ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা চেম্বার সেমিনারে বিদ্যুত উপদেষ্টা

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১ মার্চ ২০১৫

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বিদ্যুত বিতরণ ব্যবস্থা চালুর উদ্যোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের সঙ্গে আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুত সরবরাহ সহজতর করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। তিনি বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত-জ্বালানির নিশ্চয়তা পেতে উদ্যোক্তাদের নতুন এলাকার পরিবর্তে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে শিল্প-কারখানা স্থাপনের পরামর্শ দেন এ উপদেষ্টা। শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়েজিত ‘বিদ্যুত ব্যবস্থার উন্নয়ন ভোক্তা স্বার্থে নিরবচ্ছিন্ন সঞ্চালন’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদ, ডিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি হুমায়ুন রশিদ, সাবেক সভাপতি রাশেদ মাকসুদ এবং মতিউর রহমানসহ আরও অনেকে। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি হোসেন খালেদ। ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সংযত হওয়ার পরামর্শ রেখে বলেন, বর্তমানে দেশের ৭০ শতাংশের অধিক লোক বিদ্যুত সুবিধা ভোগ করছে। এ লক্ষ্যে বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়াতে এর সিস্টেমলস কমানোরও চেষ্টা হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুতে সিস্টেমলস ১০ শতাংশের কম। তবে যেহেতু বিদ্যুত উন্নয়নে গ্যাস দরকার। আমাদের সমুদ্রসীমায় গ্যাস পাওয়া গেলেও তা ব্যবহার উপযোগী করতে ১০ বছরেরও বেশি সময় লেগে যাবে। তাই বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়াতে সরকার নতুন নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে বিদ্যুত বিনিময় ব্যবস্থা চালুর জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এখন ভারত থেকে বিদ্যুত আনা হচ্ছে। মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুত আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বেসরকারী খাতের সঙ্গে একযোগে কাজ করতে আগ্রহী জানিয়ে ড. ইলাহী বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি এ খাতে আরও বেশি হারে বিনিয়োগেরও উদাত্ত আহ্বান জানান। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, সোলার এনার্জি ব্যবহারের মাধ্যমে রান্না পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য বিসিএসআইআর-এর বিজ্ঞানীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যুত খাতে গতিশীলতা আনায়নের জন্য সরকার সম্প্রতি ‘ন্যাশনাল এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ আইন পাস করেছে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ন্যাশনাল এনার্জি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং ঢাকা চেম্বার একযোগে কাজ করতে পারে। সেমিনারে পৃথকভাবে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির, বিপিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি বাংলাদেশের প্রধান প্রকৌশলী অরুণ কুমার সাহা। প্রবন্ধে বলা হয়, বর্তমানে শুধু ইপিজেডগুলোতেই চাহিদা অনুযায়ী ৩৩ কেভি ভোল্টেজের বিদ্যুত সরবরাহ রয়েছে। এছাড়া বেশিরভাগ শিল্প এলাকাতেই এ বিদ্যুত নেই। আবাসিক ও শিল্প এলাকা এক জায়গাতে হওয়ায় শিল্প কারখানার জন্য এ বিদ্যুত পৃথকভাবে দেয়াও খুব কঠিন কাজ। তাই পৃথকভাবে শিল্প এলাকা করতে হবে। এদিকে বর্ধিষ্ণু জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ৯ থেকে ১২ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্ধিত বিদ্যুত উৎপাদনে বড় চ্যালেঞ্জ হলো- প্রাথমিক জ্বালানির সহজপ্রাপ্তি, প্রজেক্টের অর্থায়ন, সময়মতো প্লান্ট চালু করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করা। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব মোঃ আবুল কালাম আজাদও ব্যবসায়ীদের বিদ্যুতসহ অন্যান্য সেবা প্রাপ্তির লক্ষ্যে ইতোমধ্যে স্থাপিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলসমূহে শিল্প-কারখানা স্থাপনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, আগামী ৩-৪ বছরের মধ্যে সারাদেশে আরও কিছু অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হবে। এ ধরনের অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য বেসরকারী খাতের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শিল্প-কারখানায় সোলার এনার্জির পাশাপাশি গ্রীন এনার্জি ব্যবস্থা চালু ও বিনিয়োগ বোর্ড প্রবর্তিত ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেবা গ্রহণের পরামর্শ দেন। সভাপতির বক্তব্যে ডিসিসিআই সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, দেশের অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখার লক্ষ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলের পাশাপাশি শিল্প-কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বিদ্যুত খাতে বিদ্যমান নীতিমালা সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা প্রণয়নের দাবি করেন। এ সময় তিনি বড় বড় বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন, সোলার সেচ ব্যবস্থা প্রবর্তন এবং এখাতে ব্যাংক রেটে অর্থায়নের সুযোগ প্রদানের আহ্বান জানান। সেমিনারে বক্তারা বলেন, দেশের বেশিরভাগ শিল্প এলাকাতেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত (৩৩ কেভি ভোল্টেজ) নেই। সাধারণ ফিডার থেকে শিল্প কারখানাগুলোতে বিদ্যুতের লাইন দেয়া হয়েছে। যেখান থেকে আবাসিক খাতেও বিদ্যুতের লাইন দেয়া হয়েছে। তাই শিল্প খাত ন্যায্য বিদ্যুত বঞ্চিত হচ্ছে। বক্তারা আরও বলেন, সরকার বলছে বিদ্যুত উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু শিল্প কারখানাগুলো এখনও প্রয়োজনীয় বিদ্যুত পাচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুতের অভাবে অনেক কারখানাতেই ২/১ শিফট কাজ বন্ধ রাখতে হচ্ছে। চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতও শিল্পে পাওয়া যাচ্ছে না। এ প্রেক্ষিতে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর পরামর্শ দেন বক্তারা।
×