ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউরোর দরপতনে সঙ্কটের মুখে রফতানি খাত

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ইউরোর দরপতনে সঙ্কটের মুখে রফতানি খাত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ইউরোর দরপতনে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশের রফতানি খাত। এক বছর আগে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা জার্মানির বাজারে ১০০ ইউরো মূল্যের এক ডজন পোশাক রফতানি করে দশ হাজার ৭০০ টাকা পেতেন; এখন পাচ্ছেন আট হাজার ৮৫০ টাকা। অথচ ছয় মাস আগেও এই একই পরিমাণ পোশাক রফতানি করে পাওয়া যেত দশ হাজার ৩০০ টাকা। এই ছয় মাসে ইউরোর দর পড়েছে প্রায় ১৬ শতাংশ। আর গত এক বছরে ইউরোর মূল্যমান কমেছে ২১ শতাংশ। রফতানিকারক এবং অর্থনীতিবিদরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, টানা অবরোধ-হরতালে এমনিতেই হুমকির মুখে পড়েছে রফতানি খাত। এরপর ইউরোর ধারাবাহিক দর পতনে তা বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, এক বছর আগে (২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি) ইউরো-টাকার বিনিময় হার ছিল ১০৭ টাকা। অর্থাৎ এক ইউরোর জন্য লাগত ১০৭ টাকা। গত রবিবার এক ইউরোর বিনিময় মূল্য কমে দাঁড়িয়েছে ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা, ছয় মাস আগেও (২০১৪ সালের ২২ আগস্ট) যা ছিল ১০৩ টাকা। অন্যদিকে এক বছর আগে ডলার-ইউরোর বিনিময় হার ছিল ১ দশমিক ৪ ডলার। অর্থাৎ এক ইউরোর জন্য লাগত এক ডলার ৪০ সেন্ট। এখন এক ডলার ১৪ সেন্টেই পাওয়া যায় এক ইউরো। ছয় মাস আগে এক ইউরোর জন্য খরচ করতে হতো এক ডলার ৩২ সেন্ট। শতকরা হিসাবে গত ছয় মাসে টাকার বিপরীতে ইউরোর মান কমেছে ১৬ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে কমেছে ২১ শতাংশ। অর্থাৎ এক বছরে ইউরোর বিপরীতে টাকা ২১ শতাংশ শক্তিশালী হয়েছে। ছয় মাসে শক্তিশালী হয়েছে ১৬ শতাংশ। এসব তথ্য পর্যালোচনা করে দেশের রফতানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘হরতাল-অবরোধ-সহিংস রাজনীতিতে এমনিতেই আমরা দিশেহারা। এর সঙ্গে ইউরোর অব্যাহত দরপতনে বড় ধরনের সঙ্কটের মুখে পড়েছে আমাদের রফতানি।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের ২০ শতাংশের বেশি ইউরোতে আসে। ইউরোপের বাজারগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য ছাড়া জার্মানি, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, ইতালি, নেদারল্যাল্ডসহ অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোতে ব্যবসা হয়ে থাকে। তবে আমাদের অন্যতম বড় বাজার যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ডলারেই লেনদেন হয়ে থাকে।’ পারভেজ বলেন, সহিংস রাজনীতিতে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশী ক্রেতারা নতুন অর্ডার দিচ্ছে না। আগের অনেক অর্ডারও বাতিল করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে কমছে ইউরোর দাম। সবমিলিয়ে আমরা বড় বিপদের মধ্যে পড়ে গেছি। বড় ধরনের নেগেটিভ ইফেক্ট পড়বে আমাদের রফতানি বাণিজ্যে। তবে টেক্সটাইল খাতের জন্য ভালো হচ্ছে’ জানিয়ে এই পোশাক রফতানিকারক বলেন, ‘এসব দেশ থেকে আমাদের টেক্সটাইল খাতের প্রয়োজনীয় যেসব মেশিনারি আমদানি হয় তার বিল ইউরোতে মেটানোয় ব্যয় কম হচ্ছে।’ উল্লেখ্য, ইউরো জোনের এই দেশগুলোতে নিট পোশাক এবং সোয়েটার বেশি রফতানি হয়। এ প্রসঙ্গে নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘সাত-আট মাস আগেও আমরা ১০০ ইউরোর রফতানি করে দশ হাজার ৮০০ পেতাম। এখন পাচ্ছি আট হাজার ৩০০ টাকা। আগে ১ ইউরো রফতানি করে যে টাকা পেতাম এখন তা পেতে ১ দশমিক ২ ইউরোর পোশাক রফতানি করতে হচ্ছে।’ বেসরকারী গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ডলার-টাকা উভয়ের বিপরীতেই ইউরো দুর্বল হচ্ছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আমাদের রফতানি খাতে পড়ছে। শুধু তৈরি পোশাক-ই নয় ইউরো জোনে অন্য পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে জানান অর্থনীতির এই গবেষক। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আমাদের মোট রফতানি আয়ের ৩০ শতাংশের বেশি আসে ইউরোপের বাজারগুলো থেকে। এর মধ্যে ২০ শতাংশের বেশি আসে ইউরো মুদ্রায় লেনদেন হওয়া ইউরো জোনের দেশগুলো থেকে।
×