ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিটিশ সরকারে উগ্রপন্থীরা!

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্রিটিশ সরকারে উগ্রপন্থীরা!

গত শতাব্দীর ৮০’র দশকের উগ্রপন্থী প্রবণতার একটি প্রিয় কৌশল ছিল এনট্রিজন, যাকে সহজ ভাষায় লোক ঢুকানোর মতবাদ বলা যায়। যখন কোন রাজনৈতিক দল কিংবা প্রতিষ্ঠানে আমূল পৃথক কর্মসূচী নিয়ে কোন গোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটে সে সময় এ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। লেবার পার্টি থেকে উগ্র ট্রটস্কিপন্থীদের বহিষ্কারের পর শব্দটি আকর্ষণ হারায়। কিন্তু এখন একজন মুসলিম নেতার মুখে শোনা যাচ্ছে যে, ইসলামী চরমপন্থীরা একেবারে সরকারের ভেতরে এনট্রিজন অনুশীলন করছে। তাও এমন এক নারীর জবানিতে যিনি এই সেদিন পর্যন্ত সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন। খবর দ্যা টেলিগ্রাফের। ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার প্রথম মুসলিম নারী সদস্য ক্যারনেস ওয়ার্সি ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত লোকজনকে সরকারী পদে নিয়োজিত করেছিলেন। তাদের মধ্যে এমন এক ব্যক্তি ছিলেন, যিনি একটি মৌলবাদী ইসলামী সম্প্রদায়ের লন্ডনে বিতর্কিত বিশাল মসজিদ নির্মাণের নকশার অনুমোদন লাভের জন্য এক ‘অপ্রীতিকর ও ভীতি প্রদর্শনের’ প্রচারাভিযানে জড়িত ছিলেন। ওই ব্যক্তি লেডি ওয়ার্সি এবং উপপ্রধানমন্ত্রী নিক ক্লেগ প্রতিষ্ঠিত ‘মুসলিমবিরোধী বিদ্বেষ সংক্রান্ত ক্রস গবের্নমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপে’ অন্যান্য উগ্রপন্থী অথবা সাবেক উগ্রপন্থীদের সঙ্গে পাশাপাশি বসতেন। গ্রুপের কোন কোন সদস্য আলোচনা বৈঠকে ইসলামপন্থী অথবা চরমপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করতে মন্ত্রিসভার প্রতি আহ্বান জানাতে তার সদস্যপদকে ব্যবহার করতেন। সেরকম একটি সংস্থাকে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন একবার ‘মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক ফ্রন্ট’ আখ্যায়িত করেছিলেন। কেউ কেউ আবার জাকির নায়েকসহ বিদেশীদের প্রতি ঘৃণা প্রচারকারীদের ব্রিটেনে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে জন্যও চাপ দিচ্ছে। জাকির নায়েক একবার বলেছিলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমেরই একজন সন্ত্রাসবাদী’ হওয়া উচিত। ওয়ার্কিং গ্রুপের সাবেক সদস্য ফাইয়াজ মুঘল টেলিগ্রাফকে বলেছেন, তিনি গ্রুপের কর্মকা-ের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিছু কিছু সদস্যের এমন সব গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে এবং সেসব গোষ্ঠীর এমন লোকদের সরকারে আনার জন্য তারা সুপারিশ করছে, যা দেখে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’ প্রকল্পসমূহের ব্যাপারে অতীত সাফল্য নেই এমন লোকদের কাজ কারবার দেখে আমার কাছে তা এক ধরনের এনট্রিজম মনে হয়েছে। মুঘল ‘টেলমামা’ বলে একটি জাতীয় সত্ত্বার প্রবাস যাদের কাজ মুসলমানদের ওপর হামলার নজরদারি করা। আরেকজন সদস্য বলেন, ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ সাইয়েদা ওয়ার্সির ব্যক্তিগত প্রকল্প এবং তিনি সদস্যদের নিযুক্তির জন্য দায়ী। গ্রুপে কাদের রাখা হচ্ছে সে ব্যাপারে সামান্যই স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়।’ ২০১২ ওই ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয় এবং গাজা সংকটের ব্যাপারে সরকারের ‘নৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য’ নীতির প্রতিবাদে লেডি ওয়ার্সির পদত্যাগের পরেও গ্রুপের কাজ অব্যাহত থাকে। গার্ডিয়ানের অপর এক খবরে বলা হয়- সাবেক মন্ত্রী ব্যারনেস সাইদেয়া ওয়ার্সি বলেছেন, এটি ক্রমশ স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হচ্ছে যে লোকেরা তাদের উপাসনালয়ের চেয়ে তাদের বেডরুমেই বেশি করে চরমপন্থার দিকে ঝুঁকছে। তিনি বলেন, মানুষকে চরমপন্থার দিকে টেনে নেয়া উগ্রপন্থীদের নিবৃত্ত করার ব্যাপারে ব্রিটেন ‘নিরন্তর পরাজয় বরণের’ লড়াই চালাচ্ছে। বিশিষ্ট টরি নেত্রী স্কাই নিউজের মারনাথান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ইসলামিক স্টেট অনেক বিষয়ের মধ্যে একটিতে অবিশ্বাস রকমের সফল হয়েছে সেটি হলো তাদের নিজস্ব প্রচারণা চালানোর জন্য ইন্টারনেট ও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংকে কাজে লাগানো।’ ব্রিটিশ পুলিশ মঙ্গলবার গ্যাটউইক বিমানবন্দর থেকে ইস্তাম্বুলে বলে যাওয়ার পর তিনি কিশোরী শামিমা বেগম (১৫), খাদিজা সুলতানা (১৬) ও আমিরা আব্বাসির (১৫) খোঁজ পাওয়ার জন্য জরুরী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তারা আইএসে যোগ দিতে সিরিয়ায় পালিয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ বিবিসি রেডিও ফাইভে রাজনীতির ওপর সরাসরি এক অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ গোয়েন্দা বাহিনীর ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, ‘আপনি খড়ের গাদায় সুঁই খুঁজছেন, যা লক্ষণীয় সেটি হলো কিভাবে প্রায়ই আমরা খড়ের গাদাতেও সুঁই খুঁজে পাই। ভবিষ্যতেও এরকম কাজ অব্যাহত রাখতে গেলে আমাদের গোয়েন্দা বাহিনীর শক্তিকে হালনাগাদ করতে হবে। কারণ প্রযুক্তি সর্বদাই পরিবর্তিত হচ্ছে। আর সেজন্যই সংঘঠিত অপরাধ অথবা সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা মাঝপথে আটকিয়ে দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। স্কাই নিউজের অনুষ্ঠানে বিচারমন্ত্রী সাইমন হিউজ বলেন, তিনি আশা করেন তিনি স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি ফিরে আসার জন্য উৎসাহিত করে যে বার্তা পাঠানো হচ্ছে তা তারা জানতে পারছে। তিনি বলেন, স্কুলগুলোতে আইএসের বিরুদ্ধে এ পাল্টা যুক্তি তুলে ধারার বিষয়টি নিশ্চত করা সর্বদাই গুরুত্বপূর্ণ এবং শিশুদের এটি দেখাতে হবে যে ‘তাদের (আইএস) কাছে উত্তেজনা ও সাফল্য নিহিত নেই।’ যুক্তরাজ্যেই আছে সবরকম সুযোগ-সুবিধা।
×