ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সীমান্তের ওপারে (১) ॥ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার চায় না বিএসএফ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সীমান্তের ওপারে (১) ॥ সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার চায় না বিএসএফ

মামুন-অর-রশিদ, কলকাতা থেকে ফিরে ॥ বাংলাদেশ ভারতের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ। তবে সীমান্ত হত্যা নিয়ে বিএসএফ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ও গণমাধ্যমের ভুল ধারণা রয়েছে, এর অবসান হওয়া উচিত। বিএসএফ সীমান্তে মারণাস্ত্রের ব্যবহার চায় না। বরং শান্তি বজায় রেখে সীমান্ত রক্ষায় কাজ করতে আগ্রহী। হত্যা বন্ধে সীমান্তে গুলি ইতোমধ্যে অনেক সীমিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। গত সপ্তাহে কলকাতায় সফররত বাংলাদেশ ও ভারতের সাংবাদিকদের সামনে এমন কথাই জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের উর্ধতন কর্মকর্তারা। তাদের মতে সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সরকার পর্যায়ে কিছু সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। এর মধ্যে সীমান্তে হত্যাসহ কিছু অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রে গরু চোরাচালান দায়ী। এ বিষয়ে দুই দেশের সরকারের মধ্যে সুরাহা হলে সীমান্তে অপরাধ কমে আসবে। ইতোমধ্যে সীমান্তে টহল দেয়ার সময় বিএসএফ প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার সীমিত করেছে। ২০১১ সাল থেকে এসব অস্ত্রের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিএসএফ কর্মকর্তাদের বক্তব্য-ভারতীয় ও বাংলাদেশী চোরাচালানি আর অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ন্ত্রণ করতেই কখনও কখনও বিএসএফ সদস্যরা অস্ত্র ব্যবহারে বাধ্য হন। তবে এর মাত্রা আগের চেয়ে এখন কমেছে। তাদের দাবি সীমান্তে কখনও কখনও বিএসএফ সদস্যদের ওপর আক্রমণের ঘটনাও ঘটছে। বিএসএফ জানায়, সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে চোরাচালানিদের হামলায় এক বিএসএফ জওয়ান নিহত হয়েছেন। আত্মরক্ষার জন্য তাদের অনেক সময় গুলি করতে হচ্ছে বলে দাবি করেন বিএসএফ কর্মকর্তারা। বিএসএফ দাবি করে সীমান্তে কখনই নিরীহ কাউকে গুলি করা হয় না। আবার গুলিতে কেবল বাংলাদেশীরাই যে মারা যায় এমন নয়, বিএসএফের সতর্ক চোখে ভারতীয় দুষ্কৃতকারীরাও মাঝে মধ্যে ধরা পড়ে। কেবল বেগতিক পরিস্থিতিতেই বিএসএফ গুলি চালায়। সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশপরগণা জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা ঘুরে বিএসএফের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বললে এসব জানান তারা। এছাড়া গত রবিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) কলকাতার গুরুসদয় রোডে বিএসএফের অফিসার্স মেসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএসএফের সাউথ-বাংলা ফ্রন্টিয়ারের মহাপরিদর্শক সন্দীপ সালুঙ্গে বলেন, সীমান্তে একটি জীবনহানিও দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, বিএসএফ একটি পেশাদার সুশৃঙ্খল বাহিনী। একটি জীবন নষ্ট হোক, কারও মানবাধিকার লংঘন হোক বিএসএফ সেটা চায়না। সীমান্তে কাউকে দেখলেই বিএসএফ গুলি করে, এমন ধারণা ভুল বলেও দাবি এই কর্মকর্তার। তিনি বলেন, বিএসএফ দু’দেশের মধ্যে সীমান্তে গুলি নিয়ে সব ধরনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান চায়। সালুঙ্গে বলেন দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে বিএসএফ অনেক বেশি সচেতন। বিএসএফের হিসাব মতে, তাদের বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে গত চার বছরে সীমান্ত এলাকায় ২১ ‘অনুপ্রবেশকারী’ বাংলাদেশী ও ৭ ভারতীয় দুষ্কৃতকারী নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালে ৪, ২০১২ সালে ৩, ২০১৩ সালে ৭, ২০১৪ সালে ৫ এবং ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২ বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। আর একই সময়ে ভারতীয় মারা গেছে ২০১১ সালে ২, ২০১২ সালে ৪ ও ২০১৩ সালে একজন। বিএসএফ জানায়, ২০১১ থেকে ২০১৫ সালের চলতি মাস পর্যন্ত চোরাচালানি অথবা দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণে চার বিএসএফ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ২০১২ সালে ১, ২০১৩ সালে ২ বিএসএফ সদস্য হামলায় নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ৮ জানুয়ারি চোরাচালানিদের হামলায় উত্তর চব্বিশপরগণা জেলার খালচি সীমান্তে মারা গেছেন বিএসএফের কনস্টেবল রশিকুল ম-ল। এ ঘটনার পর বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বিজিবির সার্বিক সহায়তাও পাওয়া গেছে বলে জানান বিএসএফ কর্মকর্তারা। তারা জানান, বিজিবি এরই মধ্যে রানা শেখ নামে অভিযুক্তসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে সীমান্তে চোরাচালানি আর দৃষ্কৃতকারীরা বেশ সক্রিয় উল্লেখ করে বিএসএফ এক পরিসংখ্যানে জানায়, গত চার বছরে চোরাচালানি ও দুষ্কৃতকারীদের আক্রমণে দক্ষিণ-বাংলা সীমান্তে তাদের ৩১৫ সদস্য মারাত্মক আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১১ সালে ৬৯, ২০১২ সালে ৮৩, ২০১৩ সালে ৬৯, ২০১৪ সালে ৮২ এবং ২০১৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১২ জন আহত হয়েছেন। অপরদিকে সীমান্তে হত্যাকা- কমাতে সম্প্রতি অপ্রাণঘাতী অস্ত্র নিয়ে টহল চালু করেছে ভারত। তবে চোরাচালানি ও দুষ্কৃতকারীরা সেই সুযোগ নিয়ে বিএসএফ সদস্যদের ওপর চড়াও হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
×