ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তচিন্তার পক্ষে বইয়ে প্রতিবাদ, ৩৭০০ নতুন বই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ মার্চ ২০১৫

মুক্তচিন্তার পক্ষে বইয়ে প্রতিবাদ, ৩৭০০ নতুন বই

মোরসালিন মিজান ------------------ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি। বায়ান্নর ভাষা শহীদদের স্মরণে এ মাসের পুরেটা জুড়ে থাকে নানা আনুষ্ঠানিকতা। তবে সবচেয়ে বড় আয়োজনটির নাম অমর একুশে গ্রন্থমেলা। প্রতিবারের মতো এবারও মাসব্যাপী সাংস্কৃতিক উৎসবে মেতেছিল বাঙালী। আর তার পর ভাঙনের সুর। বেদনার মতো বাজলো। লেখক পাঠক প্রকাশকদের মিলনমেলা শেষ হলো আয়োজনের ২৮তম দিন শনিবার। রাজনৈতিক টানাপোড়েন, হরতাল অবরোধের মতো কর্মসূচীর মধ্যেও চলেছে প্রাণের উৎসব। তবে শেষদিকে মৌলবাদী হায়েনাদের নৃশংস আক্রমণের শিকার হয় মেলা। চিন্তার স্বাধীনতার ওপর আঘাত আসে। প্রতিভাবান লেখক খুন হওয়ার ঘটনায় বিষাদ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সেইসঙ্গে ছিল ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের কথা জানাতেই হয়ত জনসমুদ্রের রূপ নিয়েছিল বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। মেলার শেষ দিনগুলোতেও এসেছেন অসংখ্য বইপ্রেমী মানুষ। বিভিন্ন বয়সী পাঠকের উপস্থিতি যেন আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে- একুশ মানে মাথা নত না করা। মৌলবাদী জঙ্গী গোষ্ঠীকে রুখে দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষ হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫। ৩ হাজার ৭০০ নতুন বই ॥ মেলা উপলক্ষে এবারও বিপুল পরিমাণে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। সব বইয়ের পরিসংখ্যান সংগ্রহ করা মুশকিল। তবে শুধু বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের দেয়া তথ্য মতে, এবার মোট বই প্রকাশিত হয়েছে ৩৭০০টি। সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে আছে কবিতা। কবিতা এসেছে ৮৭৭টি। ৬২৯টি উপন্যাস। গল্প ৫৭৪টি। এছাড়া প্রবন্ধ ২০২, ছড়া ১৩৭, গবেষণা ১১৯, শিশুতোষ ৯৪, জীবনী ৯০, ভ্রমণ ৭৪, বিজ্ঞান ৭১, ইতিহাস ৫৪, মুক্তিযুদ্ধ ৫৩, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৩৩, রম্য/ধাঁধা ৩০, ধর্মীয় ৩০, নাটক ২৯, কম্পিউটার ১৮, অনুবাদ ১২, রচনাবলী ও অভিধান প্রকাশিত হয়েছে ৭টি করে। অন্যান্য বিষয়ে এসেছে ৩৩টি নতুন বই। বিক্রি ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ॥ বিক্রির তথ্যটি সঠিকভাবে জানার তেমন সুযোগ নেই। তবে বাংলা একাডেমির তথ্য মতে, এবার মোট বিক্রি হয়েছে ২১ কোটি ৯৫ লাখ টাকার বই। ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুধু বাংলা একাডেমি থেকেই বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকার বই। বিক্রি তালিকায় শীর্ষে এবারও হুমায়ূন আহমেদের বই। এবারও বিক্রির শীর্ষে ছিল উপন্যাস। তারও বেশি শিশু হয়েছে শিশু-কিশোরদের বই। লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে মুহম্মদ জাফর ইকবালের বই। এ প্রসঙ্গে সায়েন্সফিকশন লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, লিখে পাঠককে সন্তুষ্ট করতে পারা কঠিন কাজ। আমরা লেখকরা এর পরও চেষ্টা করেছি। মেলা শেষে নতুন সব বই সারা দেশে পাওয়া যাবে জানিয়ে তিনি বলেন, পাঠক সেসব বই সংগ্রহ করলে, সারা বছর বই পড়লে আমাদের শ্রম স্বার্থক হবে। নতুন লেখদের মধ্যে সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছেন শিশুতোষ বইয়ের লেখক মোশতাক আহমেদ। তাঁর বইও প্রচুর বিক্রি হয়েছে। উপন্যাস বিক্রি হয়েছে আনিসুল হক, ইমদাদুল হক মিলন, সুমন্ত আসলামসহ হাতেগোনা কয়েকজনের। এ প্রসঙ্গে ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমার সব চেষ্টা পাঠকের জন্য। এক সময় অনেক কিছু না ভেবে লিখেছি। লিখতে হয়েছে। এখন সচেতনভাবে বাংলা সাহিত্যের জন্য কিছু করতে চাই। সে চিন্তা থেকেই লিখছি। পাঠক লেখাগুলো পড়লে খুশি হবেন বলে জানান তিনি। মেলায় প্রয়াত ও খ্যাতিমান লেখকদের বিভিন্ন বিষয়ে লেখা গুরুত্বপূর্ণ বইও বিক্রি হয়েছে প্রচুর পরিমাণে। বড় বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম দেখেও অনেকে বই কিনেছেন। সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা ॥ গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে এদিন সন্ধ্যায় ছিল সমাপনী আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব রণজিৎ কুমার বিশ^াস। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। মেলা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মেলা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ। সভাপত্বি করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস প্রফেসর আনিসুজ্জামান। মহাপরিচালকের কথা ॥ একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, মেলার সাফল্য অভিভূত হওয়ার মতো। সবার সহযোগিতার কারণেই এই সাফল্য এসেছে। বইমেলাকে ভবিষ্যতে আরও আকর্ষণীয় করার জন্য সব মহলের পরামর্শ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি। একইভাবে বড় প্রকাশনা সংস্থার পাশাপাশি আগামীতে আরও কিছু মানসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থাকে প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ দেয়া হবে। ফিরে দেখা ॥ ১ ফেব্রুয়ারি মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানী লেখক হান্স হার্ডার, ফ্রান্সে ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, বেলজিয়ামের ফাদার দ্যতিয়েন ও ভারতের অধ্যাপক পবিত্র সরকার। একাডেমির রবীন্দ্র চত্বরে মেলা মঞ্চে প্রতি সন্ধ্যায় পরিবেশিত হয় নানা বিষয়ের সংযোজনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ছিল শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এবারের বইমেলায় ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানকে ৩৫৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রথমবারের মতো যুক্ত হয়েছিল প্যাভিলিয়ন। ছিল মোট ১১টি প্যাভিলিয়ন। লিটল ম্যাগ চত্বরে ৭২টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রকাশনা প্রদর্শন ও বিক্রির জায়গা দেয়া হয়। ছোট ছোট প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যেসব লেখক বই প্রকাশ করেছেন তাদেরও বই বিক্রির সুযোগ করে দেয়া হয় জাতীয় গ্রন্থ কেন্দ্রের স্টলে।
×