ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রোগবালাইয়ের সঙ্গে লড়াই

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

রোগবালাইয়ের সঙ্গে লড়াই

রোগশোক বলে-কয়ে না এলেও ছোঁয়াচে রোগ থেকে মানুষ সাবধান থাকে। কারও জলবসন্ত কিংবা গুরুতর কোন ছোঁয়াচে রোগ হলে নিশ্চয়ই তার গা ঘেঁষে কেউ বসে না। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখেই চলে। আমাদের প্রতিবেশী দেশে সোয়াইন ফ্লুতে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যাও ইতোমধ্যে কয়েক শ’ ছাড়িয়েছে। সীমান্ত সংলগ্ন রাজ্যে এই অসুখে মৃতের সংখ্যা চল্লিশ ছুঁয়েছে। এই রোগে আক্রান্ত হলেই যে রোগীর নির্ঘাত প্রাণ বিয়োগ ঘটবে এমন কোন কথা নেই। তবু এ ধরনের ভাইরাসজনিত অসুখকে প্রাণঘাতী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সত্যি বলতে কী, সোয়াইন ফ্লুকে বিরাট গুরুত্ব দেয়ারও কিছু নেই। যথাযথ গুরুত্বই বাঞ্ছিত। এত এত মৃত্যু দেখে কষ্ট লাগতে পারে, কিছুটা ভয় লাগাটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আতঙ্কিত হয়ে পড়ার কিছু নেই। পাশের দেশ বলেই যাওয়া-আসাটা আমাদের একটু বেশি বটে। চিকিৎসা বা ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা দরকারে বাংলাদেশের মানুষ ভারতে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে যায়। ওখানকার মানুষও আসে। এই যাওয়া-আসার ভেতর সংক্রামক রোগের জীবাণুও চলে আসতেই পারে। আর হাঁচি-কাশির মাধ্যমে অসুখটা ছড়ায় বলে জীবাণুর সিঁদ কাটার দরকার পড়ে না, সহজেই অন্যকে ছুঁতে পারে। বিশেষ করে হাঁচি-কাশির সময় নাকে-মুখে রুমাল চাপার অভ্যেস যাদের নেই। এ ব্যাপারে বাঙালী এখনও বিশেষ সুনামের অধিকারী হয়নি। তাই রোগজীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। আবার তার অর্থ এটাও নয় যে, মানুষ পাশের দেশে বেড়াতে যাওয়া বন্ধ করে দেবে। তাহলে বিষম বাড়াবাড়িই হবে। বাস, ট্রেন, আকাশপথে অবশ্য এরই মধ্যে নজরদারি শুরু হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকেও যথেষ্ট সচেতন বলেই ধারণা হচ্ছে। ইতোমধ্যে তিনি বক্ষব্যাধি ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালসহ দেশের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু ইউনিট খোলার নির্দেশ দিয়েছেন। এটাকে খানিকটা আগাম তৎপরতা বলে মনে হতে পারে অনেকের কাছেই। তবে সতর্ক থাকা তো দোষের কিছু নয়। আমাদের দেশে বছর ছয়েক আগে একবার এই রোগের প্রকোপ হয়েছিল। তখন মৃতের সংখ্যা দশের ওপরে ওঠেনি। সে সময় পোল্ট্রি শিল্প খানিকটা ধাক্কা খেয়েছিল। সোয়াইন ফ্লু অনেকটা বার্ড ফ্লুর মতো। মুরগির মাধ্যমে এ অসুখ ব্যাপকভাবে ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। তখন বহু সচেতন মানুষ ফার্মের মুরগির মাংস খাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় মুরগির খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। যদিও এই রোগের প্রতিষেধক আছে। যাহোক, বর্তমানে বাঙালীর ঘরকুনো বলে আর বদনাম নেই। এদেশ-সেদেশ করছে তারা হরদম। নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থাৎ একেবারে শ্রমজীবী মানুষও বিদেশে যাচ্ছেন। ফলে সোয়াইন ফ্লুর মতো কোন ভাইরাসে আক্রান্ত হতেই পারেন বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি। আক্রান্ত ব্যক্তির মাধ্যমে যাতে রোগজীবাণু না ছড়ায় তার প্রথম ব্যবস্থা তার বা তাদেরই নেয়া কর্তব্য। তথ্য এখন অবাধ ও গতিসম্পন্ন। বাতাসের আগে খারাপ খবর রটে যায়। মানুষও সতর্ক হতে পারে। কিসে কী হয়, কিভাবে ভাল থাকা যায়Ñ এসব তথ্য সবার কাছে পৌঁছানো এখন কঠিন নয়। হাসপাতালে ইউনিট খোলার আগের কাজটি হতে পারত সোয়াইন ফ্লু বিষয়ে জরুরী তথ্যগুলো নানা উপায়ে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেয়া। মিডিয়ায় মৃতের সংবাদ দেখে একটু আতঙ্ক জাগতে পারে বটে, সে কারণে তার পাশাপাশি বাঁচার উপায় বাতলে দিলে মানুষের উপকার হয়। সোয়াইন ফ্লু বলে নয়, যে কোন সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রেই আতঙ্কিত হয়ে লাভ হয় না। বরং হতে হয় সতর্ক, সচেতন। তবেই রোগবালাইয়ের সঙ্গে লড়াই সহজতর হয়।
×