাক ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের এ ব্যবধান দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৯ দশমিক শূন্য ১৭ শতাংশ ও ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ। ব্যাংক দুটির স্প্রেডের এ হার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সব ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের স্প্রেড সংক্রান্ত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন দেখা যায়, ব্যাংকগুলো অব্যাহতভাবে আমানতের সুদহার কমালেও সে অনুপাতে ঋণে সুদহার কমায়নি। দেশে কার্যরত ৫৬টি ব্যাংকের মধ্যে ২৮টি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের ওপরে রয়েছে। এর ফলে বেড়ে গেছে গড় স্প্রেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জানুয়ারি শেষে ঋণের তুলনায় আমানতে অনেক বেশি সুদহার কমানো হয়েছে। এ সময়ে আমানতের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ, যা এর আগের মাস নবেম্বরে ছিল ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে ঋণের গড় সুদহার হয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ; যা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এতে ব্যাংকিং খাতে গড় স্প্রেড (ঋণ-আমানতের ব্যবধান) দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর মধ্যে বিশেষায়িত খাতের বেসিক ব্যাংকের স্প্রেড আবারও কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৮ শতাংশীয় পয়েন্ট। এছাড়া বেসরকারী ও বিদেশী মালিকানার আরও ২৭টি ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৫ শতাংশীয় পয়েন্টর উপরে রয়েছে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোর ঋণে গড় সুদ হার কমে ১২ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে, যা আগের মাসে ছিল ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ। আর আমানতের গড় সুদহার কমে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে বেশি। এ ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৯ দশমিক ১০ শতাংশীয় পয়েন্ট। এর পরে ডাচ্-বাংলার ব্যাংকে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ, ও ওয়ান ব্যাংকের ঋণ-আমানতের ব্যবধান ৬ দশমিক ৭২ শতাংশীয় পয়েন্ট। এছাড়া বেসরকারী খাতের এবি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংকে ৬ দশমিক ৪০, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫ দশমিক ৮৩, পূবালীর ৫ দশমিক ২৯, উত্তরা ব্যাংকের ৬ দশমিক ১০, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫ দশমিক ১২, এনসিসি ব্যাংকের ৫ দমশিক ১০, প্রাইম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫৪, ঢাকা ব্যাংকের ৫ দশমিক ০৫, স্যোসাল ইসলামী ব্যাংকে ৫ দশমিক ৯, এক্সিম ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩৯, প্রিমিয়ার ব্যাংকে ৬ দশমিক ৬, ব্যাংক এশিয়ায় ৫ দশমিক ৪৬, ট্রাস্ট ব্যাংকে ৫ দশমিক ৩৯, যমুনা ব্যাংকে ৫ দশমিক ২৭, মিডল্যান্ড ব্যাংকে ৫ দশমিক ০৪, ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫ দশমিক ১১ এবং মধুমতি ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের ব্যবধান ৫ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট। এদিকে, বরাবরের মতোই বিদেশী মালিকানার ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানতের ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। এসব ব্যাংকের গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৯০ শতাংশীয় পয়েন্টে। এ ব্যাংকগুলোর আমানতের সুদহার কমে ৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং ঋণের সুদহার ১১ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের স্প্রেড ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ, সিটি ব্যাংক এনএ’র ৭ দশমিক ৯৩, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৬ দশমিক ৯৮, ওরি ব্যাংকের ৭ দশমিক ৮২, এইচএসবিসি ব্যাংকের স্প্রেড ৬ দশমিক ৯০ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর রয়েছে। এদিকে, রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংকের ঋণে গড় সুদ হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশে। আমানতে সুদ হার আরও একটু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ হয়েছে। এতে তাদের স্প্রেডের ব্যবধান কিছুটান কমে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৯ শতাংশীয় পয়েন্ট। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গড়ে ৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ সুদে ঋণ দিয়েছে। আমানতে সুদ দিয়েছে মাত্র ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ। এতে তাদের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৭০ শতাংশীয় পয়েন্ট।
×