ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-দ. আফ্রিকা আগুন লড়াই আজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

ভারত-দ. আফ্রিকা আগুন লড়াই আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ বিশ্বকাপের নবম দিনে আজ মুখোমুখি হচ্ছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত ও আসরের অন্যতম হট ফেবারিট দক্ষিণ আফ্রিকা। দু’দলই নিজেদের প্রথম খেলায় জয় নিয়ে উজ্জীবিত। উন্মদনার লড়াইয়ে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে শুরু মহেন্দ্র সিং ধোনিদের। অন্যদিকে এবি ডি ভিলিয়ার্সের নেতৃত্বাধীন প্রোটিয়া শিবির প্রতিবেশী জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে তুলে নেয় প্রত্যাশিত সাফল্য। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ভারতের ঠিকে পেছনে তিনে অবস্থান দক্ষিণ আফ্রিকার। চ্যাম্পিয়ন স্কোয়াডে আছে বিরাট কোহলি নামের এক ব্যাটিং-বিস্ময়, প্রোটিয়াদের পেস-ত্রাস ডেল স্টেইন। ইটের জবাবে পাটকেল। সর্বোপরি মেলবোর্নে বিশ্বকাপের ‘বি’ গ্রুপে আজকের ম্যাচটিকে দেখা হচ্ছে ‘আগুন লড়াই’ হিসেবেই। বিশ্লেষকদের মতে, মূল লড়াইটা হবে ভারতীয় ব্যাটসম্যান আর দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের মধ্যে। অস্ট্রেলিয়ার দ্রুতগতির বাউন্সি উইকেটে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের প্রতিপক্ষের পেস আক্রমণের কঠিন পরীক্ষার মুখেই পড়তে হবে। চ্যাম্পিয়নদের শক্তিধর ব্যাটিংলাইন গুড়িয়ে দিতে আজ চার পেসার নিয়ে নামার পরিকল্পনা দক্ষিণ আফ্রিকান থিঙ্কট্যাঙ্কদের। ফলে সম্প্রতি দলের অন্যতম সফল স্পিনার ইমরান তাহিরও একাদশ থেকে ছিটকে যেতে পারেন! চার পেসার মানে ডেল স্টেইন, মরনে মরকেল, ভারনন ফিল্যান্ডার ও কাইল এ্যাবট এবং ওয়েইন পারনেলের মধ্য থেকে একজন। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে (এমসিজিতে) বোলিং কোচ এ্যালান ডোনাল্ড আগের দিন পারনেলকে যেভাবে সময় দিয়েছেন, তাতে ২৫ বছর বয়সী বাঁ হাতি পেসারেরই সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ক্রিকেট বিশ্লেষকদের ধারণা কোহলির জন্য অফস্ট্যাম্প লাইন বেছে নেবেন দক্ষিণ আফ্রিকান পেসাররা। বিরাট কেন পৃথিবীর সব ব্যাটসম্যানই প্রথম ছয়টা বল অনিশ্চয়তার করিডরে পড়লে অসম্ভব চাপে থাকেন। ডোনাল্ডের পরিকল্পনায় কোহলির জন্য দুটি সিøপ আর পয়েন্ট-গালি যেমন থাকবে, ঠিক তেমনি থাকবে শর্ট কাভারওÑ কাভার ড্রাইভ মিস হলেও কেল্লাফতে! শিখর ধাওয়ানকে বধের বিশেষ দায়িত্ব থাকবে স্টেইন-গানের ওপর। ২০১৩ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় স্কোর নেই হার্ডহিটার এই ওপেনারেরর। বাউন্সারে পুল বা হুক করতে গিয়ে বার বার আউট হয়েছেন তিনি। সুতরাং শিখরের জন্য শুরুতেই ধেয়ে আসবে স্টেইনের বাউন্সার, উল্টোদিকে মরকেলের। অথচ ভারতীয় দলের চিত্রটা ভিন্ন। প্রোটিয়াদের মানের অমন চার পেসার তারা পাবে কোথায়! সুতরাং অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজার সঙ্গে একজন স্পেশাল স্পিনার থাকছেইÑ দু’জনে মিলে পার করতে হবে ২০ ওভার। দক্ষিণ আফ্রিকানদের স্পিন দুর্বলতা সর্বজনবিদিত। যদিও এ নিয়েও ‘সুইপ’ শট খেলার পরিকল্পনা সাজিয়ে রেখেছে তারা। ব্যাটিংয়েও কী কম যাবে প্রোটিয়ারা? আছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের