ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

ঋতুরাজ বসন্তকে নিবেদিত ছায়ানটের নৃত্য-গীত

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ঋতুরাজ বসন্তকে নিবেদিত ছায়ানটের নৃত্য-গীত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রকৃতির পালাবদলের পথপরিক্রমায় এখন বিরাজমান ঋতুরাজ বসন্ত। নব পত্রপল্লবে সেজে ওঠা বৃক্ষরাজি আর দখিনা হাওয়ায় উতলা হয় নাগরিক মন। আর এমনই মনমাতানো অনুভূতি সঞ্চারী এই ঋতুকে নৃত্য-গীতে আবাহন করল ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। শুক্রবার বসন্ত সন্ধ্যায় গানের সুর আর আবেদনময় নাচের উপস্থাপনায় সাজানো হয় আয়োজন। বসন্তের নৃত্যগীতানুষ্ঠান শীর্ষক অনুষ্ঠানটি দারুণ উপভোগ্য হয়ে ধরা দেয় দর্শক-শ্রোতাদের কাছে। সেই সূত্রে শ্রোতা-দর্শকে পরিপূর্ণ ছিল ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন। লোকসুর এবং পঞ্চকবির রচিত গানের আশ্রয়ে জানানো হয় বসন্ত বন্দনা। বসন্ত বরণের অনুষ্ঠানটির সূচনা রাগ-বসন্ত পরিবেশনের মাধ্যমে। কণ্ঠের মাধুর্যময়তায় খেয়ালটি পরিবেশন করেন অসিত দে। এরপর লতিফুন জুলিওর কণ্ঠে ধ্বনিত হয় ঋতুরাজকে নিবেদিত নজরুলের গান। গেয়ে শোনান এলো ঐ বনান্তে পাগল বসন্ত। সেই সুরের রেশ শেষ হতেই সমবেত কণ্ঠে উচ্চারিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান। সঙ্গে ছিল নৃত্য পরিবেশনা। ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে গানের সুরে নাচ করে ছায়ানটের শিল্পীরা। নাচ শেষে কাঞ্চন মোস্তফা পরিবেশন করেন আমার মল্লিকা বনে। কল্পনা আনামের কণ্ঠে গীত হয় বসন্ত মুখর আজি। নীল দিগন্তে ওই ফুলের আগুন গানের সুরে পরিবেশিত হয় সমবেত নৃত্য। ফারহানা আক্তার শালি গেয়ে শোনান দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান আয়রে বসন্ত ও তোর কিরণমাখা পাখা মেলে। ফুল-ফাগুনের এলো মরশুম শীর্ষক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। এছাড়াও একক কণ্ঠে গান শোনান ইলো আহমেদ শুক্লা, সুমন মুজমদার, নাদিরা বেগম ও এরফান হোসেন। সম্মেলক কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। ‘রবির আলোয় বাংলা ভাষা’ ॥ ভিন্নধর্মী এক আড্ডার নাম খামখেয়ালি সভা। নামে খামখেয়ালি হলেও বিষয়ের গভীরতায় উজ্জ্বল। বাঙালী মননের পথিক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কয়েকজন অনুরাগীর প্রচেষ্টার ফসল এই সভা। রবি ঠাকুরের সৃষ্টির আলোয় স্নাত এই আড্ডা। শুক্রবার ছুটির দিনের বিকেলে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পাঠচক্র কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো এই সাহিত্যনির্ভর এই মাসিক আড্ডা। এদিন রবীন্দ্রনাথের ভাষাচিন্তা নিয়ে ‘রবির আলোয় বাংলা ভাষা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তুহিন তালুকদার। আলোচনায় অংশ নেন ড. মোহাম্মদ আজম। বৈঠকী এ আড্ডায় সাহিত্যপিপাসু শ্রোতাদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ ছিল সঙ্গীত পরিবেশনা। সুরের মায়াজাল ছড়িয়ে এক কণ্ঠে গান শোনান কলকাতার শিল্পী পৌলমী গাঙ্গুলী এবং দেশের দুই অনিরুদ্ধ সেনগুপ্ত ও জাকির হোসেন তপন। আলোচ্য প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের ভাষাচিন্তা প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক তুহিন তালুকদার বলেন, রবি ঠাকুরের ভাষাচিন্তায় আমরা দুটি মাত্রা দেখতে পাই। সাধুরূপের বিপরীতে চলিতরূপকে লেখায় গ্রহণের প্রস্তাব এবং কথ্য বাংলার অন্তর্গত বিভিন্ন সূক্ষ্ম নিয়মাবলীকে ভাষাত্ত্বিকের দৃষ্টিকোণ থেকে লিপিবদ্ধ করা। এক্ষেত্রে তিনি প্রসিদ্ধ ভাষাবিজ্ঞানীর চেয়েও কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে ‘কতো নদী সরোবর’ গ্রন্থে হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, ‘তিনি শুধু বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি নন, বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ বর্ণনামূলক ভাষাবিজ্ঞানীও।’ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের সাধুর বিপরীতে চলিতভাষার ব্যবহার প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক বলেন, ভারিক্কি চজালের কারণে সাধা ভাষাকে হৃদয়সংলগ্ন বলে মনে হয়নি কবিগুরুর। ছিন্নপত্র-এর চিঠিগুলোতে তিনি চলিতভাষা ব্যবহার করেছিলেন। যদিও সে সময় গদ্যসাহিত্যে তিনি সাধুভাষাই ব্যবহার করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করেন, সাধুভাষা সংস্কৃতবহুল; তাতে ব্যাকরণের শুদ্ধতা থাকলেও ঝর্ণাধারার মতো সচলতা নেই। এ কারণে ক্রমেই তিনি চলিতভাষার সাবলীলতা ও গতিশীলতায় আকৃষ্ট হন। চলিতভাষাকে তিনি বলতে প্রাকৃত বাংলা। ছন্দের প্রয়োজনে তিনি প্রথম প্রাকৃত বাংলা ব্যবহার করেন। তারপর তার সহজ ও তরল গতিধারায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে পড়েন। সেই সময় সাধুরীতিকে পাশ কাটিয়ে চলিতভাষা প্রচলনের রবীন্দ্রনাথকে অনেক বিরূপ মন্তব্যও সইতে হয়েছে। বাংলার নিয়ম-কানুন বিষয়ে রবীন্দ্র-ভাবনার উল্লেখ করে প্রাবন্ধিক বলেন, ভাষাচিন্তায় রবীন্দ্রনাথের সবচেয়ে কৃতিত্বের জায়গা সম্ভবত বাংলা ভাষার বিভিন্ন নিয়মাবলী ব্যাকরণবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে খুঁজে বের করা। তিনিই প্রথম প্রাকৃত বাংলার ধ্বনি বিশ্লেষণ করে উচ্চারণের সূত্রগুলো আবিষ্কার করেছেন। এছাড়া ক্রিয়া, সর্বনাম, অব্যয়, নির্দেশক, বহুবচনের ব্যবহার এবং শব্দ, ছন্দ ও বাক্যের গুণাবলী আলোচনা করেছেন। মাতৃভাষা দিবসের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ॥ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দুপুরে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বিকেলে বাংলা বর্ণ লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। প্রতিযোগিতা শেষে একাডেমির শহীদ মতিউর মুক্তমঞ্চে বিজয়ী শিশু শিল্পীদের পুরস্কার প্রদান করা হয়। সব শেষে ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। বিশেষ অতিথি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিক-উল-ইসলাম। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির চেয়ারম্যান বরেণ্য কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
×