ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থনীতিতে সুবাতাস

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২ মার্চ ২০১৫

অর্থনীতিতে সুবাতাস

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতি যে বিপর্যস্ত সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত ৬ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ-হরতালের নামে নাশকতা অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি-জামায়াতের হরতালের নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থনীতির এই সঙ্কটময় অবস্থানে থেকেও একটি সুসংবাদ সংশ্লিষ্টদের আশ্বস্ত করেছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। রেমিটেন্স প্রবাহের ধারা ভাল থাকায় বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৩০০ কোটি (২৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে। এ রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নতুন এ মাইলফলক স্পর্শ করল। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। জানা গেছে, রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা, বিদেশ থেকে কর্পোরেট ঋণ গ্রহণ এবং কাক্সিক্ষত হারে আমদানি ব্যয় না হওয়া রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ মে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। তারপর একের পর এক রেকর্ড অর্জন করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। একই বছরের ৭ আগস্ট ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের শুরু জুলাই মাস থেকে চলতি ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ পর্যন্ত দেশে ৯৬২ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। পাশাপাশি দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় খাদ্য আমদানিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। রাজনীতির চলমান নাশকতামূলক কর্মকা- বন্ধ করা গেলে দেশের অর্থনীতিকে আরও সচল রাখা যেত। রিজার্ভের এই ধারাবাহিক সাফল্যই বলে দেয় দেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই হাঁটছে। তবে একথা সত্য, এই ধারা বজায় থাকার ওপরই নির্ভর করবে এই সাফল্য। আসলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাধাগ্রস্ত না হতো তাহলে এতদিনে হয়ত বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতো। যে রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত দেশের অর্থনীতি রক্ষা করা, সেই রাজনীতি যদি আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক রূপ নেয় তাহলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যে কঠিন হয়ে দাঁড়ায় সেটা সহজেই বোধগম্য। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার পরও গত এক দশকে আমাদের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই আশা করে, ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা বিবেচনা করে দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখা উচিত। যাতে রিজার্ভ বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছে। দেশে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকলে অতিসত্বর বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত মধ্যম আয়ের দেশের সারিতে দ্রুত স্থান করে নেবে- এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশবাসীর প্রত্যাশা এটাই।
×