ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৩তম সাক্ষী শিশির বিশ্বাসের জবানবন্দী

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ কসাই সিরাজ নিজে আমার জেঠা কাকাদের হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ মার্চ ২০১৫

যুদ্ধাপরাধী বিচার ॥ কসাই সিরাজ নিজে আমার জেঠা কাকাদের হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাই হিসেবে পরিচিত শেখ সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী শিশির কুমার বিশ্বাস জবানবন্দী দিয়েছেন। জবানবন্দীতে তিনি বলেছেন, আসামি সিরাজ মাস্টার নিজে এবং তার নেতৃত্বে ও নির্দেশে অন্যান্য রাজাকার আমার জেঠামশায় বরদা কান্ত, তিন কাকাÑউপেন্দ্র নাথ, রশিক লাল ও ব্রজমোহনসহ ৬শ’ হিন্দুকে গুলি করে হত্যা করে। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের মাহিদুর রহমান ও মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ষষ্ঠ সাক্ষী মোঃ ফসি আলম সাটুকে জেরা করেছে আসামিপক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ৫ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষীর জবানবন্দী দেয়ার কথা থাকলেও তা পরিবর্তন করে ৩ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এসব আদেশ প্রদান করেছে। বাগেরহাটের তিন রাজাকার কসাইÑসিরাজ, আব্দুল লতিফ তালুকদার, খান আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ২৩তম সাক্ষী শিশির কুমার বিশ্বাস জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ রবিবার এ আদেশ প্রদান করেছে। ট্রাইব্যুনালে অন্য দু’সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। সাক্ষীকে জবানবন্দীতে সহায়তা করেন প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম শিশির কুমার বিশ্বাস, আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৯ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম-ডাকরা, থানা-রামপাল, জেলা-বাগেরহাট। ১৯৭১ সালে আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৭ বছর। ঐ সময় আমি ডাকরা হাইস্কুলে ছাত্র হিসেবে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলাম। বর্তমানে আমি এ স্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক। মুক্তিযুদ্ধের সময় রজব আলী ফকির ও আসামি সিরাজুল হক ওরফে সিরাজ মাস্টার বাগেরহাট মহকুমা রাজাকার বাহিনীর যথাক্রমে কমান্ডার ও ডেপুটি কমান্ডার নিযুক্ত হয়। এ কে এম ইউসুফ (বর্তমানে মৃত) বৃহত্তর খুলনা এলাকায় রাজাকার বাহিনী গড়ে তোলার দায়িত্ব পালন করেন। রাজাকার বাহিনী বিভিন্নস্থানে লুটপাট শুরু করে। সাক্ষী আরও বলেন, আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শঙ্কিত হয়ে পড়ি। এবং নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে ভারতে আশ্রয় গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই। আমাদের ডাকরা এলাকায় একটি কালীমন্দির ছিল। ঐ কালীমন্দিরে পুরোহিত ছিলেন বিনোদ বিহারী চক্রবর্তী। তিনি ‘নোয়া ঠাকুর’ হিসেবে এলাকায় পরিচিত ছিল। আমরা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ২১ মে ১৯৭১ সালের আগে থেকেই ঐ মন্দিরের আশপাশে আশ্রয় গ্রহণ করতে থাকি; যাতে নোয়া ঠাকুরকে নিয়ে আমরা সবাই ভারতে যেতে পারি। ২১ মে সকালের দিকে ঐ মন্দিরের আশপাশে বাগেরহাট এলাকার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় ৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক সমবেত হয়। রাজাকার কমান্ডার রজব আলী ফকির এবং ডেপুটি কমান্ডার আসামি সিরাজ মাস্টার ডাকরা মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের খবর পেয়ে দুপুর আনুমানিক দুটোর দিকে দুটি নৌকায় ৪০/৫০ রাজাকার কুমারখালী নদী পার হয়ে ডাকরা এলাকায় আসে। একটি নৌকা মন্দিরের পশ্চিমপাশে ডাকরা বাজারে থামে। এই নৌকার লোকজনের নেতৃত্বে ছিলেন রজব আলী ফকির। অন্য নৌকাটি মন্দিরের পূর্বপাশে ডাকরা হাইস্কুলের কাছে থামে, যার নেতৃত্বে ছিলেন আসামি সিরাজ মাস্টার ওরফে কসাই সিরাজ।
×