ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির বৈঠক আজ

প্রাইভেট ভার্সিটি বন্ধে হিযবুত-শিবিরের হাঙ্গামা-হুজ্জতি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১ মার্চ ২০১৫

প্রাইভেট ভার্সিটি বন্ধে হিযবুত-শিবিরের হাঙ্গামা-হুজ্জতি

বিভাষ বাড়ৈ ॥ হিযবুত তাহ্রীর ও শিবিরের তৎপরতায় একের পর এক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে আজ উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। হরতাল-অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে এ বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি শিক্ষাবিরোধী যে কোন তৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। শনিবার এক জরুরী সভায় সমিতি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী বহিরাগতদের মদদে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। জানা গেছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উস্কে দিয়ে হরতালে ক্যাম্পাস বন্ধের দাবিতে ‘আন্দোলন’ শুরু করেছে হিযবুত তাহ্রীর ও শিবির। হরতালেও ক্যাম্পাস সচল থাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর ও শিবির কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীকে বিভ্রান্ত করে আন্দোলন করছে। জানা গেছে, আজ সকাল ১১টায় ইউজিসি অডিটরিয়ামে উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। বৈঠকে দেশের সকল পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলেছে, হরতাল-অবরোধে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা রাখার বিষয়েই আজ সভা অনুষ্ঠিত হবে। যেখানে সভাপতিত্ব করবেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী। কমিশন এক বিজ্ঞপ্তি বলেছে, মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৬ ফেব্রুয়ারি দেশের চলমান হরতাল-অবরোধের প্রেক্ষাপটে ‘নৈরাজ্য বন্ধে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারকে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়ে রুল জারি করেছেন। মহামান্য আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক দেশের পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ খোলা রাখা এবং সঠিক সময়ে পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউজিসির পূর্ণ কমিশন সভায় উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে সিদ্ধান্ত অনুুসারেই আজকের উদ্যোগ। এদিকে শুলশান ক্লাবে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমিতির সভাপতি শেখ কবীর হোসেনের সভাপতিতে সভায় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় চার লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যা দেশের উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়নরত ৬৪ ভাগ। এ সকল শিক্ষার্থীই দেশের ভবিষ্যতে উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী বহিরাগতদের মদদে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টির প্রয়াস চালাচ্ছে। সমিতির জরুরী সভায় সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, যদি কোন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ওই সকল শিক্ষার্থীর শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ ছাড়া কোন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হলে ভবিষ্যতে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই শিক্ষার্থীকে ভর্তি না করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সভায় আরও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আজ রবিবার থেকে সকল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় তাদের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম নিয়মিত চালিয়ে যাবেন। সমিতি সভায় চলমান সহিংস কার্যকলাপে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় এবং শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক কার্যক্রম যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য সরকার, রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করা হয়। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলতে উস্কানিদাতা হিসেবে কাজ করছে শিবিরের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। জড়িত রয়েছেন সভাপতি অলিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাসেত, সহ-সভাপতি তারেক আব্দুল্লাহ, রিয়াজুল হক রিয়াজ, দফতর সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক রাজিবুল ইসলাম, গবেষণা সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক পারভেজ আলী। এ ছাড়াও হিযবুত তাহ্রীরের নেতারাও শিবিরের সঙ্গে কাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হঠাৎ করেই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বন্ধ হচ্ছে রাজধানীর বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত রবিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থী ক্লাস বন্ধের দাবি তুললে সোমবার ওই দাবি প্রতিষ্ঠানটির গ-ি পেরিয়ে আশপাশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। হঠাৎ করেই এসব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে ছাত্রদের কথিত আন্দোলনের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন ছাত্র শিবিরের প্রত্যক্ষ ইন্ধন রয়েছে দাবি করেছেন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। গোয়েন্দা সংস্থার কাছেও বিষয়টি নজরে এসেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিবিরের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সক্রিয় তৎপরতার কারণেই শিক্ষার্থীরা অনেকটা বাধ্য হয়ে বিক্ষোভ-মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে। জানা গেছে, ক্যাম্পাস সচল থাকায় বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে টার্গেট করেছে শিবির। পাশাপাশি জামায়াত-প্রভাবিত কিছু প্রতিষ্ঠান বিএনপি জোটের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা এবং আন্দোলনে অংশগ্রহণ রয়েছে- এমনটি প্রমাণে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণেই মঙ্গলবার নর্থসাউথ, ইস্ট-ওয়েস্ট, ব্র্যাক, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও আমেরিকান ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ক্লাস গ্রহণ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বন্ধ হওয়ার তালিকা বুধবার থেকে আরও দীর্ঘ হতে পারে বলেও জানা গেছে। বন্ধ করা হচ্ছে জামায়াতের অর্থায়নে পরিচালিত ইসলামী ইউনিভার্সিটি, নর্দার্ন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগংসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করে তুলতে উস্কানিদাতা শিবিরেরর নেতাদের পরিচয়ও মিলেছে অনেকের। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, গত মঙ্গলবার যে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিক্ষোভ হয়েছে, ওই সময়েই ছাত্র শিবিরের বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা একযোগে সক্রিয় ছিল তাদের ফেসবুক পেজ ‘বাঁশের কেল্লা’সহ বিভিন্ন মাধ্যমেও। ওই সময় তারা বিক্ষোভের ছবিসহ খবর গণমাধ্যমেও পাঠায়। ফিরোজ মাহমুদ নামের একজনের মেইল থেকে গণমাধ্যমে ‘হরতালে ক্লাস বন্ধের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ’ ক্যাপশন লিখে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ২০ দলীয় জোটের টানা হরতাল-অবরোধের মাঝে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা না করে ক্লাস চালু রাখার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে রাজধানীর বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আরও বলা হয়, বনানীর আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই বিক্ষোভ করে।
×