ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইংলিশদের পিষ্ট করে কোয়ার্টারে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২ মার্চ ২০১৫

ইংলিশদের পিষ্ট করে কোয়ার্টারে শ্রীলঙ্কা

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপে কুলীন ইংলিশদের স্রেফ উড়িয়ে দিল লঙ্কানরা। ওয়েলিংটনে হাই-স্কোরিং ম্যাচে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩০৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড। সুপার সাঙ্গাকারা ও প্রতিভাবান লাহিরু থিরিমান্নের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে সামনে ইয়ন মরগানদের সে চ্যালেঞ্জ শেষ অবদি আর চ্যালেঞ্জ থাকেনি। ৪৭.২ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ৯ উইকেটের বড় সাফল্যে নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে তৃতীয় জয়ে পুল ‘এ’ থেকে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ আটের টিকেট নিশ্চিত করে এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের দল। ৮৬ বলে অপরাজিত ১১৭ রানে ঝড়ো ইনিংস খেলে ম্যাচের নায়ক অভিজ্ঞ সাঙ্গাকারা। বিশ্বকাপে দল হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যতটা না, তার চেয়ে ঢের বেশি কথা হচ্ছে মাহেলা জয়াবর্ধনে ও কুমার সাঙ্গাকারাকে নিয়ে। দু-জন আধুনিক লঙ্কান ক্রিকেটের চলমান কিংবদন্তি, প্রাণের বন্ধুও। মিল আছে আরও একটি জায়গায়, দেড় দশকের ক্যারিয়ারে একাধিকবার ফাইনালে উঠেও শিরোপা ছোঁয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাদের। বিশ্বকাপ শেষে ওয়ানডে বিদায়ের অগ্রীম ঘোষণাটা দিয়ে রেখেছেন দু-জনে। উদ্বোধনী ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে বড় হারে শুরুতেই ধাক্কাÑ সেদিন সাঙ্গা ৩৯ ও মাহেলা ফিরেছিলেন ০ রানে। আফগানিস্তানকে হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সেঞ্চুরি হাঁকান মাহেলা জয়বর্ধনের। আর বাংলাদেশকে গুড়িয়ে দেয়ার পর কাল ইংলল্যান্ডকে পিষ্ট করার পথে টানা দুই সেঞ্চুরি তুলে নিলেন বন্ধু সাঙ্গাকারা! সঙ্গে লঙ্কানদের হয়ে কম বয়সে বিশ্বকাপ সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন লাহিরু থিরিমান্নেও। ফল ইংল্যান্ডের চ্যালেঞ্জ টপকে ৯ উইকেটের বিশাল জয় শ্রীলঙ্কার। ওয়েলিংটনে ইংল্যান্ডের বড় স্কোরের রূপকার জো রুট। টস জিতে ব্যাটিং নেয়া ইংলিশরা ৭১ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। সেখান থেকে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি উপহার দেন তরুণ রুট। চতুর্থ উইকেটে ইয়ন মরগানকে নিয়ে ৬০ ও পঞ্চম উইকেটে জেমস টেইলরের সঙ্গে ৯৮ রান যোগ করেন তিনি। অধিনায়ক মরগান ২৭ ও টেইলর ২৫ রান করে আউট হন। তার আগে ওপেনার ইয়ান বেলের ব্যাট থেকে আসে গুরুত্বপূর্ণ ৪৯ রান। ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজ ঘরে ফেরার আগে ১০৮ বলে ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রানের চিত্তাকর্ষক ইনিংস উপহার দেন রুট। বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের হয়ে কম বয়সে (২৪ বছর ৬১ দিন) সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড এটি। এতদিন যেটি ছিল ডেভিড গাওয়ারের দখলে। ১৯৮৩ বিশ্বকাপে এই শ্রীলঙ্কারই বিপক্ষে সাবেক ইংলিশ হিরো ১৩০ রান করেছিলেন ২৬ বছর ৭১ দিন বয়সে। শেষ দিকে জস বাটলারের ১৯ বলে অপরাজিত ৩৯ ইংলিশদের বড় সগ্রহের পথে ভূমিকা রাখে। লঙ্কানদের হয়ে ১টি করে উইকেট নেন লাসিথ মালিঙ্গা, সুরাঙ্গা লাকমল, এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, তিলকারতেœ দিলশান, রঙ্গনা হেরাথ ও থিসারা পেরেরা। বড় রানের বিপরীতে শ্রীলঙ্কার জবাবটা কেমন হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। এক কথায় দুর্দান্ত। সেই নিউজিল্যান্ড সফর, প্রস্তুতি ম্যাচ হয়ে মূল মঞ্চে নিজেদের চতুর্থ লড়াইÑ এতটা ভাল ব্যাটিং আর করতে পারেনি অর্জুনা রানাতুঙ্গার উত্তরসূরিরা। ১৯ ওভারে দলীয় ঠিক ১০০ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৪৪ রানে মঈন আলির বলে মরগানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিলকারতেœ দিলশান। লঙ্কান ইনিংস তো বটেই, ম্যাচের বাকি গল্পটা কেবলই কুমার সাঙ্গাকারা ও লাহিরু থিরিমান্নের। দ্বিতীয় উইকেটে ২৮.২ ওভারে দু-জন গড়েন ২১২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। দুর্দান্ত জয় সঙ্গে নিয়ে মাঠ ছাড়েন তারা। যে কোন উইকেট জুটিতে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটি। ১৪৩ বলে ১৩ চার ও ২ ছক্কায় ১৩৯ রানে অরপাজিত থিরিমান্নে। ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও বিশ্বকাপে এটি তার প্রথম সেঞ্চুরি। উপুল থারাঙ্গাকে (২৬ বছর ৩৬ দিন) টপকে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার হয়ে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরির নতুন নজির স্থাপন করেন মুরাতাওয়া প্রতিভা থিরিমান্নে (২৫ বছর ১৭৪ দিন)। বরাবরের মতো সাঙ্গাকারার সেঞ্চুরিটি ছিল মুগ্ধতা-জাগানিয়া। ইংলিশদের পাড়ার বোলারে পরিণত করে ৮৬ বলে ১১৭ রানে অপরাজিত থাকেন ৩৭ বছর বয়সী মাতালে হিরো। ক্যারিয়ারের ২৩ নম্বর ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি সাঙ্গাকারার দ্বিতীয় দ্রুততম ১শ’ বা তার বেশি রানের ইনিংস। ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে যথারীতি বিনয়ের অবতার তিনি। ‘বিশ্বকাপে শক্তিধর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন শ’ রান টপকে জয়ের বড় কৃতিত্ব ওপেনিং জুটির। থিরিমান্নে-দিলশান দারুণ শুরু এনে দিয়েছে। যার ওপর দাঁড়িয়ে আমার জন্য কাজটা সহজ হয়ে গেছে। থিরিমান্নের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। দারুণ প্রতিভাবান এক ব্যাটসম্যান। ১ থেকে ৯ পর্যন্ত যে কোন পজিশনে ভাল ব্যাটিং করার অবিশ্বাস্য ক্ষমতা রয়েছে ওর। সর্বোপরি দলের জয়ে অবদান রাখতে পেরে ভাল লাগছে।’ এই হলেন সাঙ্গাকারা।
×