ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৯২ রানে হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৯২ রানে হার বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ ॥ স্বপ্নের মতো ম্যাচটি হতে পারত। অথচ ক্যাচ মিসের মহড়ায় বাংলাদেশের স্বপ্নের অপমৃত্যুই ঘটল। চারটি নিশ্চিত ক্যাচ, একটি নিশ্চিত স্ট্যাম্পিং, একটি নিশ্চিত রান আউট করতে পারল না বাংলাদেশ ফিল্ডাররা। খেসারতও দিতে হলো। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে যেখানে জয়ের স্বপ্ন দেখা হয়েছে, সেখানে ৯২ রানের বড় ব্যবধানেই হারতে হলো। শ্রীলঙ্কার করা ৩৩২ রানের সামনে পড়ে ব্যাটিং ব্যর্থতাই হলো। ২৪০ রানেই গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ। এনামুল হক বিজয় দুটি ক্যাচ ধরতে পারলেন না। সঙ্গে একটি রান আউটও করতে পারলেন না। মুমিনুল হক ও তাসকিন আহমেদও একটি করে ক্যাচ মিস করলেন। মুশফিকুর রহীম তো সহজ স্ট্যাম্পিংই করতে পারলেন না। এত বাজে নৈপুণ্যের পর কি আর ম্যাচ জেতার স্বপ্ন দেখা যায়। ক্যাচ মিস, রান আউট, স্ট্যাম্পিংয়ের যে হিসেব দেখা গেল তাতে তো শ্রীলঙ্কার ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার কথা! অথচ ১ উইকেটই মাত্র শিকার করা গেল। শ্রীলঙ্কার তিন ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করলেন, লাহিরু থিরিমান্নে (৭৮ বলে ৫২ রান), তিলকারতেœ দিলশান (১৪৬ বলে অপরাজিত ১৬১ রান), কুমার সাঙ্গাকারা (৭৬ বলে অপরাজিত ১০৫ রান)। তিনজনই ‘নতুন জীবন’ নিয়ে বাংলাদেশকে ভোগালেন। শেষপর্যন্ত শ্রীলঙ্কা ৫০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ৩৩২ রানও করে ফেলল। থিরিমান্নেই তিনবার ‘নতুন জীবন’ পেলেন। রানের খাতা খোলার আগে একবার, ২২ রানের সময় আরেকবার প্রথম সিøপেই বিজয়ের হাত থেকে বাঁচেন। আরেকবার ৪৪ রানের সময় সাব্বির রহমানের বলে একটু এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মুশফিকুর রহীমের স্ট্যাম্পিং করা থেকে বেঁচে যান। শেষপর্যন্ত অর্ধশতক করেই আউট হন থিরিমান্নে। সাঙ্গাকারাও তাই। দুইবার ‘নতুন জীবন’ পান। প্রথমবার ২৩ রানের সময় তাসকিন আহমেদের বলে কট এ্যান্ড বোল্ড হওয়া থেকে বাঁচেন। দ্বিতীয়বার ৬০ রানের সময় পয়েন্টে রুবেল হোসেনের বলে মুমিনুল হক সহজ ক্যাচটি ধরতে পারেননি। এরপর সাঙ্গাকারাকে আউট করার আর কোন সুযোগই মিলেনি। শেষপর্যন্ত সাঙ্গাকারা ক্যারিয়ারের ২২তম শতকই তুলে নেন। থাকেন অপরাজিতও। আরেকজন আছেন। তিলকারতেœ দিলশান। যিনি ম্যাচ সেরা হয়েছেন। তার ব্যাট থেকে অপরাজিত ১৬১ রান এসেছে। যা কিনা ক্যারিয়ারের ২১তম শতক। এ ব্যাটসম্যান অবশ্য শতক করার আগে আউট করার কোন সুযোগই বাংলাদেশকে দেননি। ধীরে ধীরে ইনিংস গড়েছেন। কিন্তু যেই ১০৬ রান করেন, দিলশানকে রান আউট করার সুযোগটি হাতছাড়া করেন বিজয়। এখানে দোষ আছে মুশফিকেরও। তাসকিনের বলে দিলশান ব্যাটে লাগিয়ে দৌড় দেন। কিন্তু রান নিতে পারবেন না বুঝে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করেন। পিচের মাঝখানেই