ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ল্যান্ডফোনেও আড়িপাতা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এবার ল্যান্ডফোনেও আড়িপাতা হবে

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল ফোনের পর এবার ল্যান্ডফোনেও আড়িপাতা হবে। সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এতে বিটিসিএলসহ চালু থাকা চারটি পাবলিক সুইচড টেলিফোন নেটওয়ার্ক (পিএসটিএন) ল্যান্ডফোন কোম্পানির গ্রাহকদেরও কল রেকর্ড পর্যালোচনা করা যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা আলাপ- আলোচনার পর এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানিয়ে ল্যান্ডফোন কোম্পানিগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কোন ব্যক্তি রাষ্ট্র বা সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তা জনসমক্ষে নিয়ে আসা হবে। যদিও এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন নীতিমালা করা হয়নি। বিষয়টি জানতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এনটিএমসির মাধ্যমে আইনগতভাবে এসব বিষয় মনিটর করা হবে। এ নিয়ে কোন বাড়াবাড়ি থাকবে না। ঢালাওভাবে আড়িপাতার কোন বিষয় থাকবে না। কেবল যারা সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তাদের বেলায়ই আড়িপাতার ঘটনা ঘটবে। যদিও একটি মহল এই বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক আলোচনা করে যাচ্ছে। আড়িপাতার বিষয়টি নতুন কোন ঘটনা নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই মোবাইল ও ল্যান্ডফোনে আড়িপাতার ঘটনা রয়েছে। বিশ্বের মোড়ল দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে ব্যাপক ভিত্তিতে ফোনে আড়িপাতার ঘটনা ঘটছে। ওই দেশের আড়িপাতা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারেন না, কিন্তু দেশে আড়িপাতা হলে নাগরিক অধিকার চলে যাচ্ছে বলে আওয়াজ ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রে কি নাগরিক অধিকার নেই? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, গত কয়েক মাস ধরে দেশে যে অরাজকতা চালানো হচ্ছে বিরোধী জোটের পক্ষ থেকে সেখানে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে না। প্রভাবশালী দেশে কোন কিছু করলে সেটা দোষের নয়। এখানে করলে যত দোষ! ভারতেও টেলিফোনে আড়িপাতার ঘটনা রয়েছে। কই সেখানে তো নাগরিকরা এমন হৈচৈ শুরু করে না। অপরাধীদের শনাক্ত করতে এ ব্যবস্থা নেয়া জরুরী ছিল। সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের টেলিফোনে কথোপকথনের নানা ধরনের অডিও ক্লিপ ইন্টারনেটে প্রকাশ পাওয়ার পর ল্যান্ডফোনে আড়িপাতার বিষয়টি চলে এসেছে। বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের অনেক নেতাকর্মীর টেলিফোন সংলাপ ইন্টারনেটে এখন পাওয়া যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তিবিদরা বলেন, রাষ্ট্রের নাগরিকদের গোপনীয়তা রক্ষা করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কিন্তু যখন কোন নাগরিক রাষ্ট্র ও সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায় তাদের শনাক্ত করা। এখানে কোন প্রকার ছাড় দেয়ার বিষয় থাকে না। রাষ্ট্রকে হুমকির মধ্যে রেখে তারা বসে থাকলে বরং এটা ব্যর্থতাই প্রমাণ করবে। যদিও ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন করা এক ধরনের অপরাধ। সরকারের বাইরে যারাই এই গোপনীয়তা লঙ্ঘন করছেন তারা অপরাধ করছেন। বিটিআরসি জানিয়েছে, টেলিযোগাযোগ আইনের আওতায় টেলিফোনে আড়িপাতায় কোন বাধা নেই। আইনটির ৯৭ (ক) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহারকারীর পাঠানো বার্তা ও কথোপকথন প্রতিহত, ধারণ বা এ সম্পর্কিত তথ্যাদি সংগ্রহে সরকার সময় সময় নির্ধারিত সময়ের জন্য গোয়েন্দা সংস্থা, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা, তদন্তকারী সংস্থা বা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থাকে কোন ক্ষমতা দিতে পারবে।’ আর এই ক্ষমতা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনক্রমেই এ ধারা প্রযোজ্য হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারাটি ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রণীত টেলিযোগাযোগ আইনে ছিল না। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০৬ সালে আইনটি সংশোধন করে ধারাটি যোগ করা হয়। ২০০৬ সালের আইনেই টেলিফোনে আড়িপাতার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা দেশব্যাপী অবরোধ-হরতালে ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে নাশকতা চালানোর নির্দেশ টেলিফোনেই দেয়া হচ্ছে। চলমান অভিযানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধরা পড়া বিএনপি-জামায়াতের বোমাবাজদের স্বীকারোক্তি থেকেই আইন প্রযোগকারী সংস্থা এমন তথ্য জেনেছে। বিএনপি-জামায়াতের অনেক নেতা পেশাদার বোমাবাজদের টাকার বিনিময়ে বোমা মারার নির্দেশ টেলিফোনেই দিয়েছে। বোমাবাজদের অর্থের যোগান দিত অবরোধ আহ্বানকারী দলের কতিপয় শীর্ষ নেতা। এখন এসব নেতাকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলছে। গত ৫ জানুয়ারি বড় ধরনের নাশকতার আশঙ্কায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটকে সমাবেশ করার অনুমতি না দেয়ায় ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধের ডাক দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। অবরোধের বাইরে ছিল না বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসমাবেশ বিশ্ব এজতেমাও। অবরোধে দেশের লাখ লাখ মানুষ ইজতেমায় যোগ দিতে পারেননি। অবরোধ-হরতালের শিকার এসএসসি পরীক্ষার্থীরা । তাদের পরীক্ষা বার বার পিছিয়ে দিতে হচ্ছে।
×