ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিজামীর মামলা

দু’পক্ষকে আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দু’পক্ষকে আপীলের সারসংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ের বিরুদ্ধে করা আপীল আবেদনের সার-সংক্ষেপ জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাষ্ট্র এবং আসামীপক্ষকে আপীলের সার সংক্ষেপ জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের নেতা গোলাম আযম মারা যাওয়ায় তার আপীল আবেদনটি অকার্যকর ঘোষণা করেছে সুপ্রীমকোর্ট। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চে এ মামলা দুটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হলে আদালত এ আদেশ দেন। এই বেঞ্চের অন্য সদস্যরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে নিজামীর পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট শিশির মোঃ মনির এবং আসাদ উদ্দিন। গত বছরের ২৩ নবেম্বর ফাঁসির দ- থেকে খালাস চেয়ে মতিউর রহমান নিজামীর পক্ষে সুপ্রীমকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপীল আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। সর্বমোট ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার আপীল আবেদনে মোট ১৬৮টি যুক্তি দেখানো হয়েছে। গত বছরের ২৯ অক্টোবর রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে নিজামীর দ- কার্যকর করার আদেশ দেয়। রায়ে আদালত বলে, আদালত সম্মত হয়েছে যে, তিনি যে মাত্রায় হত্যা, গণহত্যা ঘটিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ সাজা না দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা। জামায়াতের আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীর প্রধান। স্বাধীনতাকামী বাঙালীর ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মামলার রায়ে উঠে এসেছে। বাঙালী জাতিকে সমূলে ধ্বংস করতে ‘স্বেচ্ছায় ও সচেতনভাবে’ নিজামী পবিত্র ধর্ম ইসলামের অপব্যবহার করেন বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়। নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যাসহ চার অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। বাকি চারটি অভিযোগে নিজামীর যাবজ্জীবন কারাদ- এবং আট অভিযোগে তাকে খালাস দেয়া হয়। এর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও তার মৃত্যুদ-ের আদেশ হয়। ৭১ বছর বয়সী নিজামী বিগত চারদলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ২০০১-০৩ সময়ে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী। বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এমন একজন ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতি ‘কষে চর’ ছিল বলেও ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়। গোলাম আযমের আপীল অকার্যকর ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ৯০ বছরের কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত রাজাকারদের নেতা গোলাম আযমের মামলায় দু’পক্ষের আপীলকে অকার্যকর ঘোষণা করে সমাপ্তি করেছে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। গোলাম আযম মারা যাওয়ায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ মঙ্গলবার গোলাম আযমের মামলার সমাপ্তি ঘোষণা করে। এ বিষয়ে গোলাম আযমের আইনজীবী এ্যাডভোকেট শিশির মোঃ মনির বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করায় তার মামলার কার্যক্রমের পরিসমাপ্তি ঘোষণা করেছে আপীল বিভাগ। গত বছরের ২৩ অক্টোবর ৯২ বছর বয়সে গোলাম আযম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) মারা যান একাত্তরের রাজাকারদের শিরোমণি গোলাম আযম। অসুস্থতার কারণে রায়ের আগে থেকেই ওই হাসপাতালের প্রিজন সেলে রেখে বিচার করা হয় তার। ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জামায়াতের এই সাবেক আমির গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদ-াদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ৫ ধরনের ৬১ ঘটনার অপরাধের দায়ে গোলাম আযমকে ৯০ বছরের শাস্তির আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পরে গত বছরের ৫ আগস্ট এ রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপীল করেন গোলাম আযম। অন্যদিকে, যুদ্ধাপরাধীদের এই নেতার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- চেয়ে আপীল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
×