ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্রিসবেন প্রবাসীদের শোকের দিন ছিল শনিবার

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ব্রিসবেন প্রবাসীদের শোকের দিন ছিল শনিবার

ফজলুল বারী, অস্ট্রেলিয়া থেকে ॥ ব্রিসবেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য শোকের একদিন ছিল শনিবার! কত যে আশা ছিল প্রবাস জীবনের শহরের মাঠে নিজের দেশের খেলা দেখার! এর জন্য অগ্রিম টিকেট-জার্সি-পতাকা কেনা-সংগ্রহ থেকে শুরু করে কত যে আয়োজন-প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল! বিদেশের মাটিতে দেশের লালসবুজ পতাকা দুলিয়ে টাইগার্সদের চিয়ার্স করার স্বপ্ন যে ছিল কতদিনের! সব স্বপ্ন-প্রস্তুতি প- করে দিল সাইক্লোন মার্সিয়ার ঝড়বৃষ্টি! অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও আশা ছিল প্রকৃতি সদয় হবে। খেলাটা শেষ পর্যন্ত গড়াবে মাঠে। কিন্তু খেলাটি যখন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, গ্যালারিতে অনেককে কাঁদতে দেখা গেছে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায়! বিদেশে কাজসহ নানান ব্যস্ততায় একুশে ফেব্রুয়ারি, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এসব শনিবার-রবিবার উদযাপন করা হয়। এবারে একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের স্মরণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনটি শনিবারই উদযাপন করা যেত! কিন্তু শুধু খেলার কারণেই ব্রিসবেনের উদ্যোক্তারা দিনটিকে এবার রবিবার পালনের আয়োজন করে রেখেছিলেন। কিন্তু প- হয়ে গেল সব! ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি এবার যেন তাদের প্রবাস জীবনের সত্যিকারের শোকের দিন হয়ে এসেছিল! বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সন্তান শাহেদ সদরুদ্দিন সপরিবারে ব্রিসবেন আছেন অনেক বছর। স্ত্রী, দুই ছেলেকে নিয়ে খেলা দেখার অনেক প্রস্তুতি তিনি নিয়ে রেখেছিলেন। শনিবার তিনি বললেন আজ কতবার যে আকাশ দেখেছি, আকাশের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত খেলা হবে কি না! বার বার করে চোখ বুলিয়েছি আবহাওয়ার রিপোর্টে, এর কোন লেখাজোখা নেই। আমাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে, সব প্রস্তুতি দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে সাইক্লোন, যা ভুলতে অনেক দিন যাবে। শাহেদ সদরুদ্দিন এখন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলের খেলা দেখতে এ্যাডিলেডে যাওয়ার চিন্তা করছেন। বললেন, ইংল্যান্ড এখন হতদ্যম, নাজুক অবস্থায় আছে। ওই খেলায় জিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করার বড় একটা সুযোগ টিম বাংলাদেশের। ব্রিসবেন প্রবাসী ফারুক রেজা দেশে গিয়েছিলেন সম্প্রতি। শুধু খেলাটির কারণে অনেক জরুরী কাজ অসমাপ্ত রেখে শুক্রবার ব্রিসবেন ফিরে আসেন। ফারুক বললেন, খেলাটি না হওয়ার কি কষ্ট তা বলে বোঝাতে পারব না। মেলবোর্ন প্রবাসী ডাঃ শুভ নিজের পরিবার ও পারিবারিক বন্ধুদের বরসর একটি দল নিয়ে খেলা দেখতে ব্রিসবেন আসেন। এ জন্য বিমান ভাড়া, অগ্রিম হোটেল বুকিং, ব্রিসবেনে আলাদা গাড়ি ভাড়াসহ নানান খরচাপাতি নিয়ে ভাবেননি। আগে দেশ। কিন্তু গ্যাবা স্টেডিয়াম থেকে এক বুক কষ্ট নিয়ে তাদের ফিরতে হয়েছে। এমনিতে ব্রিসবেনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা সিডনি-মেলবোর্নের মতো নয়। সব মিলিয়ে পাঁচ-ছয় হাজার হতে পারে। গ্যাবা স্টেডিয়ামের যে ধারণক্ষমতা তাতে খেলা হলেও বাংলাদেশ গ্যালারির পুরোটা পূর্ণ হতো কি না সন্দেহ ছিল। ভরসা ছিল ব্রিসবেনের বাইরে থাকা লোকজন। গ্রিফিত, গোল্ডকোস্ট, সানসাইন কোস্টসহ আরও নানা এলাকা থেকে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আসার কথা ছিল। সেন্ট্রাল কুইন্সল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস রকহেমটনে। ওই এলাকাগুলোতে থাকেন অনেক বাংলাদেশী শিক্ষক-ডাক্তারসহ পেশাজীবীরা। গ্যাবায় খেলা দেখতে যেতে তারা দুটি বাস ভাড়া করেছিলেন। কিন্তু সাইক্লোন আঘাত করে তাদের এলাকাতেই। দুর্যোগ পরিস্থিতির কারণে তারাও বাতিল করতে বাধ্য হন গ্যাবা যাত্রা। ক্রিকেট পাগল বাংলাদেশী প্রকৌশলী মাসুদ থাকেন আমেরিকায়। গ্যাবায় মতো একটি ভেন্যুতে বাংলাদেশ খেলবে এর সাক্ষী হতে সুদূর আমেরিকা থেকে ছুটে এসেছিলেন মাসুদ। কিন্তু খেলাটা না হওয়ায় তাকেও হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। এখন তিনি মেলবোর্ন যাবেন দলের খেলা দেখতে। সিঙ্গাপুরসহ আরও ক’টি দেশ থেকেও এসেছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। গ্যাবা সবার দুঃখ আর স্বপ্নভঙ্গের নাম হয়ে থাকল।
×