নাম্বার ওয়ান এবি ডি ভিলিয়ার্স। ক’দিন আগে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির নতুন রেকর্ড গড়েন দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক। ওপেনার হাশিম আমলাও নিজের দিনে যে কোন প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। ডেভিড মিলার-জেপি ডুমিনির কথা আলাদা করে না বললেই নয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রেকর্ড জুটি গড়ে দৃশ্যপট বদলে দিয়েছেন তারা। এবারের বিশ্বকাপের সেরা ফিনিশার হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে মিলারের। কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর মতে ব্যাট হাতে এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ফিনিশার মিলারই। সঙ্গে ফিল্ডিং ও সরাসরি থ্রোতে ভারতের চেয়ে ঢের এগিয়ে আফ্রিকানরা। তাকানো যাক চ্যাম্পিয়ন শিবিরের দিকে। আড়াই মাস আগে অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়ে বিশ্বকাপের আগে একমাত্র আফগানিস্তানের সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ ছাড়া আর জয় পায়নি ভারত। ত্রিদেশীয় সিরিজে হেরেছে ইংল্যান্ডের কাছে। এবার তাই দলটির সাফল্য নিয়ে শঙ্কা ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই চিরশত্রু পাকিস্তানকে ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে হারায় ভারত। দলটির বড় শক্তি ব্যাটিং, যেখানে বড় নাম কোহলি। সঙ্গে ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনির ঠা-া মাথার নেতৃত্বও চ্যাম্পিয়নদের জন্য এ্যাডভান্টেজ। ধোনিই একমাত্র অধিনায়ক যিনি টি২০ বিশ্বকাপ, বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিসহ ভারতকে সব বৈষয়িক শিরোপাই উপহার দিয়েছেন। খোদ প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্সও তা স্বীকার করেছেন। ‘কোহলির ব্যাটিং ও ধোনির নেতৃত্ব দলটির জন্য ভাইটাল। তার ওপর প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে উজ্জীবিত ভারত। সুতরাং এটি অনেক বড় ম্যাচ হাতে যাচ্ছে। আমাদের সেরাটা দিতে হবে।’ বলেন তিনি। আছেন রোহিত শর্মা। ওয়ানডে ইতিহাসের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে যার দখলে দু-দুটি ডাল সেঞ্চুরির রেকর্ড। স্বল্পদৈর্ঘীয় ক্রিকেটে রোহিত শর্মাও ভয়ঙ্কর নাম। আগের ম্যাচে ভাল বোলিং করেছেন তিন পেসার মোহাম্মদ শামি, উমেষ যাদব ও মোহিত শর্মা। সব মিলিয়ে বড় টুর্নামেন্টের বড় নাম ভারত। রেকর্ড-পরিসংখ্যানে অবশ্য ভারতই পিছিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে এ পর্যন্ত ৭০ ওয়ানডে খেলে ৪২টিতেই হেরেছে ধোনির দল। তার ওপর বিশ্বকাপে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে জয়ের নজির নেই ভারতের, তিনবার মুখোমুখি হয়ে হার সবতে। কাজটা তাই খুবই কঠিন। সাবেক গ্রেট শচীন টেন্ডুলকরও তাই মনে করেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা অত্যন্ত শক্তিধর। ওরা পেশিবহুল ও দ্রুতগতির। ফিল্ডিং ও বোলিং সক্ষমতায় প্রোটিয়ারা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে। সুতরাং প্রথম ম্যাচে জয়ে ঘোরের মধ্যে থাকলে চলবে না। বাস্তবতা বিচারে মাঠে সর্বস্ব উজার করে দিতে হবে ধোনিদের।’ বলেন ভারতীয় কিংবদন্তি।
×