ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্ত চিন্তার রুদ্ধপথ

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১ মার্চ ২০১৫

মুক্ত চিন্তার রুদ্ধপথ

মুক্ত চিন্তার পথ যেন ক্রমশ রুদ্ধ হয়ে আসছে। ধর্মান্ধতা, সাম্প্রদায়িকতা, কুসংস্কার আর অশিক্ষার নিগড়ে সমাজকে বেঁধে ফেলার ‘ভাইরাস’ ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রমিত হচ্ছে সব স্তরেই। বদ্ধ চিন্তার গহ্বরে অবরুদ্ধ করে রাখার যে প্রক্রিয়া তাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হরণও থেমে নেই। জঙ্গী, সন্ত্রাসী এবং তাদের সহযোগীরা একের পর এক হত্যা করছে প্রাগ্রসর ও অগ্রসর চিন্তার লেখক-গবেষকদের। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ থেকে রাজীব হায়দার হয়ে অভিজিৎ রায়ের হত্যাকা- মুক্তবুদ্ধির চেতনার প্রতি সশস্ত্র হুমকির নিদর্শন। এইসব হত্যাকা-ে যেখানে জঙ্গীদের স্বাক্ষর স্পষ্ট, সেখানে ন্যায় বিচারের সংস্কৃতির অনুপস্থিতিতে ঘাতকরা নিত্য উৎসাহিত হয়ে তাদের নৃশংসতাকে অব্যাহত রেখেছে। হত্যার মধ্য দিয়ে মানুষের বিনাশ ঘটানো যায়, কিন্তু চিন্তার বিনাশ ঘটে না। ঘাতকরা বুঝতে পারে না মুক্তচিন্তাকে কেউ কখনও ভয় দেখিয়ে দাবিয়ে রাখতে পারে না। স্বাধীন চিন্তা চেতনার বিপরীতে যে জঙ্গীরা ধর্ম রক্ষার নামে অধর্ম আর অমানবিকতার প্রসার ঘটাচ্ছে হত্যা আর রক্তপাতের মাধ্যমে তা কোন সুস্থ, সভ্য, মুক্ত সমাজে সম্ভব নয়। লেখক ও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাঙালী অভিজিৎ রায় ও তাঁর স্ত্রী বন্যাকে কুপিয়ে জখম করার মধ্য দিয়ে ঘাতক নরাধমরা জানান দিয়ে গেল আবারও, তারা থেমে নেই। বাংলা একাডেমির বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন আজাদ টিএসসির কাছে আসতেই জঙ্গীদের আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন ২০০৪ সালে। দশ বছর পর একই স্থানে যখন সস্ত্রীক অভিজিৎকে কোপানো হয়, ঘটনাস্থলের ১৫/২০ হাত দূরেই ২০/২৫ জন টহল পুলিশ অবস্থান করলেও তারা কেউ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসেনি। জঙ্গীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। দেশজুড়ে যখন চলছে নাশকতা, পেট্রোলবোমা মেরে হত্যা করা হচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষ, পোড়ানো হচ্ছে যানবাহন, ধ্বংস করা হচ্ছে সম্পদ, সুরক্ষিত নিরাপত্তায় বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে, তখন নির্বিঘেœ এই হত্যাকা- প্রমাণ করে শুধু প্রশাসন-নির্ভরতা দিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল সম্ভব নয়। আহত অভিজিৎ রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় আহত স্ত্রী দাঁড়িয়ে মানুষের সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি, সবাই যেন একটা হত্যা দৃশ্য দেখছে আর মোবাইলে চিত্রধারণ করছে। মানুষের অনুভূতি যেভাবে ভোঁতা হয়ে গেছে তাকে ক্ষুরধার করার কাজটি রাজনীতিকদের হলেও সে দায়িত্ব পালন করা হয় না। যেভাবেই হোক এ ধারা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। মূল দায়িত্ব প্রশাসনের হলেও জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাস ও জঙ্গীমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে হবে। মুক্তচিন্তার বিকাশের পথে সকল বাধা দূর করতে হবে।
×