ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি সই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

এলএনজি টার্মিনাল ব্যবহার চুক্তি সই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহুল প্রতিক্ষিত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল ব্যবহার টার্মশিট স্বাক্ষর হয়েছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে পেট্রোসেন্টারে ফ্লোটিং স্টোরেজ এ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য (এফএসআরইউ) পেট্রোবাংলা এবং এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের মধ্যে টার্মশিট স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্য দিয়ে আমদানি করা গ্যাস ব্যবহারের প্রক্রিয়া শুরু হলো। এখন প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট রয়েছে। বিদ্যুত উৎপাদন-শিল্প এবং অন্যান্য খাতে গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য এলএনজি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার। টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে মহেশখালীতে। চুক্তির পর এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের ডিরেক্টর প্রজেক্ট শ্যাম্পু সুভেসারী জনকণ্ঠকে বলেন, চুক্তি পরবর্তী নয় মাস তারা সমীক্ষা এবং নকশা প্রণয়ন করবে। পরবর্তী ১৬ মাসে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হবে। মোট ২৫ মাসের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ করতে চায় তারা। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ২০১৭ সালের শুরুর দিকে টার্মিনালটি গ্যাস সরবরাহ শুরু করবে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, যখন যে দামে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি বিক্রি হয় ওই দামেই এলএনজি কেনা হবে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ইউনিট এলএনজির দাম রয়েছে সাত ডলারের মতো এর আগে যা ১৫ ডলার ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমায় এলএনজির দাম কমে আসছে। প্রথম দিকে কাতার থেকে এলএনজি আমদানির জন্য একটি সমঝোতা রয়েছে সেই দেশের সঙ্গে। অন্য দেশ থেকে এলএনজি আমদানি করাও যেতে পারে। এর আগে পেট্রোবাংলার পক্ষে সংস্থার সচিব শফিকুর রহমান এবং এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপের ডিরেক্টর প্রজেক্ট শ্যাম্পু সুভেসারি চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, আজ আমরা জ্বালানি ব্যবহারের একটি নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করছি। মধ্য আয়ের দেশের দিকে ধাবিত হতে চাইলে আশা আকাক্সক্ষার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ বাড়বে। এজন্য আমাদের সকল বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে হবে। এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনকে (আইএফসি) ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা করেন ভবিষ্যতেও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে আইএফসি তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রতিনিয়ত আমাদের দেশের ব্যবসা বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে। ভবিষ্যতে আমাদের জ্বালানি চাহিদা আরও বাড়বে। এখন থেকে এর প্রস্তুতি নিতে হবে পেট্রোবাংলাকে। তিনি এজন্য নতুন পন্থা উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা এবং মানব সম্পদ উন্নয়নের ওপর জোর দেয়ার নির্দেশ দেন। তিনি মনে করেন দেশে প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন নয় অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজির চাহিদা রয়েছে। পেট্রোবাংলার তরফ থেকে এলএনজি টার্মিনালের সেল চীফ সংস্থার পরিচালক (পিএসসি) মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, টার্মিনালটির ধারণ ক্ষমতা হবে দুই লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করতে পারবে। এ জন্য প্রতিদিন রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দুই লাখ ৩৮ হাজার ডলার খরচ পড়বে। এর মধ্যে স্থায়ী ব্যয় দৈনিক ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ ডলার, পরিচালনা ব্যয় ৪৫ হাজার ৮১৪ ডলার এবং অন্যান্য ব্যয় ৩২ হাজার ডলার। এই চুক্তি ১৫ বছর বলবৎ থাকবে। প্রতি ইউনিট গ্যাসের রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৪১ ডলার লাগবে। অন্যান্য সকল খরচ যোগ করে যা দাঁড়াবে দশমিক ৪৭৪ ডলার। প্রসঙ্গত ২০১০ সালে এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। এরপর দরপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া এগুলেও কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে বিদ্যুত জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে দরপত্রের সর্বনিম্নদরদাতা এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপকে কাজটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্রে প্রতি ইউনিট এলএনজিকে রিগ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৩৬ ডলার দাম দরপ্রস্তাব করে এই কোম্পানি। তবে বিশেষ আইনে করতে গিয়ে যা বেড়ে দশমিক ৪৭ ডলার করা হলো। বুধবার সকালেই টার্মশিট স্বাক্ষরের জন্য প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসেন। দুপুর পর্যন্ত বৈঠকের পর টার্মশিট চূড়ান্ত করা হয়।
×