ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সারদার ১২০ কোটি টাকা এসেছে জামায়াতের হাতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সারদার ১২০ কোটি টাকা এসেছে জামায়াতের হাতে

অভ্রনীল মুখোপাধ্যায় ॥ বশিরহাটের তৃণমূল নেতা আবদুল বারিক বিশ্বাসকে নিজেদের হেফাজতে নেয়ার পর ইডির হাতে এসেছে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মাত্র সাত দিনে আবদুল বারিকের ১২৬টি ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খতিয়ে দেখা গেছে, জমা পড়েছে ১২০ কোটি টাকা। আবার সাতদিনের মধ্যেই ওই টাকার একটা বিরাট অংশ তুলেও নেয়া হয়েছে। গোয়েন্দাদের ধারণা, তা পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। মনে করা হচ্ছে, বারিকের ওই এ্যাকাউন্টগুলো টাকা পাচারের ভায়া রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এখন সেগুলোই খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা। মনে করা হচ্ছে সারদাকা-ের নয়া মোড় বাংলাদেশে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, ২০১২ সালের আগস্ট মাসে বারিকের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট থেকে এই রহস্যময় লেনদেন হয়েছিল। এই সময়েই সারদার পতন শুরু হয়। আর তখনই সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেন টাকা সরাতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। সহযোগিতায় ছিলেন তৃণমূলের এক রাজ্যসভার সাংসদ, এমনটাই অভিযোগ। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এসএফআইওর রিপোর্টেও তেমনই ইঙ্গিত মিলেছে। এখন প্রশ্ন, ওই টাকা কি সরাসরি সুদীপ্ত সেনের, নাকি অন্য কারওর হাত ঘুরে গিয়েছিল বারিকের হাতে, সেখান থেকে বাংলাদেশে। আবদুল বারিক এলাকায় যথেষ্ট দাপুটে, সেই সঙ্গে তার ভাই গোলাম বিশ্বাস উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের তৃণমূলের সদস্য। একই সঙ্গে বশিরহাটের প্রাক্তন সাংসদ হাজি নূরুল ইসলামের অনুগামী হিসেবেও পরিচিত ছিল। গরু পাচার ছাড়াও বাংলাদেশের সাতক্ষীরা থেকে সোনাও পাচার করত বারিক। বার কয়েক আবদুল বারিক গ্রেফতার হলেও কিছুদিন পর জামিনও পেয়ে যায়। ইডি নিজেদের হেফাজতে নেয়ার আগে বারিককে গ্রেফতার করে পাওয়া গিয়েছিল ৪৫ কিলোগ্রাম সোনার বিস্কুট, যার বাজারমূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এছাড়াও তার বাড়ি তল্লাশি চালিয়ে পাওয়া গিয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। প্রচুর সম্পত্তি ও একাধিক বাড়ি ছাড়াও বারিকের ৫০-৬০ বিঘা জমিরও খোঁজ পেয়েছেন গোয়েন্দারা। এছাড়াও বারিকের ব্যাংক এ্যাকাউন্টে পাওয়া গেছে ৬ কোটি টাকা। সোমবারই বারিকের ইডি হেফাজতের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এই ক’দিনে তাকে জেরা করে যে তথ্য উঠে এসেছে, তার ভিত্তিতে নতুন করে তদন্ত শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তবে সীমান্তে সুন্দরবন এলাকার চোরাপথে সারদার যে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার হত, এখন তা নিয়ে গোয়েন্দাদের আর কোন সন্দেহ নেই। মনে করা হচ্ছে, সারদার মিডল্যান্ড পার্ক থেকে টাকা পাচার করা হত এ্যাম্বুলেন্সের করে। সেখান থেকে স্থলপথ ধরে ভারতের টাকা বাংলাদেশী মুদ্রায় রূপান্তরিত করে তা পাঠিয়ে দেয়া হত প্রতিবেশী রাষ্ট্রে। অভিযোগ, সেই টাকারই একটা অংশ গেছে জামায়াত গোষ্ঠীর হাতে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারও খুবই উদ্বিগ্ন। সেখান থেকে ভারতের স্বরাষ্ট্র দফতরেও রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। আর ও উদ্বেগের বিষয়, রাজ্যের শাসক দলের সাংসদের নাম এই ঘটনায় জড়িয়ে পড়ায়। যদিও গোয়েন্দারা সমস্ত বিষয়টাই খতিয়ে দেখছেন।
×