ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দ্রুতই ডিসিসি নির্বাচন ॥ সব বাধা দূর

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

দ্রুতই ডিসিসি নির্বাচন ॥ সব বাধা দূর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে সব বাধা দূর হলো ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। সীমানা নির্ধারণ জটিলতায় ধীর্ঘদিন আটকে ছিল ডিসিসি নির্বাচন। ফলে ইচ্ছে করলেও কমিশনের পক্ষ থেকে এ নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছিল না। সোমবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সীমানা নির্ধারণের গেজেট কমিশনের হাতে পৌঁছেছে। সেখানে ডিসিসি নির্বাচনের জন্য ইসিকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ফলে ডিসিসি নির্বাচনে সব বাধা এবার দূরীভূত হয়েছে। কমিশন জানিয়েছে দ্রুতই ডিসিসি নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে সোমবার ফ্যাক্সযোগে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সীমানা সংক্রান্ত গেজেট ইসির সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলামের বরাবর পাঠানো হয়েছে। গেজেটের কপির সঙ্গে পাঠানো এক চিঠিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সরোজ কুমার নাথ ডিসিসি নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইসি সচিবকে অনুরোধও জানিয়েছেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের এক বৈঠকে হঠাৎ করেই ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর এই নির্দেশে ইসির পক্ষে সচিব মোঃ সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সীমানা সংক্রান্ত গেজেট হাতে পেলেই ডিসিসি নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে নির্বাচন কমিশন। সীমানা সংক্রান্ত কোন গেজেট এখনও কমিশনের হাতে এসে পৌঁছেনি। কমিশন ডিসিসি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। ভোটার তালিকাও প্রস্তুত আছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সীমানা সংক্রান্ত গেজেট আসলে নির্বাচনের পরবর্তী উদ্যোগ নেবে কমিশন। সোমবার গেজেট ইসিতে পৌঁছানোর পর ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে আর কোন বাধা রইল না। আইনী জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ডিসিসির নির্বাচন ঝুলে রয়েছে। ২০১২ সালে ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেও আদালতের নির্দেশে কারণে নির্বাচন পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। ডিসিসি নির্বাচনের ওপর আদালতের দেয়া স্থগিতাদেশও একের পর এক বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ১৩ মে হাইকোর্টে এ আদেশে ডিসিসি নির্বাচনের ওপর থেকে সব ধরনের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। আদালতের এ আদেশের ফলে ডিসিসির নির্বাচন নিয়ে সব ধরনের আইনী বাধা দূর হলেও সীমানা সংক্রান্ত জটিলতার কারণে আবারও আটকে যায় ডিসিসি নির্বাচন। এরপর মূলত ডিসিসি নির্বাচনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে দিকে তাকিয়ে ছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু গত ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর ডিসিসি নির্বাচনের সব বাধা দূর হতে থাকে। কমিশন জানায়, আইন অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন করার বিধান রয়েছে। ২০০৭ সালের মে মাসে অবিভক্ত ডিসিসির নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রায় দুই বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন সাবেক মেয়র বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা। বর্তমান সরকার গত ২০১১ সালের নবেম্বরে ৩৬টি ওয়ার্ড নিয়ে দক্ষিণ ও ৫৬টি ওয়ার্ড নিয়ে উত্তর নামে দুই ভাগ হয় ডিসিসি। এরপরই সাদেক হোসেন খোকাকে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে দুই সিটি কর্পোরেশনের জন্য আলাদা প্রশাসক নিয়োগ করা হয়। বর্তমানে অনির্বাচিত প্রশাসক দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আগামী নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা এ পদে বহাল থাকবেন। জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারি সীমানা নির্ধারণের গেজেটটি তৈরি করে মন্ত্রণালয়। এটি বিজি প্রেসের ওয়েবসাইটেও ছিল এতদিন। প্রায় ২৫ দিন পর সোমবার ডিসিসি নির্বাচনের নির্দেশ দিয়ে ইসিতে পাঠানো হয়েছে গেজেট। ২০১৪ সালে আদালত নির্বাচনের স্থগিতাদেশ তুলে নেয়ার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় দক্ষিণ সিটিতে সুলতানগঞ্জ ইউনিয়নের বেশ ক’টি এলাকা অন্তর্ভুক্ত করে। কিন্তু সেই এলাকাগুলোর সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ না করায় নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে পারছিল না ইসি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এখন ডিসিসি নির্বাচনে বাধা না থাকায় দ্রুত নির্বাচনের উদ্যোগ নেয়া হবে। এজন্য সব কিছই প্রস্তুত রয়েছে। ৪০ লাখ ভোটার তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বলা আছে নির্বাচন হলে তারা অর্থ দেবে। মন্ত্রিসভায় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব অনুমোদন ॥ বিশেষ প্রতিনিধি জানান, অবশেষে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুমোদনের পর প্রধানমন্ত্রী ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে সবাইকে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন। সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফাইল উপস্থাপন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মন্ত্রী বলেন, ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ফাইল নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রী তা অনুমোদন দেন। নিয়মানুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এখন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ডিসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুরোধ জানাবে। পরে নির্বাচন কমিশন এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে। অপর এক মন্ত্রী বলেন, সময়মতো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ডিসিসি নির্বাচনে যেন একাধিক প্রার্থী না থাকে সে বিষয়েও তিনি সবাইকে সতর্ক করেছেন। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডিসিসি নির্বাচনে সমন্বয় করে প্রার্থী দেয়ার ওপর জোর দেন। ওই মন্ত্রী বলেন, ডিসিসি নির্বাচনে মন্ত্রিসভার সব সদস্যকে একযোগে কাজ করতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ঢাকা মহানগরের দায়িত্বে যেসব আওয়ামী লীগ ও সহযোগী দলের নেতা রয়েছেন তাদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ডিসিসি নির্বাচনে কাজ করতে বলেছেন শেখ হাসিনা।
×