মানব মুক্তির সংগ্রামে তিনি ছিলেন অগ্রদূত। সহস্র বছরের নিপীড়িত, লাঞ্ছিত জনতার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন মুক্তির মহানব্রত নিয়ে। উচ্চারণ করেছিলেনÑ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ নিজ জন্মভূমির অবহেলিত, বঞ্চিত মানুষকে তিনি ধীরে ধীরে সংগঠিত করেছিলেন মুক্তির মন্ত্র শুনিয়ে। ঔপনিবেশিক শোষণের নিগড়ে বাধা একটি পশ্চাৎপদ জাতিকে তিনি বিদ্রোহের, বিপ্লবের দীক্ষা দিয়ে স্বাধীনতার দিকে ধাবিত করেছিলেন। জাতিকে তিনি সাহসের বরাভয়ে তুলে এনেছিলেন সংগ্রামী চেতনায়। তাই প্রশিক্ষিত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তাঁরই অঙ্গুলি হেলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রণাঙ্গনে। নয় মাসের যুদ্ধ শেষে প্রতিষ্ঠা করেছিল স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি বিশ্ব মানচিত্রে জ্বল জ্বল করে উঠেছিল সেই ১৯৭১ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ব পর্যায়ের নেতায় পরিণত হলেন। জন্মেছিলেন এই বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। আর হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন পুরো বাংলাকে।
বিজয় পতাকা ওড়াবেন বলে তিনি সেই ১৯৪৭-পরবর্তী সময় থেকেই ধীরে ধীরে আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে ওঠেন। পরাধীনতার শিকলে বাঁধা জাতিকে করে তোলেন সংগ্রামী। সেই সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঘোষণা করেছিলেন মুক্তির দিকনির্দেশনা। সেই ভাষণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ভাষণগুলোর অন্যতম আজও। বাঙালী জাতির অমূল্য সম্পদ শুধু নয় এই ভাষণ, তা বিশ্ববাসীরও সম্পদে পরিণত হয়েছে। বিশ্ববাসী চিনত বাংলাদেশ মুজিবের দেশ। সেই দেশেই তিনি নিহত হয়েছিলেন ঘাতকের হাতে। কিন্তু তাঁর কীর্তি অমর। তাই বঙ্গবন্ধু স্বাধীন সোনার দেশে ঘোষণা করেছিলেন ঢাকার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ ও চট্টগ্রামের মুজিব সড়ক ছাড়া তাঁর নাম আর কোন কিছুতেই ব্যবহার না করার জন্য। তাঁর শাসনামলে তা পালনও করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম বাঙালী জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সম্পদের অন্তর্গত। সেই সম্পদকে যথেচ্ছভাবে যখন ব্যবহার করা হয়, তখন শঙ্কা জাগে, সংশয় বাড়ে, এই মহামানবকে হেয় করার জন্য কতরকম পন্থাই না অনুসরণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের অংশবিশেষ বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। জাতির পিতাকে যত্রতত্র, যখন তখন এভাবে ব্যবহার করা যায় না, উচিতও নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জর্জ ওয়াশিংটন বা আব্রাহাম লিংকনের ভাষণকে এভাবে বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের কথা চিন্তাই করতে পারে না।
বঙ্গবন্ধুর নামে যে অজস্র সংগঠনের নাম দেখা যায়। তা সবই কি সঠিক উদ্দেশে বা লক্ষ্যে করা? অথচ কেউ কেউ তা অবলীলায় করে যাচ্ছেন। আর তাতে ইন্ধন দেন বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে পরিচিত কিছু রাজনীতিক। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁর নাম মুছে দেয়ার জন্য অনেক কল্পকাহিনী ছড়ানো হয়েছিল। ঘাতক ও শত্রুরা বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। আজ যখন বঙ্গবন্ধুর গড়া দল ক্ষমতায় এবং তখন বঙ্গবন্ধুর নামে এই যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে তৎপর নয়, তখন সংশয় ও শঙ্কা বাড়ে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী। অথচ বঙ্গবন্ধু এখন বিজ্ঞাপনে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছেন। কঠোর হস্তে এসব বন্ধ করা উচিত।