ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাহেলার সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার জয়

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

মাহেলার সেঞ্চুরিতে শ্রীলঙ্কার জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহেলা জয়াবর্ধনের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে লঙ্কানদের প্রথম জয় এটি। এর আগে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে ৯৮ রানে হেরেছিল তারা। ডুনেডিনে ৪৯.৪ ওভারে ২৩২ রানে অলআউট হয় টসে হেরে আগে ব্যাটিং পাওয়া আফগানরা। জবাবে ৪৮.২ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা। ১০০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন মাহেলা। দলীয় ৩৪ রানে অভিজ্ঞ নওরোজ মঙ্গল ও ৪০ রানে সঙ্গী ওপেনার জাভেদ আহমাদিকে হারিয়ে ধাক্কা খায় আফগানিস্তান। ১০ রান করা মঙ্গলকে ফেরান অধিনায়ক এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, ২৪ রান করা আহমাদি সুরাঙ্গা লাকমলের শিকারে পরিণত হন। এরপর আসগর স্টানিকজাই ও সলিমুল্লাহ শেনওয়ারি প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৭ ওভারে মূল্যবান ৮৮ রান যোগ করেন তারা। ৫৭ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৫৪ রান করা স্টানিকজাই স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের শিকারে পরিণত হন। ২৭ বছর বয়সী কাবুল হিরোর ৪০তম ওয়ানডেতে পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি এটি। ৭০ বলে ৩৮ রানের সংগ্রামী ইনিংস খেলেন শেনওয়ারি। এ জুটি ভাঙ্গার পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারালে বড় ইনিংস গড়তে ব্যর্থ হয় আফগানরা। মিরওয়াইজ আশরাফের ২৮ ও অধিনায়ক মোহাম্মদ নবির ২১ রান উল্লেখ্য। শ্রীলঙ্কার হয়ে তারকা পেসার লাসিথ মালিঙ্গা ও অধিনায়ক ম্যাথুস নেন ৩টি করে উইকেট। অপর পেসার সুরাঙ্গা লাকমলের শিকার ২। ২৩২ রান টপকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শিরোপা প্রত্যাশী লঙ্কানদের সহজেই জিতে যাওয়ার কথা। কিন্তু বল হাতে শুরুতেই তাদের বিপদে ফেলেন প্রতিপক্ষ পেসাররা। যেখানে নেতৃত্ব দেন দীর্ঘদেহী তারকা শাপুর জাদরান। স্কোরবোর্ডে রান জমা হওয়ার আগেই দুই ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নে ও তিলকারতেœ দিলশানকে সাজঘরে ফেরান তিনিÑ শূন্য রানে দুই ওপেনারের আউট হওয়ার ঘটনা বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই প্রথম (সর্বোপরি ওয়ানডেতে দ্বিতীয়)! দলীয় ১৮ রানে অভিজ্ঞ কুমার সাঙ্গাকারা (৭) ও ১২তম ওভারে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে দিমুথ করুনারতেœ (২৩) যখন সাজঘরে ফেরেন শ্রীলঙ্কার রান তখন মোটে ৫১। ২৩৩ কে মনে হচ্ছিল বহু দূরের পথ। নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই দারুণ এক অঘটনের স্বপ্নে বিভোর আফগানরা! বহু যুদ্ধের পোড় খাওয়া সৈনিক মাহেলা জ্বলে উঠলেন এমন কঠিন সময়ে। দলের বিপর্যয়ের মুখ খেললেন দারুণ এক সেঞ্চুরির ইনিংস। অধিনায়ক ম্যাথুসকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১২৬ রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন তিনি। নিজে ১২০ বলে ১০০ রানের ইনিংসটি খেলেন ঠা-া মাথায়। ৮ চার ও ১ ছক্কায়। সেঞ্চুরির মধ্য দিয়ে একইসঙ্গে রেকর্ড বইয়ে একাধিক অদল-বদলের নজির গড়েন ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলা ৩৭ বছর বয়সী কলম্বো হিরো। বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ সেঞ্চুরি। সৌরভ গাঙ্গুলীর সঙ্গে যৌথভাবে চতুর্থ সর্বাধিক। ৬ ও ৫টি করে সেঞ্চুরি নিয়ে এ তালিকায় ওপরে শচীন টেন্ডুলকর ও রিকি পন্টিং। শ্রীলঙ্কার হয়ে বিশ্বকাপে সর্বাধিক সেঞ্চুরি মাহেলারই। ৩ সেঞ্চুরিতে সাবেক গ্রেট সনাথ জয়সুরিয়া আছেন তার পেছনে। জয়সুরিয়ার (১১৭৫) পর বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানও (১০৬৫) তারই। কেবলই তাই নয়, বিশ্বকাপে এটি মাহেলার নবম পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস। ক্যারিয়ারের ১৯তম সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে একাধিক কীর্তিতে নাম লেখানো মাহেলা সাজঘরে ফেরার পর বাকি কাজ সারেন ম্যাথুস ও থিসারা পেরেরা। ৪৪ রান করে অধিনায়ক ম্যাথুস আউট হলেও মাত্র ২৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৭ রানে অপাজিত থেকে দলের জয় নিয়ে মাঠ ছড়েন অলরাউন্ডার থিসরা। সপ্তম উইকেট জুটতে জীবন মেন্ডিসকে নিয়ে নিজ দেশের (শ্রীলঙ্কার) বিশ্বকাপ ইতিহাসের সর্বোচ্চ জুটি (৫৮*) গড়েন তিনি। আফগানিস্তানের হয়ে পেসার হামিদ হাসান ৩টি, দৌলত ও শাপুর জাদরান নেন ১টি করে উইকেট। ২ খেলায় ১ জয় ও ১ হারে ২ পয়েন্ট নিয়ে ‘এ’ গ্রুপের চতুর্থ স্থানে শ্রীলঙ্কা। ওপরে থাকা নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের পয়েন্ট যথাক্রমে ৬, ৩ ও ৩। মেলবোর্নে বৃহস্পতিবার শ্রীলঙ্কার পরবর্তী ম্যাচ বাংলাদেশের বিপক্ষে। ম্যাচের নায়ক মাহেলা আফগানদের লড়াকু মনোভাবের প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে সতীর্থ ব্যাটসম্যান থিসরার পেরেরার ঝড়ো ইনিংসেও মুগ্ধ তিনি।
×