ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লেখার সঙ্গে তহবিলের সম্পর্কের কথা গোপন রাখেন উই হক সুন

কর্পোরেট অর্থে আবদ্ধ জলবায়ু বিজ্ঞান

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

কর্পোরেট অর্থে আবদ্ধ জলবায়ু বিজ্ঞান

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আইন তৈরির পথে বাধা দিতে চান এমন রাজনীতিকরা কয়েক বিজ্ঞানীর লেখা উদ্ধৃত করে তাদের যুক্তিকে জোরালো করার চেষ্টা করেছেন। গ্রিন হাউস গ্যাস মানুষের প্রতি সামান্যই ঝুঁকির সৃষ্টি করে বলে এসব বিজ্ঞানী দাবি করে থাকেন। রাজনীতিকরা প্রায়ই যাঁদের নাম উল্লেখ করে থাকেন, তাদের অন্যতম হলেন উই-হক সুন। তিনি উইলি নামেও পরিচিত। এ বিজ্ঞানী হার্ভার্ড স্মিথ সনিয়ান সেন্টার ফর অস্ট্রোফিজিকসে কর্মরত। সৌরশক্তির তারতম্যই বিশ্বের সাম্প্রতিক উষ্ণায়নের জন্য বহুলাংশে দায়ী হতে পারে বলে তিনি দাবি করেন। -ইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস। তিনি প্রায় রক্ষণাশীল নিউজ প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকেন, মার্কিন কংগ্রেস ও রাজ্য আইনসভাগুলোতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এবং বিশ্বের উষ্ণায়ন নিয়ে ঝুঁকি থাকার কথা অস্বীকার করে থাকেন এমন ব্যক্তিদের সম্মেলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ড. সুনের লেখাগুলো বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে তার অর্থ নেয়ার সঙ্গে কতখানি সম্পর্ক যুক্ত ছিল, তা নব-প্রকাশিত দলিলপত্রে দেখা যায়। তিনি গত দশকে জীবাশ্ম-জ্বালানি শিল্পের মালিকদের কাছ থেকে ১২ লাখেরও বেশি ডলার অর্থ গ্রহণ করে ছিলেন। কিন্তু তিনি তার অধিকাংশ বৈজ্ঞানিক লেখায় তার এ স্বার্থ-সংশ্লিষ্টতার কথা প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি প্রকাশ করেছিলেন এমন ১১টি লেখাতে ঐকথা প্রকাশ করেন এবং ঐসব লেখার অন্তত আটটিতে তিনি তার লেখা ছেপেছিল এমন সাময়িকীগুলোর নৈতিক দিকনির্দেশনা লঙ্ঘন করেছিলেন বলে মনে হয়। ড. সুন ঐ দলিলপত্র সম্পর্কিত প্রশ্নাদির জবাব দেননি, তবে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে তার অর্থ পাওয়া তার বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে প্রভাবিত করেনি বলে তিনি অনেক দিন ধরেই দাবি করে এসেছেন। পরিবেশবাদী গ্রুপ গ্রীনপিস ফ্রিডম অব ইনফরমেশনের আওতায় ঐ দলিলপত্র সংগ্রহ করেন। গ্রীনপিস ও এর ঘনিষ্ঠ গ্রুপ ক্লাইমেট ইনভেস্টিগেশনস সেন্টার গত সপ্তাহে কয়েকটি বার্তা সংস্থার কাছে ঐ দলিলপত্র পাঠায়। মানুষের কাজকর্ম বিশ্বের উষ্ণায়ন ঘটাচ্ছে কিনা, তা নিয়ে প্রকাশ্য বিতর্কের বিস্তার ঘটাতে ড. সুনের মতো বিজ্ঞানীরা কি ভূমিকা পালন করছেন, ঐ দলিলপত্রে তার ওপর আলোকপাত করা হয়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, মানুষের কাজকর্মই পৃথিবীর উষ্ণায়নের কারণ এবং গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণ সভ্যতার প্রতি দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানের ইতিহাসবিদ ও সমাজ-বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৯৬০-এর দশকের টোবাকো ওয়ারের পর থেকে বড় বড় কোম্পানি তাদের স্বার্থের ক্ষতি করবে এমন আইন তৈরির পথ বন্ধ করতে বৈজ্ঞানিক সন্দেহের মতো কোন কিছু সৃষ্টি করার এক কৌশল অবলম্বন করেছে। এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলো সাধারণত তাদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে থাকে এবং নিরপেক্ষ গবেষক বলে মনে হয় এমন ব্যক্তিদের সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। জীবাশ্ম-জ্বালানি শিল্পের মালিকরা বছরের পর বছর ধরে এ কৌশল অনুসরণ করে এসেছেন। কিন্তু তাদের তৎপরতার বিস্তারিত দিক বহুলাংশে অজানা রয়ে গেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইতিহাসবিদ নাওমি অরেসকেস বলেন, সন্দেহের বীজ বপন করার সমগ্র কৌশলটিই বৈজ্ঞানিক বিতর্কের পরিবেশ সৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, উইলি সুন এক ধরনের রাজনৈতিক মঞ্চে কোন ভূমিকা পালন করছেন। পরিবেশবাদীরা ড. সুনের কাজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন তুলে এসেছেন। জীবাশ্ম-জ্বালানি শিল্পপতিদের কাছ থেকে তার অর্থ নেয়ার ঘটনাও ইতোপূর্বে জানা ছিল। কিন্তু এ সম্পর্কের পূর্ণমাত্রা জানা ছিল না। দলিলপত্রে দেখা যায় যে, তার সুনির্দিষ্ট লেখাগুলোর সঙ্গে কোম্পানিগুলোর দেয়া অর্থের সম্পর্ক ছিল এবং তা প্রকাশ করা হয়নি। আধুনিক প্রকাশনার নীতিমালা অনুযায়ী এ সম্পর্কের বিষয়টি প্রকাশ করা প্রয়োজন।
×