ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যা-ের এই ভেন্যুতে এবারই প্রথম খেলবে বাংলাদেশ

নেলসনে মাশরাফিদের স্কটিশ পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১ মার্চ ২০১৫

নেলসনে মাশরাফিদের  স্কটিশ পরীক্ষা

মিথুন আশরাফ ॥ এক একটি করে ম্যাচ আসছে বাংলাদেশের সামনে, প্রতিপক্ষ পুরনো হলেও মাঠ নতুনই ধরা দিচ্ছে। এবার যেমন বাংলাদেশের সামনে সেই পুরনো প্রতিপক্ষ স্কটল্যান্ড, কিন্তু মাঠ সেই নতুন; নেলসনের সেক্সটন ওভাল। বৃহস্পতিবার ভোর ৪টায় ম্যাচটি শুরু হবে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এক এক করে তিনটি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। প্রথমটিতে ক্যানবেরার মানুকা ওভালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৫ রানে জিতেছে, দ্বিতীয়টিতে ব্রিসবেনের গাব্বায় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। তৃতীয় ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলেছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ হেরেছে ৯২ রানের বড় ব্যবধানে। বাংলাদেশের সামনে এবার ‘দুর্বল’ প্রতিপক্ষ। তবে এ ম্যাচটিতেই যেন বাংলাদেশকে কঠিন পরীক্ষায় নামতে হবে। সবাই জেতার আশা করছে। করাটাই স্বাভাবিক। এবার বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত স্কটল্যান্ড তিনটি ম্যাচ খেলেছে। একটিতেও জিততে পারেনি। এবার কেন? এর আগে দুইবার (১৯৯৯ সালে ৫ ম্যাচ, ২০০৭ সালে ৩ ম্যাচ) বিশ্বকাপ খেলে কোন জয়ই তুলে নিতে পারেনি স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত মোট ১১ ম্যাচ খেলে জয়ের খাতা শূন্য স্কটল্যান্ডের। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোতো আছেই, হল্যান্ড, আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছে তারা। বাংলাদেশ তো সেই তুলনায় অনেক ভাল দল। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বলতে গেলে ‘বড়’ দলও। এ দলটির বিপক্ষে এর আগে বাংলাদেশও যে চার ম্যাচ খেলেছে, একটি পরিত্যক্ত হয়েছে; তিনটিতেই জিতেছে। জয়গুলো খুব সহজভাবেই মিলেছে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথমবার খেলে। প্রথমবারেই ২২ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। এরপর ২০০৬ সালে দেশের মাটিতে পরপর দুই ম্যাচে ৬ উইকেট ও ১৪৬ রানের জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এসব হিসেবে স্কটল্যান্ড সহজ প্রতিপক্ষই। বাংলাদেশও ম্যাচটিতে জিতবে ধরেই নেয়া যায়। তবে দল যে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাজেভাবে হেরেছে, বাজে ফিল্ডিংয়ের খেসারত দিয়েছে; এমনটি হলে বিপদ যে আবারও ঘনিয়ে আসবে না, তা কেউই বলতে পারে না। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই এ আক্ষেপ করেছেন। বলেছেন, ‘আমরা প্রচুর ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করেছি। তারপরেও এমন বাজে ফিল্ডিং হয়েছে। কোন অযুহাতই এর পেছনে চলে না। আশা করছি যেন এ থেকে দ্রুতই বের হতে পারি। সেটিই আমাদের জন্য ভাল হবে।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি শেষে বাংলাদেশ শিবিরে ফিল্ডিং চিন্তা ভর করেছে। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যদি ফিল্ডিং এমন নড়বড়ে হয়, তাহলে স্কটিশরা বাংলাদেশের ঘাড়ে চেপে বসতে পারে। তাই ক্রিকেটাররাও সতর্ক। কিন্তু স্কটল্যান্ডও যেন হুঙ্কারই সুরে কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পরও বিশ্বকাপে একটি জয় খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেই জয়টি যে বাংলাদেশের বিপক্ষেই চায় তারা! স্কটল্যান্ড অধিনায়ক প্রেসটন মোমসেনই যেমন বলেছেন, ‘কন্ডিশন আমাদের পক্ষে যেতে পারে। একটি জয় পুরো দলের, দলের ক্রিকেটারদের, স্টাফদের রূপই বদলে দিতে পারে। যখন দেশে ফিরব, তখন অন্যরকম আনন্দ নিয়ে ফিরতে পারব। জয়টি স্কটল্যান্ডের ক্রিকেটের জন্যও অনেক কাজে দেবে। আমরা দেশের হয়ে খেলতে গর্ববোধ করি। প্রথম জয়টি মিললে সত্যিই অন্যরকম আবহ তৈরি হয়ে যাবে। সেই সুযোগটি আছে।’ এখন স্কটল্যান্ড সেই সুযোগটি বাংলাদেশের বিপক্ষেই খুঁজছে। স্কটল্যান্ডের জন্য একটা ইতিবাচক দিকও আছে। বিশ্বকাপে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াতেই খেলেছে। নিউজিল্যান্ডে খেলেনি। এবার স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে খেলবে। শনিবার রাতের মধ্যেই নেলসনে পৌঁছেও গেছে বাংলাদেশ দল। বাংলাদেশের সামনে চার দিন সুযোগ থাকবে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার। যে সুযোগটি বিশ্বকাপের শুরু থেকেই পেয়েছে স্কটল্যান্ড। এখন পর্যন্ত যে তিন ম্যাচ স্কটল্যান্ড খেলেছে, তাদের সব ম্যাচ হয়েছে নিউজিল্যান্ডেই। এখনও নিউজিল্যান্ডেই স্কটল্যান্ডের অবস্থান রয়েছে। অথচ বাংলাদেশ মাত্র চারদিন কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এর মধ্যে আবার কন্ডিশন জয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের স্মৃতি ভুলতে, উইকেটের সঙ্গে পরিচিত হতেই দুই একদিন চলে যাবে। এরপর যে সময়টুকু মিলবে, তাতেই নিজেদের গুছিয়ে নিতে হবে। হাতে থাকা সময় এখন বাংলাদেশের সামনে অনেক কঠিন পরিস্থিতিরই তৈরি করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিই স্কটল্যান্ডের জন্য খানিক সুবিধা করে দিয়েছে। কিছুটা স্বস্তি বাংলাদেশ দলেও থাকার কথা। এতদিন অস্ট্রেলিয়ায় থেকে এখন আবার নিউজিল্যান্ডে গিয়ে খেলতে হবে। যে খেলাটি সামনে আছে, সেই ম্যাচের প্রতিপক্ষ ততটা শক্তিশালী নয়। নেলসনের সেক্সটন ওভাল সম্পর্কে বিশদ না জানা থাকলেও স্কটল্যান্ড দুর্বল দলই। তবে সেই দুর্বল দল সম্পর্কে জানতেও বাংলাদেশকে অনেক পর্যবেক্ষণেই নামতে হবে। ২০০৬ সালে সর্বশেষ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ। ৮ বছর পর আবার খেলতে নামবে। বিশ্বকাপে যে তিনটি ম্যাচ খেলেছে স্কটল্যান্ড, প্রতিপক্ষকে জানতে সেই ম্যাচগুলোই এখন বাংলাদেশের ভরসা। তা থেকে ভালভাবে জেনে এখন স্কটল্যান্ডকে হারাতে পারলেই হয়। উল্টো হলেই বিপদ। ধুয়োধ্বনি শুনতে হবে। আর লজ্জাত মিলবেই।
×