ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লোভের কবলে ঝিরি-ঝর্ণা

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

লোভের কবলে ঝিরি-ঝর্ণা

কোনও কোনও মানুষের লোভের কোন সীমা-পরিসীমা নেই বলেই মনে হচ্ছে। নির্বিচারে অর্থ রোজগার অথবা লাভের জন্যই এই লোভ হলে মানুষ আর অন্য প্রাণীতে পার্থক্য থাকে কিভাবে? বিত্তের সন্ধান করতে গিয়ে অর্থগৃধœু মানুষের চিত্ত নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে। এ দুর্দশাকে কিভাবে মেনে নিচ্ছে তারা! আসলে মেনে নেয়া না নেয়ার বোধ থাকলে তো! জনকণ্ঠের বান্দরবান সংবাদদাতা প্রেরিত প্রতিবেদনটি পড়ে মানুষের লালসার সর্বগ্রাসী রূপ দেখে থমকে যেতে হয়। বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ী ঝিরি-ঝর্ণা আর পাহাড়কে স্থানীয় প্রভাবশালীরা পৈত্রিক সম্পত্তি হিসেবেই যেন দেখছে। সেসব খুঁড়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করছে তারা। জেলা সদরের টংকাবতী, রোয়াংছড়িসহ কিছু এলাকা, আলীকদম ও লামা উপজেলার লাইনঝিরি, কাঁকড়াঝিরি, হরিণঝিরিসহ বেশ কিছু এলাকার বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড় খুঁড়ে বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পাথর উত্তোলন করছে ওই চক্র। পাথর পাচার করাই যেন তাদের কাজ। এর ফলে যে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা ঘটছে সে বিষয়ে তাদের ভ্রƒক্ষেপ নেই। প্রকৃতি উচ্ছন্নে যাক, পরিবেশ মুখ থুবড়ে পড়ুক, তাতে কী এসে যায়। তাদের ব্যাংকে টাকার অঙ্ক তো হু হু করে বাড়ছে! ভূমিখেকো, নদীখেকোর পর পাহাড়খেকোদের কথা জেনেছে দেশবাসী। এখন জানছে ঝিরি-ঝর্ণা সাবাড়কারীদের কথা। সত্যি সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ! মানুষের পেটের কী বিপুল খিদে, স্বয়ং রাক্ষসও তার কাছে নস্যি। নদীবহুল বাংলাদেশের অসংখ্য নদী দূষণের শিকার হয়ে বিপন্ন, বিপর্যস্ত; মানুষের অপরিণামদর্শিতার কারণে বহু নদী ধুঁকে ধুঁকে মরছে। বিশ্বের আর কোথাও এদেশের মতো এমন নদীহত্যার নজির নেই। বহির্বিশ্বে প্রকৃতির উপহার সংরক্ষণের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেয়া হয়। নদীকে প্রাণবন্ত, দূষণমুক্ত রাখা এবং তার প্রবাহ অবাধ রাখার জন্য রীতিমতো আইন প্রণয়ন হয়। পরিবেশ ধ্বংসকারীরা কী পাহাড়, কী সমতলÑ সর্বত্রই আগ্রাসন চালাচ্ছে। প্রসঙ্গত বলা দরকার, রাজধানীর চারপাশের চার নদী বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যার তীরে গড়ে ওঠা হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনার কথা সংসদেই উচ্চারিত হয়েছে বার বার। ভূমিদস্যু ও নদীহন্তারকরা আইন-আদালতের তোয়াক্কা করে না। অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জরিপ পর্যালোচনায় বিভিন্ন সময়ে উঠে এসেছে দেশের উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করার বিষয়টি। পাহাড়ের নিজস্ব শোভা আছে, যা প্রকৃতিসম্মত। সেসব প্রকৃতির অনুষঙ্গও বটে, যা প্রকৃতপক্ষে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষাকারী। পাহাড়ের ঝিরি-ঝর্ণা পাহাড়ীদের পানীয় জলের প্রয়োজন মেটায়। এখন পাহাড়ী ঝিরি ও ছড়া থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ ও আশপাশের ঝিরি-ঝর্ণা থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে পানির উৎসস্থল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে খাবার উপযোগী পানি সংগ্রহ করতে পারছে না এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় ম্রো আদিবাসীরা। বলাবাহুল্য, সরকারীভাবে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা পাহাড়ের বহু স্থানেই করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সেসব জায়গায় ঝিরি-ঝর্ণাই প্রধান ভরসা। পাহাড়ের অধিবাসী এবং পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আশু পদক্ষেপ নিতে হবে। কালবিলম্ব না করে ‘পাহাড় ধ্বংসকারীদের’ পাহাড়ছাড়া করতে হবে। পাহাড়ের পাঁজরে বারুদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যারা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে, সেসব মুনাফালোভী শুভবোধহীন ব্যবসায়ীকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। যে কোন মূল্যে পাহাড়ের সৌন্দর্য ও সম্পদ রক্ষা করা দরকার।
×