এসে পড়েন। বিজয় বলটি ধরেন। দ্রুত উইকেটে মারবেন কি উল্টো একটু অপেক্ষা করেন। মুশফিক যে দৌড়ে উইকেটের সামনে আসেননি। যখন থ্রো করলেন, তখন দিলশান কাছাকাছি এসে পড়েন। এরপরও থ্রো যদি সরাসরি উইকেটে লাগত তাহলে আউট হতেন দিলশান। কিন্তু বলটি উইকেটেই লাগাতে পারেননি বিজয়। মুশফিক উইকেটের কাছে থাকলেও বলটি ধরে লাগাতে পারতেন। কিন্তু মুশফিকও উইকেটের সামনে ছিলেন না। দিলশান শেষপর্যন্ত দিনের সর্বোচ্চ রানটিই করে ফেলেন। দিলশান-সাঙ্গাকারা মিলে আবার দ্বিতীয় উইকেটে যে ২১০ রানের জুটি গড়েন, বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেটি আবার রেকর্ড জুটি। এত মিসের পর কী আর ক্রিকেটারদের মনও চাঙ্গা থাকে? থাকে না। যার প্রভাব ব্যাটিংয়ে ভালভাবেই পড়েছে। রানের খাতা খোলার আগেই আউট হয়ে যান তামিম। মালিঙ্গার ধেয়ে আসা গতির বলে বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশ ওপেনার। এরপর দল যেন আরও মুছড়ে পড়ে। মাঝে কয়েকটি ছোট্ট ছোট্ট জুটি হয়, কিন্তু এমন ম্যাচ থেকে জয় তুলে নিতে দরকার বড় ইনিংসের। সেটিই কারও কাছ থেকেই মিলেনি। সাব্বির সর্বোচ্চ ৫৩ রান করেন। সাকিবের ব্যাট থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৬ রান আসে। এ দুজনের বাইরে মুশফিক ৩৬, বিজয় ২৯, মাহমুদুল্লাহ ২৮ ও সৌম্য ২৫ রান করেন। ১০০ রানেই বাংলাদেশ হারিয়ে বসে ৫ উইকেট। তখন মনে হয়েছিল ২০০ রানও করতে পারবে না দল। শেষপর্যন্ত ষষ্ঠ উইকেটে সাকিব-মুশফিকের ৬৪ ও সপ্তম উইকেটে মুশফিক-সাব্বিরের ৪৪ রানের জুটি দলকে ২০০ রানের বেশি করার দিকে নিয়ে যায়। যেই ২০৮ রানে মুশফিক আউট হন, এরপর আর ৩২ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেটের পতনে ৪৭ ওভারে গুটিয়েই যায় বাংলাদেশ। এ ম্যাচ হারের পরও বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথ খোলা থাকল। এ জন্য সামনে যে স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা রয়েছে, যে কোন দুটি ম্যাচে জিততে হবে। কিন্তু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৫ রানে জেতার পর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও বৃষ্টির জন্য ১ পয়েন্ট পাওয়ায় ক্রিকেটারদের ভেতর যে আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারে কী তা কমে যাবে না? তা কী সামনের ম্যাচগুলোতে প্রভাব ফেলবে না? কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথেও বাধা তৈরি করে দেবে না? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার কণ্ঠে হতাশার সুরই, ‘ফিল্ডিংয়ের জন্যই খেসারত দিতে হলো। পরের ম্যাচে (৫ মার্চ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে) এ থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করব। আরেকটি জয় না আসলে সামনের পথ নিয়ে কিছুই চিন্তা করতে পারছি না। আশা করছি, এটিই যেন টুর্নামেন্টে আমাদের জন্য সবচেয়ে বাজে ম্যাচ হয়ে যায়।’ মাশরাফির কণ্ঠে হতাশার সুর। সেই সুর ক্যাচ মিসের মহড়ায় নিয়তিতে হার লেখা হওয়াতেই শোনা যাচ্ছে।
×