ইরান এক বছরের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করবে বলে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ২০১২তে জাতিসংঘে যে নাটকীয় ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা তার সত্যতা অস্বীকার করেছিল- মোসাদের একটি অতি গোপনীয় দলিল থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ফাঁস হওয়া অন্যান্য গোপন তথ্যের মধ্যে হামাসের সঙ্গে সিআইএর গোপন যোগাযোগের চেষ্টার কথাও আছে। খবর গার্ডিয়ানের।
এসব তথ্য বিশ্বের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থার শত শত ডেসিয়ার ফাইলও তারবার্তার গোপন ভা-ারের একটি অংশ। এটি সম্প্রতি বৃহত্তম গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসের ঘটনার অন্যতম।
ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ও তাঁর যুক্তি তুলে ধরতে একটি লাল রেখাসংবলিত বোমার এ কার্টুন ছবি নাড়িয়ে সদস্য দেশগুলোকে সতর্ক করে দেন যে, ইরান পরবর্তী বছরেই পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করবে এবং তিনি এই প্রক্রিয়া বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান। তবে কয়েক সপ্তাহ পরে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ভাগ করে দেয়া একটি গোপন রিপোর্টে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে, ইরান ‘অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় তৎপরতা চালাচ্ছে না।’ ওই রিপোর্টে শীর্ষ ইসরাইলী রাজনীতিবিদদের প্রকাশ্য দাবি ও বাগাড়ম্বরের সঙ্গে ইসরাইলের সামরিক ও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের মূল্যায়নের ব্যাপক পার্থক্যের বিষয় তুলে ধরা হয়।
আগামী ৩ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে নেতানিয়াহুর নির্ধারিত ভাষণের আগে ইসরাইলও তার ঘনিষ্ঠতম মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এসব তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটল। হোয়াইট হাইসের আশঙ্কা, ইসরাইলী নেতার প্রত্যাশিত জ্বালাময়ী ভাষণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচী প্রশ্নে তেহরানও বিশ্বের ৬ বৃহৎ শক্তির মধ্যে স্পর্শকাতর আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। মার্চের শেষ নাগাদ আলোচনা একটি কাঠামাতে পৌঁছানের শেষ সময় এবং ৩০ জুনের মধ্যে চূড়ান্ত নিষ্পত্তিকে পৌঁছাতে হবে। নেতানিয়াহু পরমাণু অস্ত্র প্রশ্নে কোন চুক্তি প্রতিহত করার অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি এই চুক্তি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণের সক্ষম করে তুলবে। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা নেতানিয়াহুর সফরের সময় তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন না। তিনি বলেছেন, আগামী মাসে ইসরাইলের সাধারণ নির্বাচনের এত কাছাকাছি সময় কোন বৈঠক অনুষ্ঠান প্রটোকল পরিপন্থী। এসব দলিলের প্রায়ই গোপনীয় অথবা অতি গোপনীয় চিহ্নিত করা ছিল এবং এগুলোর বিশ্বব্যাপী পাচারের ব্যাপ্তিকাল ২০০৬ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় এক দশক আলজাজিরা তদন্ত ইউনিটের কাছে এসব তথ্য ফাঁস করা হয়েছে এবং গার্ডিয়ানও তা ভাগ করে নিয়েছে। নথিপত্রের মধ্যে আছে আলকায়েদা, ইসলামিক স্টেট ও অন্যান্য সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালানোর বিশদ বিবরণ। এছাড়াও এতে পরিবেশবাদী কর্মীদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরির বিষয় অন্তর্ভুক্ত। ফাঁস হওয়া দলিলের মধ্যে আছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিআইএ হাসাসের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের চেষ্টা করেছিল। দক্ষিণ কোয়িরার গোয়েন্দা সংস্থা পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনগিসের নেতাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে এনেছিল।
বারাক ওবামা জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি আদায়ের একটি প্রচেষ্টা প্রত্যাহারের জন্য ফিলিস্তিনী নেতাকে হুমকি দিয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গোয়েন্দা সংস্থা একটি বিতর্কিত ১০ কোটি ডলারের যৌথ কৃত্রিম উপগ্রহ চুক্তির ব্যাপারে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি চালিয়েছিল। অন্য যেসব দেশের গোয়েন্দা সংস্থা পাচারকারীদের জালে ধরা পড়েছে সেগুলে হলো : যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জর্দান, ইউএই, ওমান ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশ।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: