ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড এফবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২ মার্চ ২০১৫

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড এফবিআই তদন্তকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায়ের খুনের সঙ্গে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার প্রকাশিত বহুল আলোচিত কথোপকথনের কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টির তদন্ত চলছে। নির্বাচিত ক্ষমতাসীন সরকারকে উৎখাত করতে এক প্রবাসীর সঙ্গে মাহমুদুর রহমান মান্নার ষড়যন্ত্রমূলক কথোপকথন হয়। প্রকাশিত সেই কথোপকথনে সরকার উৎখাতে সেনাবাহিনীকে উস্কে দেয়ার পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় অভিজিৎ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে কিনা তা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটার অজুহাত দেখিয়ে দেশকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রাখার কোন কৌশল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এদিকে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর পর ইচ্ছে অনুযায়ী অভিজিতের শবদেহ চিকিৎসা বিজ্ঞানের কাজে লাগানোর জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যদিকে মামলা তদন্তে সহায়তা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুাবকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত সিআইডির ক্রাইম সিনের সংগ্রহ করা অভিজিতের মাথার মগজের কিছু অংশ, হত্যাকারীদের কোপে অভিজিতের স্ত্রী রাফিদার বাম হাতের কেটে পড়া বৃদ্ধাঙ্গুল, চশমা, পার্স ও ছোপ ছোপ রক্তের দাগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। বাংলা একাডেমি থেকে ৬৫টি সিসি ক্যামেরা জব্দ করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামছুজ্জামান খান। আর মেলার বাইরে দিকে থাকা পাঁচটিসহ মোট ৭০টি সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজের পর্যালোচনা চলছে। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ব্লক রেড দেয়া হচ্ছে। হত্যার দায় স্বীকার করে স্ট্যাটাস দেয়া শফিউর রহমান ফারাবীকে গ্রেফতারে চলছে বিশেষ সাঁড়াশি অভিযান। রবিবার রাত পৌনে আটটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হত্যাকা-ে জড়িত বা হত্যাকা-ে জড়িত সন্দেহে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউকে গ্রেফতারের বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। হত্যার পর দ্রুত মানুষের ভিড়ে মিশে যাওয়ার সুযোগ নিতেই অভিজিৎ রায়কে বইমেলার শেষ দিকে হত্যা করা হতে পারে। কারণ স্বাভাবিক কারণেই বইমেলার শেষ দিকে মানুষের ভিড় থাকে। বইপ্রেমীসহ মেলায় যাতায়াতকারীরা সঙ্গত কারণেই খুবই ব্যস্ত থাকেন। আর মেলার শেষ দিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা ঢিলেমিভাব চলে আসে। তাঁরা তেমন সতর্কতা থাকার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। এমন নানা হিসাব-নিকাশ করেই হত্যার দিনক্ষণ ও জায়গা ঠিক করেছে হত্যাকারীরা। অভিজিৎ হত্যাকা-ের ধরনের সঙ্গে ব্লগার রাজীব, বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা আরিফ রায়হান দ্বীপ, গোপীবাগে সিক্সমার্ডার ও ফার্মগেটের রাজাবাজারে চ্যানেল আইয়ের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী খুনের মিল রয়েছে। মতাদর্শত দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই অভিজিৎ হত্যাকা-ের ঘটনাটি ঘটতে পারে। ধারণা করা হচ্ছে, উগ্র মৌলবাদী কোন গোষ্ঠী অভিজিতকে হত্যা করেছে। সেক্ষেত্রে সন্দেহের শীর্ষে রয়েছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের জঙ্গী সংগঠনটি। এছাড়া জামায়াত-শিবির ছাড়াও জঙ্গী সংগঠনের মধ্যে জেএমবি, হুজি, হিযবুত তাহরীরও রয়েছে সন্দেহের তালিকায়। এদিকে অভিজিতের হত্যাকা-ের ধরন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করে হত্যাকারীরা পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত বলে মতামত দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ। এক থেকে দুই মিনিটের দুইজন হত্যাকা- সংঘটিত করে একজন টিএসসি আর অপরজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে থাকা মানুষের ভিড়ে মিশে যায় বলে অভিজিতের স্ত্রীর বরাত দিয়ে অভিজিতের পিতা অজয় রায় জানান।=
×