ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুবচন নয়, দরকার এ্যাকশন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সুবচন নয়, দরকার এ্যাকশন

কথামালার রাজনীতির তোড়ে মূল কাজ ভেসে যাওয়ার ঐতিহ্য এই বাংলাদেশে অতি পুরনো। শুকনো কথায় চিড়ে না ভিজলেও মানুষের চিড়েচ্যাপ্টা হতে সময় নেয় না। দুঃশাসনের নিগড়ে বাঙালী কাটিয়েছে যুগের পর যুগ। কিন্তু সুশাসনের জন্য তাকে হাহাকার করতে হয়েছে। আবার সুশাসন প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে প্রতি পদে পদে মেলে প্রতিবন্ধকতা। এমন বৈসাদৃশ্য এ দেশেই সম্ভব। তাই দেখা যায়, আইন প্রণয়ন যাদের কাজ এবং জনগণের নামে, জনগণের জন্য আইন তৈরি করলেও তারা নিজেরা অনেক ক্ষেত্রে সে আইন মানেন না তার উদাহরণ যথেষ্ট। আর সে কারণেই আইন অমান্য করা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে অনেকের। দিনের পর দিন আদালতে তারিখ পড়ে অথচ তাঁরা হাজির হন না। উপেক্ষা করেন। মামলার তারিখে হরতাল-অবরোধ ডেকে হাজির না হওয়ার অসিলা তৈরি করে আসছেন বছরের পর বছর। আবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে আইন ভাঙ্গার কাজটি অব্যাহত রাখেন জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর চালিয়ে। এরাই আবার সুবচন জারি করেন আইনের শাসন, সুশাসন চাই বলে। জনগণের জন্য আয়কর প্রদান বাধ্যতামূলক হলেও তাঁরা অনেকেই আয়কর দেন না। কালো টাকা সাদা করে প্রমাণ করেন দুর্নীতিতে কত সিদ্ধহস্ত। কিন্তু সে কথা বলা যাবে না। আইন ভাঙ্গার ফাইন আছে বলে একটি প্রবাদ রয়েছে। বরং তাঁরা আইন না মানায় সিদ্ধহস্ত হয়ে ওঠেন, জরিমানা প্রদান দূরে থাক। আইনের শাসন এভাবেই মুখ থুবড়ে পড়ে। তিন দফা সরকারপ্রধান ছিলেন যিনি তিনি সুবচনে সিদ্ধহস্ত হলেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পারঙ্গম ছিলেন, তা নয়। তাঁর শাসনামলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ঘটেছে। আর আজকে সারাদেশকে বার্ন ইউনিটে পরিণত করেছে যারা, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকে মানবতাবিরোধী বলা হয়। ঘোষণা দিয়ে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে যারা, তাদের দেখামাত্র গুলি করা হলে জজবা তোলা হয়, আইনের শাসন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। কিন্তু বোমায় মানুষ মারা হচ্ছে সে নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য নেই। আইন যেন তাদের মানুষ হত্যার অধিকার দিয়েছে। দেশজুড়ে নাশকতা চলছে। রাজনীতির নামে, রাজনীতিকদের পরিচালনা ও প্ররোচনায়। যাদের কাজ একতরফাভাবে মানুষ নিধন অথচ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিঘœকারী প্রাণহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি না দিয়ে যারা ‘হেন করেঙ্গা তেন করেঙ্গা’ বলে গলা হাঁকান, তাঁরাও একই দোষে দোষী। প্রবাদই রয়েছে, ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’ যারা মানুষকে পোড়াচ্ছে বা আঘাত করছে তাদের বিরুদ্ধে যত কঠিন ব্যবস্থা নেয়া দরকার তা নেয়ার জন্য বলা হয়। তেমন এ্যাকশন আর দেখা যায় না। বরং কঠোর ব্যবস্থা নিতে কোথায় যেন এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব কাজ করে। কেন সন্ত্রাসী, নাশকতাকারীকে দেখামাত্র গুলি না করে তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে, সে প্রশ্নের কোন জবাব মেলে না। দেশের ১৫ লাখ এসএসসি পরীক্ষার্থীকে যে করুণ, কঠিন অবস্থায় পরীক্ষা দিতে হচ্ছে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। বরং শিক্ষামন্ত্রীকে দেখা যায় কাতর কণ্ঠে হরতাল প্রত্যাহারের আহ্বান জানাতে। বিনম্র সশ্রদ্ধ ভাষায় সন্ত্রাসবাদীদের প্রধানকে অনুনয়-বিনয় করতে যখন দেখা যায়, তখন জনগণের ক্ষোভ জাগে। যাদের কাজ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, তারাই কি হন্তারকের কাছে নতজানু? জনগণ দ্বিধাদ্বন্দ্বে নেই। তারা চায় এ্যাকশন। প্রয়োজন নাশকতা, সন্ত্রাসবাদ, অরাজকতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ তথা এ্যাকশন।
×