ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবার আগে শেষ আটে নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১ মার্চ ২০১৫

সবার আগে শেষ আটে নিউজিল্যান্ড

মিথুন আশরাফ ॥ একদিনে দুই ম্যাচ হলো। অকল্যান্ডে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ও পার্থে ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত মুখোমুখি হলো। দুই ম্যাচে একেবারেই দুই রকম আবহ বিরাজ করল। অকল্যান্ডে হলো ‘টান টান’ উত্তেজনার ম্যাচ। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ। আরেকদিকে পার্থে হলো অনুমিতই ঢিলেঢালা ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়ে প্রথম দল হিসেবে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে গেল নিউজিল্যান্ড। আর ভারত ৯ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতে শেষ আটে ওঠার পথে এক পা দিয়ে রাখল। ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে যেমন উত্তেজনা কাজ করে, ঠিক তেমনি নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচেও সেই একই উত্তেজনা দেখা যায়। প্রতিবেশী দেশের মধ্যে স্নায়ু যুদ্ধও চরমে পৌঁছে। অকল্যান্ডে শনিবার সেই রকমটিই ঘটেছে। ট্রেন্ট বোল্টের (৫/২৭) গতির সামনে ল-ভ- হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস। ৩২.২ ওভারে মাত্র ১৫১ রানেই গুড়িয়ে যায় মাইকেল ক্লার্কের দল। ব্রেড হ্যাডিন সর্বোচ্চ ৪৩ রান করেন। এরপর যে একপেশে ম্যাচ হতে যাচ্ছে, সবারই ধারণা হয়ে যায়। কিন্তু সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। দুই দলের মধ্যে যে কি পরিমাণ স্নায়ু যুদ্ধ কাজ করে তা দলীয় ৭৮ রানে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম (৫০) আউটের পর থেকেই বোঝা যায়। একটা সময় গিয়ে মিচেল স্টার্ক (৬/২৮) এতটাই বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন, টপাটপ উইকেট তুলে নিতে থাকেন। ১৪৬ রানে গিয়ে নিউজিল্যান্ডের ৯ উইকেটের পতন ঘটে যায়! ২৩তম ওভারে গিয়ে স্টার্ক হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও তৈরি করেন। ২২.৩ ও ২২.৪ ওভারে পরপর দুই উইকেট (মিলনে ও সাউদিকে আউট করেন) শিকার করে ফেলেন। পরের বলে আরেকটি উইকেট নিতে পারলেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে যেত! কিন্তু স্টার্কের ইয়র্কার বলটি বোল্ট ঠেকিয়ে দেন। ওভারের শেষবলটি অফস্টাম্প দিয়ে বের হয়ে যায়। ম্যাচ তখন পে-ুলামের মতো ঘুরতে থাকে। কে ম্যাচে জিততে যাচ্ছে, কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি। তখনও ২৭ ওভার বাকি ছিল ম্যাচের। নিউজিল্যান্ডের জিততে বাকি ছিল মাত্র ৬ রান। কিন্তু হাতে ছিল ১টি উইকেট। যে কোন মুহূর্তে উইকেট হারাতে পারে নিউজিল্যান্ড। আবার জিতেও যেতে পারে। কিন্তু জেতাটা কঠিন হয়ে পড়ে। চাপে পড়ে যায় কিউইরা। অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা যেভাবে গতির ঝড় তুলেন, ৬৮ রানে (৭৮ থেকে ১৪৬ রান) নিউজিল্যান্ড সর্বশেষ ৮ উইকেট হারিয়ে বসে। অস্ট্রেলিয়ার মতোই অবস্থা দাঁড় হয়। অসিরাও ৭১ রানে (৮০ থেকে ১৫১ রান) সর্বশেষ ৯ উইকেট হারায়। চরম উত্তেজনার মুহূর্ত চলছে। বল করতে দৌড়াচ্ছেন কামিন্স। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সমর্থকরা গভীর মনোযোগী। বল ছুড়লেন কামিন্স। ব্যাটিংয়ে উইলিয়ামসন। কী হয়, কী হয়; এমন যখন সবার মনে ভাবনা, স্ট্রেইট ছক্কা হাঁকিয়ে দেন এ ব্যাটসম্যান! ৯ উইকেটে ২৩.১ ওভারে ১৫২ রান করে ম্যাচ জিতে যায় নিউজিল্যান্ড। উইলিয়ামসন অপরাজিত ৪৫ রান করেন। ক্রিকেটারদের মধ্যে সে কী আনন্দ! এ জয়টিই নিউজিল্যান্ডকে এবার বিশ্বকাপে সবার আগে কোয়ার্টার ফাইনালেও উঠিয়ে দেয়। আর অস্ট্রেলিয়া এখনও ৩ পয়েন্টেই পড়ে আছে। বিশ্বকাপে দুই স্বাগতিক দলের লড়াই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে ওঠে। উত্তেজনাকর একটি ম্যাচেরও দেখা মিলে। অস্ট্রেলিয়া বরাবরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কম রানে অলআউট হয়। অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসের সবচেয়ে কম রানে (১৯৮৬ সালে ৭০ রানে) অলআউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ডটি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই ঘটে। দুই দলের লো-স্কোরিং ম্যাচটি বিশ্বকাপের উত্তেজনাও যেন বাড়িয়ে দেয়। তবে উত্তেজনা পুরোপুরি তৈরি হওয়ার আগেই যেন ম্যাচটি শেষ হয়ে যায়। সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে দুপুর গড়ানোর আগেই যে ম্যাচটি শেষ হয়ে যায়। দুই দল মিলিয়ে খেলা হয় ৫৫.৩ ওভার! একদিকে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচটিতে কী উত্তেজনাইনা দেখা যায়। আরেকদিকে অনুমিতভাবেই ভারত-সংযুক্ত আরব আমিরাত ম্যাচটি হয় একপেশেই। রবীচন্দ্রন অশ্বিনের (৪/২৫) ঘূর্ণির সামনে পড়ে ৩১.৩ ওভারে ১০২ রান করতেই গুটিয়ে যায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইনিংস। এরপর ওপেনার রোহিত শর্মা (৫৭*) ও বিরাট কোহলি’র (৩৩) রানে ১৮.৫ ওভারে ১০৪ রান করেই জিতে যায় ভারত। সেই সঙ্গে গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট তালিকার (৩ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট) শীর্ষস্থানও বজায় রাখে মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। তবে এ ম্যাচটি নিয়ে যত না আলোচনা হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে ম্যাচে যে একের পর এক নাটকীয়তা তৈরি হয়েছে, তা নিয়েই আলোচনা তুঙ্গে থাকে।
×