ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসের হাতে প্রাচীন এ্যাসিরীয় সভ্যতার দুর্লভ নিদর্শন ধ্বংস

বন্দী খ্রীস্টানরা ক্রীতদাসে পরিণত

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বন্দী খ্রীস্টানরা ক্রীতদাসে পরিণত

বিবরণগুলো দূর অতীতের প্রাচীন সব বিজয় অভিযানের মতোই : পুরো গ্রাম জনশূন্য করে ফেলা হয়েছে, শত শত লোককে বন্দী করা হয়েছে, অনেককে ক্রীতদাসে পরিণত করা হয়েছে, শিল্পকর্মের অপূরণীয় ধ্বংসসাধন এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর কর ধার্য করা হয়েছে, যা স্বর্ণে পরিশোধ করতে হবে। এসবই হয়ত তৈমুর লং কিংবা চেঙ্গিস খানের উন্নত ধ্বংসলীলাকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। তবে বাস্তবে স্থানীয় অধিবাসী, সক্রিয় কর্মীগোষ্ঠী এবং হামলাকারীদের নিজেদের বয়ানেই চলতি সপ্তাহে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) স্বঘোষিত খিলাফতের কর্মকা-ের এসব বিবরণ উঠে এসেছে। জঙ্গীগোষ্ঠী ইরাক ও সিরিয়ায় ঐতিহাসিকভাবে যেসব স্থান ধর্মীয় ও জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং প্রাচীন মেসোপটেমীয় সভ্যতার সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে-যেসব অঞ্চলে এক নির্দয় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। জঙ্গীদের সর্বশেষ প্রচ- হামলার শিকার হয়েছে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার এ্যাসিরীয় খ্রীস্টানরা যারা বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম। তাদের অনেকে যীশুখ্রিস্টের ভাষা আধুনিক আরামাইকে কথা বলে। এ্যাসিরীয় রাজনৈতিক কর্মী দাউদ সদ্য সিরীয় শহর কামিশলির আশপাশের এলাকা থেকে ঘুরে এসে বলেছেন, এ্যাসিরীয় নেতাদের গণনা অনুযায়ী ৩০টি শিশু ও কয়েক ডজন নারীসহ ২৮৭ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও আছে বেসামরিক লোকজন এবং খ্রীস্টান মিলিশিয়া যোদ্ধা। স্থানীয় এ্যাসিরীয় মিলিশিয়া বাহিনী সিরিয়াক সামরিক পরিষদ বন্দীদের সংখ্যা ৩৫০ বলে উল্লেখ করেছেন। এ্যাসিরীয় সম্প্রদায়ের সদস্যরা তাদের রক্ষায় আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশনের জঙ্গী বিমানগুলো ওই অঞ্চলের লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হেনেছে। সেখানকার একটি প্রধান সংযোগ সড়ক দখলের লড়াইয়ের মধ্যে এ্যাসিরীয় সম্প্রদায়ের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে, এটি আইএস জঙ্গীদের ইসলামী শাসনের স্বপ্নরাজ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন যে কাউকে এবং যে কোনকিছুকে নির্মূল বা অধীন করার তাদের সর্বশেষ চেষ্টার অংশ বলে মনে হয়। তাদরে হামলার শিকার হতে পারে এ্যাসিরীয়দের মতো যে কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যারা শত শত বছর ধরে বিজেতাদের হাত থেকে এবং গণহত্যা থেকে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে কিংবা তাদের হাতে ধ্বংস হতে পারে প্রাক-ইসলামী যুগের ঐতিহাসিক প্রতœসামগ্রী, বৃহস্পতিবার বিশ্ব যা প্রত্যক্ষ করেছে। আইএসের ভিডিওতে দেখা যায় জঙ্গীরা উত্তর ইরাকের মসুল জাদুঘরের ভেতরে ভারী হাতুড়ি দিয়ে মূর্তিগুলো ধ্বংস করছে। ওই জাদুঘরে প্রাচীন এ্যাসিরীয় সভ্যতার সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন রাখা ছিল। প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে ছিল রাজা সেনাকেরিবের প্রাসাদের সামগ্রী যার ধ্বংসলীলা রায়রনের একটি কবিতাতেও মূর্ত হয়েছে ‘দ্য এ্যাসিরিয়ান্স কেম ডাউন লাইক দ্য ওল্ব্ফ ইন দ্য ফোল্ড।’ সিরীয় প্রতœতাত্ত্বিক এবং ইতিহাসবিদ আমর আল আজম তার ফেসবুক পেজে আইএস জঙ্গীদের এই তা-বের বিষয়ে বলেন, এগুলো এ্যাসিরীয় শিল্পকলার সবচেয়ে বিস্ময়কর নিদর্শনগুলোর অন্যতম এবং ইরাক ও মেসোপটেনিয়ার বিশাল ইতিহাসের অংশ। এ ক্ষতি সমগ্র বিশ্বের। আইএস জঙ্গীরা জাদুঘরটি দখল করে যা এখনও জনসাধারণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। গত জুনে এটি দখলের পর তারা বার বার জাদুঘরের সংগ্রহরাজি ধ্বংসের হুমকি দিয়ে আসছিল। ভিডিওটি একটি প্রাচীন এ্যাসিরীয় নগরীর নামে নিনেভ প্রদেশের আইএসের মিডিয়া দফতর থেকে প্রচার করা হয়। সেখানে এক ব্যক্তিকে ব্যাখ্যা করতে শোনা যায়, আপনারা আমার পেছনে যেসব স্মারকদ্রব্য দেখতে পাচ্ছেন সেগুলো পূর্ববর্তী শতাব্দীগুলোর লোকদের মূর্তি ও বিগ্রহÑ সেগুলো আল্লাহর পরিবর্তে তারা পূজা করে। পর্দায় তখন একটি বার্তা ভেসে ওঠে, ‘এসব মূর্তি ও বিগ্রহ মহানবী (দ.) ও তাঁর সাহাবীদের সময় ছিল না। শয়তানপন্থীরা এগুলো মাটি খুঁড়ে বের করেছে।
×