ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দৈনিক লেনদেন ৩৭৮ কোটি টাকা

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ও লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিদিনই মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণ বাড়ছে। একই সঙ্গে গ্রাহকদের নিজের এ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে। শুধু লেনদেন নয়, অনেক নতুন নতুন সেবাও যুক্ত হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে। প্রায় সব ধরনের ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হচ্ছে এ সেবা থেকে। পরিসংখ্যান বলছে, জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার। মোবাইলে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ৩৭৮ কোটি টাকা। জানা গেছে, কেবল একস্থান থেকে টাকা আরেকস্থানে পাঠানোই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও গতি সঞ্চার করেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এই সেবা। যোগ হয়েছে নতুন কর্মসংস্থান। এ ছাড়া এই সেবার আওতা ও সুবিধা বেড়েছে। এ ছাড়া বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন নতুন সেবা যুক্ত হয়েছে। প্রাত্যহিক লেনদেন ছাড়াও বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিটেন্স বিতরণ, এটিএম ইত্যাদি সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে, বছরকয়েক আগেও এটা ছিল অকল্পনীয়। অথচ সময় যত গড়াচ্ছে, গতানুগতিক ধারার ব্যাংকিং থেকে বেরিয়ে এখন মোবাইল ব্যাংকিং দেশব্যাপী যে কোন সময়, যে কোন স্থানে আর্থিক সেবার নিশ্চয়তা মিলছে। একই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতেও সাহায্য করছে। এ প্রসঙ্গে বিকাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল কাদীর বলেন, সাধারণ মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের কারণে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেন যেমন বেড়েছে তেমনি বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালার ধারাবাহিকতা এবং কঠোর নজরদারির কারণে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের প্রবৃদ্ধি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। বিকাশের প্রতিটি লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে সম্পন্ন হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। প্রতিটি লেনদেনের তথ্য সংরক্ষিত করা হয় বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস চালু হওয়ার ফলে ই-কমার্সসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা বেড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেমন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করছে তেমনি বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতনও দিচ্ছে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করে। এদিকে মোবাইল ব্যাংকিং দিয়ে মোবাইল ফোনের এয়ারটাইম ক্রয়ের পাশাপাশি দোকানে কেনাকাটাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও ওয়ালেটে (এ্যাকাউন্টে) জমা টাকার ওপর দেয়া হচ্ছে ইন্টারেস্ট। ফলে গ্রাহকদের মধ্যে ওয়ালেট ব্যবহারের উৎসাহ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, জানুয়ারি শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৫২ লাখ ৩৬ হাজার। আগের মাস ডিসেম্বরে মোট গ্রাহক ছিল দুই কোটি ৫১ লাখ ৮৬ হাজার। এতে এক মাসের ব্যবধানে মোট গ্রাহক ৫০ হাজার বাড়লেও সচল এ্যাকাউন্ট কমেছে ১১ লাখ। জানুয়ারি মাসে ৮ কোটি ২১ লাখ লেনদেনের বিপরীতে ১১ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা উত্তোলন ও জমা হয়েছে। দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ ৩৭৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। আলোচ্য মাসে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্সের অর্থ সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ২ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। গ্রাহকরা নিজেদের এ্যাকাউন্টে জমা করেছেন চার হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। উত্তোলন করেছেন চার হাজার ১৭৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া অন্যের এ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছেন দুই হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এর মাধ্যমে বেতন পরিশোধ হয়েছে ৭৭ কোটি টাকা। ইউটিলিটি বিল পরিশোধ হয়েছে ৬০ কোটি এবং অন্যান্য ১৪১ কোটি টাকা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এ ব্যাংকিং সেবা চালু করা হলেও জনপ্রিয় হওয়ায় এখন অনেকেই এটি ব্যবহার করছেন। এ কারণে নতুন গ্রাহক যুক্ত হচ্ছেন ও লেনদেন বাড়ছে। তবে মোবাইল ব্যাংকিং যাতে খারাপ কাজের অর্থায়নের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত না হয় সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক নজর রাখছে। জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ২৮ ব্যাংককে অনুমোদন দিলেও এ সেবা দিচ্ছে ১৯ ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এর পরই আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং। সম্প্রতি এ সেবার নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি ছাড়া এ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নাশকতা, ঘুষ লেনদেনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে অর্থ লেনদেনে যাতে এ মাধ্যম ব্যবহৃত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হচ্ছে।
×