ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ বছরে দারিদ্র্য নামবে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পাঁচ বছরে দারিদ্র্য নামবে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী পাঁচ বছরে দেশের দারিদ্র্য ১৬ দশমিক ৮ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা খসড়া তৈরি করা হচ্ছে। বর্তমান দারিদ্র্য (২০১৪ সাল পর্যন্ত) ২৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে কমিয়ে নিয়ে আসার এ লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। অতিদারিদ্র্যের হার বর্তমানের ১২ দশমিক ৪ শতাংশ থেকে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য রয়েছে বলে জানা গেছে। দারিদ্র্য নিরসনের এ লক্ষ্য পূরণে আগামী পাঁচ বছরে দেশের গড় মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া আজ বৃহস্পতিবার উঠছে দশম জাতীয় সংসদের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভায়। এতে তিনটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। এগুলো হচ্ছে পূর্ববর্তী দশম বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা, পরিকল্পনা কমিশনের সাংগঠনিক কাঠামো ও কর্মপরিধি বিষয়ে সার্বিক অবহিতকরণ এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থার প্রতিফলন বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন এই কমিটির সভাপতি জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ। পরিকল্পনা তৈরির দায়িত্বে নিয়োজিত পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যেই দারিদ্র্য হ্রাসের ক্ষেত্রে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে দেশ। শুধু দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রেই নয় ধনী-দারিদ্র্যের বৈষম্য কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। যে হারে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে দারিদ্র্য হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছে এটি অন্যান্য দেশের কাছে উদাহরণ। তিনি জানান, গত পাঁচ বছর গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশের ওপর। সার্বিক বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দুটি দেশ জার্মানি ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে কেবলমাত্র বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল অবস্থায় অব্যাহত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে। তাই দারিদ্র্য কমছে এবং সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিল্পনায় প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তা অর্জিত হলে দারিদ্র্য সাড়ে ১৬ শতাংশে নেমে আসবে। পরিকল্পনা সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সর্বশেষ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। বলা হয়েছে সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব নীতি ও বিচক্ষণ কর্মসূচীর কারণে বাংলাদেশে খাদ্যভাব এখন নেই। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার সুলভ মূল্যে খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে নানামুখী আয়বর্ধক কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। তুলনামূলকভাবে অতিদরিদ্র এলাকাসহ (উত্তরাঞ্চল, উপকূলবর্তী এলাকা ও যমুনা-ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চল ইত্যাদি) এলাকার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অতিদরিদ্রের জন্য কর্মসস্থান কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। এ কর্মসূচীর আওতায় প্রতি বছর গড়ে এক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে ৮ লাখ লোকের ৮০ দিনের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। গত পাঁচ বছরে দেশের উত্তরাঞ্চলে মঙ্গার পদধ্বনি শোনা যায়নি। চালের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে গত চার বছরে শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। একদিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় সাড়ে ৮ কেজি চাল কিনতে পারছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
×