ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অংশ নেয়ার প্রশ্নে দলে দুই মত

ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত তফসিলের পর

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১ মার্চ ২০১৫

ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত তফসিলের পর

শরীফুল ইসলাম ॥ তফসিল ঘোষণার পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। তবে বর্তমানে দলীয় হাইকমান্ড ডিসিসি নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার কী করতে চায় তা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সূত্রমতে, ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়া-না নেয়ার প্রশ্নে বিএনপিতে এখন দুই ধরনের মত রয়েছে। দলের কিছু প্রভাবশালী নেতার মতে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৫৭ দিন ধরে চলা টানা অবরোধ ও দফায় দফায় হরতাল কর্মসূচী পালনের পরও আন্দোলনে সফল হতে পারেনি বিএনপি। তার ওপরে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করায় দলের ভবিষ্যত গন্তব্য অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিলে আন্দোলন মাঠে মারা যাবে। বিএনপির অন্য প্রভাবশালী নেতাদের মতে, কোন স্থানীয় সরকার নির্বাচনই দলের নেতাকর্মীরা বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়নি। তাই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকেও ছেড়ে দেয়া যাবে না। প্রয়োজনে আন্দোলন কর্মসূচী কিছুদিন স্থগিত রেখে নির্বাচনে অংশ নিলে নেতাকর্মীরা সক্রিয় হওয়ার সুযোগ পাবে। সেই সঙ্গে সবাই মিলে চেষ্টা করলে অন্য ৭ সিটি কর্পোরেশনের মতো ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও বিজয় লাভ করা সম্ভব হবে। এতে করে একদিকে দেশের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে আর অন্যদিকে দলের ইমেজ বাড়ানোও সম্ভব হবে। আর কোন কারণে পরাজিত হলে সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে আন্দোলন জোরদার করা সম্ভব হবে। দলের এই অংশের নেতাদের মতে, বিএনপি কোন কারণে দলের নেতাদের ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়ন না দিলেও ক্লিন ইমেজ রয়েছে এমন সুশীল সমাজের প্রতিনিধি অথবা কোন ব্যবসায়ী নেতাকে মনোনয়ন দেয়া উচিত। এমন প্রার্থীদের পেছনে বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা কাজ করলে রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, কুমিল্লা, গাজীপুর ও চট্টগ্রামের মােত ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনেও সহজেই বিজয় লাভ করতে সক্ষম হবে। সূত্রমতে, তফসিল ঘোষণার পর ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস, সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন- এ তিনজনের যে কোন একজনকে প্রার্থী করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টুকে প্রার্থী করা হতে পারে। এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে দল থেকে প্রার্থী ঠিক করে দেয়া হবে। তবে ২০ দলীয় জোটে বিএনপির শরিক দল জামায়াতকেও কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদ ছেড়ে দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের মতে, এক সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বার বার ডিসিসি নির্বাচনের দাবি করলেও সরকার ও আওয়ামী লীগ তাতে কর্ণপাত করেনি। কিন্তু যে মুহূর্তে দলের অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়ে পড়েছেন এবং বাকি নেতারা টানা আন্দোলনের সফলতার জন্য কাজ করছেন তখন বিএনপিকে দূরে রেখেই ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চায় আওয়ামী লীগ। যে কারণে হঠাৎ করে নির্বাচনের কথা বলেই দুই সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থীও ঘোষণা করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। অধিকাংশ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীও ঠিক করে ফেলেছে আওয়ামী লীগ। তবে নির্বাচন যদি হয়-ই তাহলে বিএনপিও শেষ পর্যন্ত ঘরে বসে থাকতে পারবে না। যে কোন কৌশলে এ নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপি। আর যদি কোন কারণে দল অংশগ্রহণ না করে তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের মতো কৌশলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে পরাজিত করার জন্য সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন প্রার্থীদের গোপনে সমর্থন দেবে। আর কাউন্সিলর পদে দলীয় সাবেক কাউন্সিলর অথবা সংশ্লিষ্ট থানা কমিটির সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকদের মধ্য থেকে প্রার্থী করা হবে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে প্রাথমিক প্রস্তুতি চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে ১০ মার্চের পর এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে যেভাবে বেকায়দায় রয়েছে তাতে সরাসরি দলীয়ভাবে ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নিলে খুব একটা সুবিধা করতে পারবে না। তাই দলটি মেয়র পদে সরাসরি প্রার্থী না দিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে পাস করিয়ে দলে টানার চেষ্টা করবে। আর আওয়ামী লীগ চাইবে বিএনপিকে বেকায়দায় রেখেই দ্রুত নির্বাচন করে বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে। তবে বিএনপি দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশ নিলেও এবার বিজয়ের ফসল ঘরে তুলতে কষ্ট হবে। কারণ, ৭ মাস আগে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের পর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল বিভিন্নভাবে হাঁকডাক দিলেও রাজধানীতে এখন বিএনপির কার্যক্রম নেই বললেই চলে। একদিকে সাদেক হোসেন খোকাকে দূরে ঠেলে দেয়া এবং অপরদিকে নতুন কমিটির দুই নেতার রশি টানাটানি ও আন্দোলন শুরুর পর এ দুই নেতাই পালিয়ে থাকায় নেতাকর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার পাশাপাশি চরম হতাশায় ভুগছেন। বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না তার জন্য বসে না থেকে রাজধানীর প্রতিটি মহল্লায় সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী গণসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়ায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই একই দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী ভেতরে ভেতরে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি জোরদার করছেন। তবে টানা অবরোধ-হরতালের মতো আন্দোলন কর্মসূচী পালন করতে গিয়ে সফলতা দেখাতে না পেরে বিএনপি দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরাও এখন বেকায়দায় রয়েছেন।
×