ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৩শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ ২৩শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা অবরোধ ও হরতালের কারণে দেশের অর্থনীতির ক্ষতির মধ্যেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে আবারও নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। দেশের ইতিহাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২৩ বিলিয়ন ডলার (২ হাজার তিনশ’ কোটি মার্কিন ডলার) অতিক্রম করেছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নতুন এ মাইলফলক অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান রিজার্ভ সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। রিজার্ভের দিক দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। রফতানি আয় বৃদ্ধি ও রেমিটেন্স প্রবাহের ইতিবাচক ধারা, বিদেশ থেকে কর্পোরেট ঋণ গ্রহণ এবং কাক্সিক্ষত হারে আমদানি ব্যয় না হওয়া রিজার্ভ বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে ফরেক্স রিজার্ভ এ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভ ২৩ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রিজার্ভ এই মাইল ফলক অতিক্রম করেছে, যা পাকিস্তানের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বলেন, রফতানি আয় ও প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহ স্থিতিশীল থাকায় এই মাইলফলকে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে। প্রতি মাসে ৩ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় হিসেবে এই রিজার্ভ দিয়ে সাত মাসের বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব বলে জানান ছাইদুর। এর আগে, ২০১৪ সালের ৭ মে রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এরপর একের পর এক রেকর্ড অর্জন করতে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ। একই বছরের ১৯ ডিসেম্বর বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয় ১৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। একইভাবে ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ১৯ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। এরপর একই বছরের ১০ এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন, ১৬ এপ্রিল রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন এবং ৭ আগস্ট ২২ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে। কয়েক দফা ওঠানামার পর চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালে গবর্নর আতিউর রহমান বলেছিলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় অর্থনীতির সব খাতই যখন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তখন রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি থাকা একটি স্বস্তির খবর। সম্প্রতি আরও একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যেও রফতানি আয় ও রেমিটেন্স প্রবাহ অব্যাহতভাবে বাড়ছে। একইসঙ্গে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করায় খাদ্য আমদানিও আগের তুলনায় কম হচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ একের পর এক রেকর্ড অর্জন করছে। পাশাপাশি সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকগুলোও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ দিনে অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসের আগ পর্যন্ত চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে ৮৭২ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। সর্বশেষ জানুয়ারি মাসে ১২৩ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল। কেবল রেমিটেন্স নয়, নাশকতার মধ্যে জাহাজীকরণ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে। অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছে এক হাজার ৭৮০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি।
×