ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

হরতাল অবরোধের প্রভাব নেই সোনামসজিদ বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১ মার্চ ২০১৫

হরতাল অবরোধের প্রভাব নেই সোনামসজিদ বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ আবার মুখর হয়ে উঠছে সোনামসজিদ স্থলবন্দর। ফিরেছে কর্মচাঞ্চল্যের সাথে প্রাণ চাঞ্চল্য। জানুয়ারির দিকে কিছুটা অবরুদ্ধ হয়ে পড়লেও ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই কোন প্রভাব নেই অবরোধ আর হরতালের। এর কারণ, বিএনপি- জামায়াত সমর্থক বন্দর শ্রমিক সংগঠনও অধিক উৎসাহ নিয়ে কাজ করা। এই অবস্থা বন্দর উপচে সামনের দিকে ভারতীয় মহদিপুর বন্দর আর পেছনে দেশের অভ্যন্তরভাগে যাতায়াতে কোন সংশয় নেই। ফলে প্রতিদিন বাড়ছে রাজস্বের পরিমাণ। বন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে বিভিন্ন সংস্থা, সংগঠন, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট সমিতির সদস্যরা ও আমদানি-রফতানিকারকরা পূর্বের মতোই ব্যবসাবাণিজ্যে হামলে পড়েছে। তারা জানিয়েছে, রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ বাড়ছে প্রতিদিন। সোনামসজিদ কাস্টমসের এক কর্মকর্তা জানান, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহ হতে স্বাভাবিক হয়ে আসায় বন্দরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছলেও এসেছে ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১ কোটি ১৭ লাখ। ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ পর্যন্ত এসেছে ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা। গত বছরের ৮ মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ১৭৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এদিকে মুখ থুবড়ে পড়া বন্দরে যৌথবাহিনীর বড় ধরনের নজরদারির কারণেই সঙ্কট হতে পরিত্রাণ পাওয়া গেছে। পণ্যবাহী ট্রাকের বহরে অনেক সময় স্থান সঙ্কটের মধ্যে পড়ছে পানামা ইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ। একদিকে যৌথবাহিনীর অভিযান ও বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের সম্ভাব্য হামলার বিষয়টি মাথায় নিয়ে কানসাট সোনামসজিদ বন্দর সড়কে দুটি স্থানে বসানো হয়েছে অস্থায়ী ক্যাম্প। কানসাট সোলেমান আলী ডিগ্রী কলেজ ও শাহবাজপুর কলেজে অস্থায়ী ক্যাম্পের অবস্থানের কারণে ট্রাকবহরে নেই কোন হামলার ঘটনা। ইতোপূর্বে এই পথে সন্ত্রাসীদের ট্রাকবহরে হামলার ঘটনা নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সোনামসজিদ মহাসড়ক ও ভোলাহাট গোমস্তাপুর সড়কের অপ্রীতিকর ঘটনার বিষয়টি সামনে এনে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, কাস্টমস, আমদানিকারক, সিএ্যান্ডএফ, শ্রমিক প্রতিনিধি ও ভারতের রফতানিকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ যৌথ বৈঠকে বসেছিল। বন্দরকে সচল রাখার প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞার সাথে সাথে সচল হয়ে ওঠে বন্দরের কর্মকা-। সোনামসজিদ স্থলবন্দরে আমদানিকৃত পণ্যভর্তি ট্রাক দেশের বিভিন্নস্থানে যাবার মুখে শিবগঞ্জের মুসলিমপুর, ধোবড়া, কানসাট, রসুলপুর, লালাপাড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর বীরশ্রেষ্ঠ সেতু, শিবতলা, পিটিআই, আরামবাগ, উপর রাজারামপুর, হরিপুর, দ্বারিয়াপুর পেরিয়ে রাজশাহীর বালিয়াঘাট্টা, কাশিমপুর, হাতনাবাদ বাসুদেবপুর অতিক্রম করতে হয়। এই পথে যৌথবাহিনীর নজরদারি ও অভিযানে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় বন্দর থেকে প্রতিদিন পণ্যভর্তি ট্রাকের বহর দুর্বৃত্তদের কোন হামলা বা বাধাবিপত্তি ছাড়াই দেশের বিভিন্নস্থানে যাচ্ছে। এসব বহরে থাকছে সাড়ে তিন শ’র অধিক ট্রাক। তবে পণ্যভর্তি ট্রাকবহরে যৌথবাহিনীর পাহারা থাকলেও প্রতিদিন একই পথ ধরে পাহারাবিহীন কয়েক হাজার খালি ট্রাক অবাধে বন্দরে প্রবেশ করছে পণ্য নিয়ে যাবার জন্য। বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার কারণে গত মাসের ১৯ জানুয়ারি থেকে ৩১ জানুয়ারির ১৩ দিনে ৩ হাজার ৯৪৭ ভারতীয় ট্রাক পণ্য নিয়ে প্রবেশ করে। এইসব মালের পুরোটাই ট্রাকবহরে দেশের অভ্যন্তরে চলে যায়। এখন প্রতিদিন ভারতীয় ট্রাকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সোনামসজিদগামী খালি ট্রাক ও সোনামসজিদ থেকে পণ্যভর্তি ট্রাকের চালকদের মধ্যে বর্তমানে কোন ধরনের ভয়ভীতি আর কাজ করছে না। পাশাপাশি স্বাভাবিকের চেয়ে ট্রাক ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও অবাধ যাতায়াত ও কোন ঝুঁকি না থাকায় কমে এসেছে ট্রাক ভাড়া। অনেকটা আগের মতো অনায়াসে কম ভাড়াতে ট্রাক পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি বন্দরে অধিক ট্রাকের চাহিদা মিটিয়ে থাকে জেলা শহরের দুটি সংগঠন।
×