ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফেঁসে যেতে পারেন অনেক মান্নাই ফোনালাপে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ফেঁসে যেতে পারেন অনেক মান্নাই ফোনালাপে

শংকর কুমার দে ॥ ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা, সেনা হস্তক্ষেপের উদ্যোগ’... ফোনালাপের ষড়যন্ত্রের শিকড় অনেক গভীরে। ‘কেচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয়েছে’। গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় আনা হচ্ছে রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের। ফেঁসে যেতে পারেন অনেকেই। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে নিউইয়র্কে অবস্থারনত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার ফোনালাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা ও সেনা হস্তক্ষেপের কথাবার্তা ফাঁস হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চিকিৎসার নামে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে ষড়যন্ত্র করছেন তারও পরিকল্পনার প্রক্সি দিয়ে চলেছেন নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক খোকা। মান্না ও খোকার ফোনালাপ ষড়যন্ত্র শুধু দেশের ভেতরেই নয়, আন্তজার্তিক পর্যায়েও বিস্তৃত। অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোল বোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতাকে আড়াল করার জন্য সংলাপ ও শান্তির আড়ালে নাগরিক ঐক্য, শত নাগরিক, উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ, নাগরিক কমিটি ইত্যাদি নামের বিভিন্ন সংগঠন করে বিএনপি-জামায়াতের ‘বি টিম’ হিসেবে মাঠে নামিয়েছে ষড়যন্ত্রকারীরা। তাদের ষড়যন্ত্রের সকল শিকড় গিয়ে মিশেছে একই জায়গায়, যেটা হচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে অগণতান্ত্রিক পন্থায় নামাতে হবে। এতদিন ধরে দেশে ও বিদেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলা হলেও এখন তা হাতে নাতে ধরা পড়েছে মান্না-খোকার ফোনালাপের ঘটনায়। তারা ফোনালাপে যা বলেছেন, তার পূর্বাভাস ইতোমধ্যে অনেকের বক্তৃতা-বিবৃতিতে প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপির একজন সিনিয়র আইনজীবী যিনি গত মাসে বলেছেন, ১৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সরকারের পতন ঘটবে। বিএনপির দলচ্যুত আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি সরকারকে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার জন্য যা যা করার দরকার তা করতে হবে। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মান্নাও গত সপ্তাহেও এক সভায় বক্তৃতায় বলেছেন, সরকার সরে না দাঁড়ালে অন্য কেউ এসে ধাক্কা দিয়ে সরাবে। নিউইয়র্কে অবস্থান করে সাদেক হোসেন খোকা গত সপ্তাহে বলেছেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে সরকারকে ফেলে দিতে পারবে-এমন ধরনের হুমকিও দিয়েছেন। সূত্র জানায়, লন্ডনে তারেক রহমান ও নিউইয়র্কে সাদেক হোসেন খোকা-দু’জনেই চিকিৎসার নামে অবস্থান করছেন বিদেশে। তাদের দু’জনের নামেই রয়েছে মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা। তারা বিদেশে অবস্থান করে দেশী ও বিদেশী রাজনীতিক, আইনজীবী, সাংবাদিক, লবিস্টসহ নানা ধরনের ব্যক্তি যোগাযোগ করে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী কংগ্রেস সদস্যদের স্বাক্ষর জালিয়াতি, ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ্র সঙ্গে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ফোনালাপ কেলেঙ্কারি ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ঘটেছে। শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বিদেশেও ষড়যন্ত্রের শিকর ও ডালপালা গজিয়ে আছে। সূত্র জানায়, চিকিৎসার নামে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে নিউইয়র্কে অবস্থারনত বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকতে দেশে ফিরে আসবেন না এই দুই নেতা। দুই নেতার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন গোয়েন্দারা। তারা যে কোন মূল্যে হোক অগণতান্ত্রিক পন্থায় হলেও সরকারের পতন ঘটাতে চান। বিএনপি-জামায়াতের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতার ঘটনার অগ্রগতির বিষয়ে নিয়মিত আলাপ আলোচনার পাশাপাশি ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নাশকতার পাশাপাশি বিভিন্ন নামের নাগরিক নামের সংগঠন করে মানুষজনের মধ্যে আকর্ষণ দৃষ্টির মাধ্যমে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা হচ্ছিল। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি, যুদ্ধাপরাধীর বিচার, জামায়াত-শিবিরের নাশকতা, জঙ্গী তৎপরতা, মান্না ও খোকার ফোনালাপ কেলেঙ্কারির ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা। খোকার সঙ্গে মান্নার ফোনালাপে যেসব বিষয়বস্তু ও ব্যক্তির নাম ওঠে এসেছে, সেই বিষয়ে খতিয়ে দেখার পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে।
×