ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৩৮ লাশ উদ্ধার ;###;লাশ বহনে তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা ;###;নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা;###;৪১ লাশ উদ্ধার লাশ বহনে তাৎক্ষণিক ২ হাজার টাকা নিহতদের পরিবারকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা;###;৪১ লাশ উদ্ধার;###; লাশ বহনে তাৎক্ষণিক ২ হাজা

পাটুরিয়ায় সার বোঝাই কার্গোর ধাক্কা ॥ ফের লঞ্চডুবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

পাটুরিয়ায় সার বোঝাই  কার্গোর ধাক্কা ॥ ফের লঞ্চডুবি

গোলাম ছারোয়ার ছানু, মানিকগঞ্জ থেকে ॥ পাটুরিয়ায় মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় মাঝপদ্মায় যাত্রীবাহী লঞ্চডুবির ঘটনায় রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত ৪১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ পুরুষ, ১৬ নারী ও সাতটি শিশু রয়েছে। উদ্ধার হওয়া ৩০ লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উদ্ধার অভিযান চলছে। রাত সাড়ে এগারোটায় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম পাটুরিয়ায় পৌঁছে ডুবন্ত লঞ্চটিকে শনাক্ত করে টেনে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে। লঞ্চটি প্রায় দু’শ’ যাত্রী নিয়ে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট থেকে রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যাচ্ছিল। যাত্রীবাহী একটি লঞ্চ সারবোঝাই কার্গোর ধাক্কায় ডুবে গেছে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ী কার্গো জাহাজ এমভি নার্গিস-১ এর চালকসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সমুদ্র পরিবহন অধিদফতরের নটিক্যাল সার্ভেয়ার ক্যাপ্টেন শাহজাহানকে প্রধান করে গঠিত এ কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার পর পরই স্থানীয় কয়েকটি লঞ্চ ও ট্রলার গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এরপর মানিকগঞ্জের দুটি ফায়ার সার্ভিস দল উদ্ধার কাজে অংশ নেয়। দুপুরের পর ঢাকা ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। আরিচা পোর্ট অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে পাটুরিয়া থেকে এমভি মোস্তফা নামের একটি লঞ্চ প্রায় ২শ’ যাত্রী নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে যাচ্ছিল। মাঝপদ্মায় সারবোঝাই একটি কার্গোর সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে ডুবে যায়। এ সময় অনেক যাত্রী পাড়ে উঠতে সক্ষম হলেও বহু নিখোঁজ রয়েছে। ডুবন্ত লঞ্চটির বেঁচে যাওয়া কয়েক যাত্রী জানান, লঞ্চটিতে প্রায় দেড়শ’ যাত্রী ছিল, লঞ্চটি দ্রুত কার্গোটির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচ- বেগে ধাক্কা খেয়ে মাঝ নদীতে ডুবে যায়। এ সময় লঞ্চের ছাদে ৬০-৭০ এবং নিচে ৭০-৮০ যাত্রী ছিল। ছাদের ওপর থাকা সবাই লাফিয়ে বেঁচে গেলেও ভেতরে যাত্রীরা আটকা পড়ে। বিকেল পাঁচটার দিকে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি নিহতদের প্রতি পরিবারকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লাশ বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার কথ বলা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর পাটুরিয়া নৌ-পুলিশ কার্গোর মাস্টার ইকবাল ও কার্গো লস্কর শহীদুল ইসলামকে আটক করে পুলিশ। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিকে উদ্ধার করার জন্য মাওয়া ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম রওনা দিয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রুস্তম ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছেনি। মুন্সীগঞ্জ থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, মাওয়ার শিশুলিয়া ঘাট থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘রুস্তম’ পাটুরিয়ায় দুর্ঘটনাস্থলে রওনা হয়েছে। রবিবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে রুস্তম ঘাট ছাড়ে। বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ড. খন্দকার শামসুজ্জোহা এই তথ্য দিয়ে জানান, রুস্তম পাটুরিয়া পৌঁছতে অন্তত ছয় ঘণ্টা লাগবে। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় তিনি জানান, আরও চার ঘণ্টা লাগবে। বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন জানান, ডুবে যাওয়া এমএল মোস্তফাকে ২০ ফুট পানির নিচে শনাক্ত করা হয়েছে। এটির ওজন হবে প্রায় ৫০ টন। আর রুস্তমের ক্ষমতা ৬৫ টনের। তাই রুস্তম পৌঁছার পরই এটি তোলা হবে। এটি উদ্ধারে নারায়ণগঞ্জে থাকা আধুনিক জাহাজ ‘নির্ভীক’ বা ‘প্রত্যয়’র প্রয়োজন নেই। উদ্ধারকারী অপর জাহাজ ‘হামজা’ রয়েছে পটুয়াখালীতে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে নৌ-দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি এক শোকবার্তায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দুর্ঘটনার কারণ তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী এ কথা জানান। প্রধানমন্ত্রী নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
×