ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মঈন আলির দুরন্ত সেঞ্চুরিতে স্কটিশদের ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারাল ইংল্যান্ড

স্বস্তির জয়ে আশায় ইংলিশরা

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

স্বস্তির জয়ে আশায় ইংলিশরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয় সব সময় প্রত্যাশিত। কিন্তু ম্যাচ শেষে ইয়ন মরগান-মঈন আলিদের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হবে- তারা বড় কিছু করে ফেলেছেন! অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের কাছে টানা হারে গ্রুপ পর্ব থেকে প্রায় বিদায় দেখছিল ইংলিশরা। কাল স্কটল্যান্ডকে ১১৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে সম্ভাবনা বাঁচিয়ে তুলল ইয়ন মরগানের দল (‘এ’ গ্রুপের পঞ্চম স্থানে)। কুলিনদের বাড়তি উচ্ছ্বাস এ কারণেই। ক্রাইস্টচার্চে জয়ের নায়ক মঈন আলির দূরন্ত সেঞ্চুরির (১২৮ রান) ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৩ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড। জবাবে ৪২.২ ওভারে ১৮৪ রানে অলআউট হয় স্কটল্যান্ড। প্রায় তিন দশকে (২৭ বছর) নিউজিল্যান্ডের মাটিতে কোন ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে মঈন আলির প্রথম সেঞ্চুরি আর ওপেনার ইয়ান বেলের হাফ সেঞ্চুরি মিলিয়ে ১৭২ রানের উদ্বোধনী জুটির পর স্কোরটা হয়ত আরও বড় হতে পারত। কিন্তু শেষদিকে সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় তা হয়নি। তবে তিন শতাধিক রান কোণঠাসা ইল্যান্ডকে মানসিক স্বস্তি এনে দেয়। বিশ্বকাপে মঈন-বেলের এই জুটি ইংল্যান্ডের হয়ে যে কোন জুটিতে রেকর্ড সর্বোচ্চ! তরুণ তারকা মঈন তাঁর ক্যারিয়ারসেরা ১২৮ রানের ইনিংসটি সাজান মাত্র ১০৭ বলে, যেখানে ছিল ১২টি চার ও ৫টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কার মার। ২৭ বছর বয়সী পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত ইংল্যান্ড ওপেনার উইকেটের চারপাশে দারুণ সব শট খেলে ক্রাইস্টচার্চে দর্শকদের মাঝে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। ২০তম ওয়ানডেতে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। যোগ্য সঙ্গী হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বেল। ৮৫ বলে ২ চারের সাহায্যে ৫৪ রান করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন ১৫৮ ওয়ানডের অভিজ্ঞতাপুষ্ট বেল। ব্রিসবেনে কার্লটন মিড ত্রিদেশীয় ওয়ানডেতে ভারতের বিপক্ষে অপরাজিত ৮৮ রানের পর হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হাঁকিয়েছিলেন ১৪১ রানের চিত্তাকর্ষক এক সেঞ্চুরি ইনিংস। অভিজ্ঞ ওপেনার ফর্মে ফেরায় ইংলিশ ভক্তরা নড়েচড়ে বসেছিলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে ৩৬ ও ৮ রানে আউট হয়ে হতাশ করেন তিনি। মঈনের সঙ্গে বেলের জ্বলে ওঠায় নতুন করে স্বপ্ন দেখবে ইংল্যান্ড। রবিবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হবে তাঁর দল। পাশাপাশি অধিনায়ক মরগানের ৪৬, জোস বাটলারের ১৪ বলে ২৪ ও জেমস টেইলরের ১৭ রানের ছোট ইনিংসগুলো ইংল্যান্ডকে বড় সংগ্রহ এনে দেয়। শেষদিকে স্কটিশ বোলিংয়ের কৃতিত্ব দিতেই হবে। অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইনআপের ওপর চাপপ্রয়োগ করে বেশ কয়েকটি উইকেট তুলে নিয়ে মরগানদের পাহাড়ের আরও চূড়ায় উঠতে দেন তারা। ৬৮ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নিয়ে সেরা বোলার তারকা পেসার জস ডেভি। পাশাপাশি ইয়ান ওয়ার্ডল, এ্যালাসডাইর ইভান্স, মাজিদ হক ও রিচি বেরিংটন প্রত্যেকের শিকার ১টি করে। জয়ের জন্য ৩০৪ রানের বিশাল লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে স্কটিশদের শুরুটা ইতিবাচকই ছিল। কিন্তু জেমস এ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, স্টিভেন ফিনের মতো দুর্দান্ত পেসারদের সামনে শেষ পর্যন্ত সেটি কাজে লাগেনি। ভাল শুরু করে শেষটায় হতাশ করেছেন তাঁরা। সর্বোচ্চ ৭১ রান আসে ওপেনার কাইল কোয়েটজার ব্যাট থেকে। ৮৪ বলে ১১ চারের সাহায্যে এ রান করেন তিনি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে গ্যাভিন হ্যামিল্টনের পর বিশ্বকাপে কোন স্কটল্যান্ড ব্যাটসম্যানের এটিই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। তবে অপরপ্রান্তে প্রিস্টন মমসেন ২৬, ম্যাথু ক্রস ২৩, আর মাজিত হকের ১৫ ছাড়া আর কেউই বলার মতো রান পাননি। ৪ উইকেটে ১১৪ থেকে বাকি ৬০ রান যোগ করতে শেষ ৬ উইকেট হারায় স্কটিসরা। ইংল্যান্ডের হয়ে সফল পেসার স্টিভেন ফিন ২৬ রান দিয়ে ৩টি, জেমস এ্যান্ডারসন, ক্রিস ওকস ও স্পিনার মঈন আলি প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট। ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর বল হাতে ২ উইকেট- বিশ্বকাপে কোন ইংলিশ ক্রিকেটারের এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্য এই প্রথম! নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটের পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারল স্কটল্যান্ড। স্কটিসরাই প্রথম দল যারা কমপক্ষে দুই বিশ্বকাপে ১০ ম্যাচ খেলে এখনও জয়ের দেখা পায়নি! ম্যাচ শেষে নিজেদের পারফর্মেন্সে সন্তোষ প্রকাশ করেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ‘প্রথম দুই ম্যাচে হারের পর এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস যোগাবে। ছেলেরা দারুণ খেলেছে। বিশেষ করে ওপেনিং জুটিতে মঈন ও বেলের কথা আলাদা করে না বললেই নয়।
×