ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড মাথাই ছিল ঘাতকদের টার্গেট

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ড মাথাই ছিল  ঘাতকদের  টার্গেট

বিডিনিউজ ॥ অভিজিৎ রায়ের মাথার ডান পাশে ‘অত্যন্ত দক্ষ হাতে হিংস্রভাবে’ ধারালো অস্ত্রের তিনটি কোপ দিয়েছিল খুনী, যার ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসার বিরুদ্ধে সোচ্চার এই লেখকের মৃত্যু হয় বলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন। হামলার এই ধরন এর আগে কয়েকটি জঙ্গী হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়, যেখানে গলা থেকে দেহের উর্ধভাগ অর্থাৎ মাথাই ছিল আক্রমণকারীদের লক্ষ্যবস্তু। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ, অধ্যাপক মুহম্মদ ইউনূস এবং ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের ওপরও একই কায়দায় হামলা হয়েছিল, যেসব ঘটনায় জঙ্গীদের জড়িত থাকার বিষয়টি পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে একুশে বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের উল্টোদিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসংলগ্ন সড়কে হামলার শিকার হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। তারা দু’জনেই মৌলবাদবিরোধী লেখালেখিতে সক্রিয় ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী প্রকৌশলী অভিজিত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে নিয়মিত লিখতেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় অভিজিতের। গুরুতর আহত হয়েছেন রাফিদা আহমেদ বন্যাও। শুক্রবার অভিজিতের লাশের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিক্যালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অভিজিত রায়ের মাথার পেছন দিকে ডান পাশে তিনটি গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল, যেগুলো করা হয়েছে চাপাতির মতো কোন ধারালো অস্ত্র দিয়ে। ‘একটি আঘাত থেকে আরেকটি আঘাতের দূরত্ব আধা ইঞ্চি; সবগুলোই সমান্তরাল। ওই আঘাত এতই মারাত্মক ছিল যে, চামড়া ও হাড় কেটে একেবারে মগজে পৌঁছেছে। এছাড়া পিঠে ও বাঁ চোখের ভ্রুর কাছে জখমের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’ মূলত মাথার পেছনে তিনটি আঘাতের প্রচণ্ডতা ও অতিরিক্ত রক্তক্ষণেই অভিজিতের মৃত্যু হয়েছে বলে এই চিকিৎসকের ধারণা। তিনি বলেন, ‘এটি খুব দক্ষ হাতের কাজ। কোথায় মারলে মানুষ মারা যায়, সেটা হামলাকারীরা জানে। তারা অত্যন্ত দক্ষ ও হিংস্ত্র ছিল। তিনটি আঘাত করেছে আধা ইঞ্চি ব্যবধানে, একটি আরেকটির ওপর পড়েনি।’ ‘পরিকল্পনা, দক্ষতা আর হিংস্রতা’ ছাড়া এভাবে মানুষ হত্যা সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন সোহেল মাহমুদ। ময়নাতদন্তের আগে লাশের সুরতহাল করেন শাহবাগ থানার এসআই সুব্রত গোলদার। তিনি জানান, অভিজিতের মাথার পেছনের আঘাতগুলোর মধ্যে একটি তিন ইঞ্চি ও অন্যটি ছয় ইঞ্চি দৈর্ঘ্যরে। দুটোই প্রায় দুই ইঞ্চি গভীর। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার সকালে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেছেন তার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অজয় রায়, যাতে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের আসামি করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লেখালেখির জন্য অভিজিতকে আগে থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল জঙ্গীবাদীরা। অজয় রায়ও সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার ছেলেকে হত্যার জন্য উগ্র জঙ্গীবাদীরাই দায়ী। এদের মদদ দিয়েছে জামায়াত।’ হত্যাকাণ্ডের পর ১৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে অনলাইনে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে উগ্রবাদীদের পক্ষে বিভিন্ন সময় কার্যক্রম পরিচালনাকারী ফারাবী সাইফুর রহমানের নাম আলোচনায় এসেছে এ হত্যাকাণ্ডের পর। ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামের একটি টুইটার এ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করা হয়েছে। প্রথম টুইটটি করা হয় হামলার পর রাত ১২টার দিকে, যাতে বলা হয়, ‘আল্লাহু আকবর.. বাংলাদেশে আজ একটি বিশাল সাফল্য এসেছে। টার্গেট ইজ ডাউন...’ ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি বইমেলা থেকে বের হওয়ার পথে একই ভাবে চাপাতি দিয়ে লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলা হয়েছিল। ওই হামলায় জঙ্গীরা জড়িত ছিল বলে পরে তদন্তে বেরিয়ে আসে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকেও রাজধানীর মিরপুরে তার বাড়ির সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। ওই হত্যাকাণ্ডেও জঙ্গীবাদীদের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে।
×