ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবরোধে বিআরটিসির আর্থিক ক্ষতি সাড়ে ২০ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

অবরোধে বিআরটিসির আর্থিক ক্ষতি  সাড়ে ২০ কোটি টাকা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে চলমান সহিংসতায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (বিআরটিসি)’র আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ সাড়ে ২০ কোটি টাকারও বেশি। অবরোধ ও হরতালের নামে প্রতিষ্ঠানের ৪১টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে ১২টি গাড়িতে। ভাংচুর হয়েছে ৩০টির বেশি গাড়ি। অগ্নিসংযোগের কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮৩ লাখ টাকারও বেশি। ভাংচুরের কারণে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে চার লাখ ৬২ হাজার টাকা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি রাজস্বের পরিমাণ ১৯ কোটি ৫৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৭৫ টাকা। নাশকতার আশঙ্কায় সরকারী এই সেবা সংস্থাটির আন্তঃজেলা রুটে বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ হতে চলেছে। গত দেড় মাসের বেশি সময়ে বিআরটিসির আয় কমেছে প্রায় ১৮ কোটি টাকা। বিআরটিসি পরিচালক টেকনিক্যাল কর্নেল আবদুল্লাহিল করিম জনকণ্ঠকে বলেছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে চলমান নাশকতা থেকে বিআরটিসির পরিবহনও বাদ যাচ্ছে না। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করপোরেশনের গাড়ি জ্বালানো ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেশিরভাগ যাত্রীবাহী বাসই নাশকতার শিকার। তিনি জানান, চলতি বছরের এক জানুয়ারি থেকে সাত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিআরটিসির আর্থিক ক্ষতি সাড়ে ২০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নাশকতার ভয়ে অনেক রুটে গাড়ি চালানো সম্ভব হয় না। তাছাড়া গাড়ি কম চলার কারণ হিসেবে যাত্রী স্বল্পতাও রয়েছে। বিআরটিসির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকাসহ সারা দেশে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে সচল বাসের সংখ্যা ১ হাজার ১টি। লিজ দেয়া বাসের সংখ্যা ৮৬টি। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৭টি গাড়ি অনুমোদিত ২০৪টি রুটে চলাচলের কথা। সংস্থার পণ্যবাহী ১৩৮টি ট্রাকের মধ্যে বর্তমানে সচল আছে ১১৮টি। হরতাল-অবরোধের কারণে বিআরটিসির মোট সচল গাড়ির মাত্র এক-চতুর্থাংশ চলাচল করছে। এরমধ্যে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহর ও উপশহরেই বেশি বাস চলছে। টানা অবরোধের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ডাকা হরতালে ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যক্তি মালিকানাধীন কিছু গাড়ি চললেও দূরপাল্লার রুটে বাস চলাচল কম। এরপর দেশের প্রায় এক হাজার পয়েন্টে মোতায়েন করা হয় ১২ হাজার আনসার সদস্য। যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতি তিন কিলোমিটার অন্তত অন্তর আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এমনকি সরকারীভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও বেসরকারী বাস কোম্পানিগুলো গাড়ি নামাতে অনিচ্ছুক। নিজস্ব ডিপোর মাধ্যমে সারা দেশে বাস পরিচালনা করে বিআরটিসি। মতিঝিল বাস ডিপোর অধীনে ২০টির বেশি রুটে ১১৫টি বাস চলে। এই ডিপো থেকে বাস চলাচল কার্যত বন্ধ ছিল এক সপ্তাহ আগেও। গড়ে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০টি রুটে বাস চলেছে সীমিত পরিসরে। জানতে চাইলে মতিঝিল ডিপো ম্যানেজার নায়েব আলী জনকণ্ঠ’কে বলেন, গেল রবিবার থেকে আমরা হরতাল অবরোধের মধ্যে সকল রুটে সীমিত পরিসরে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে আমাদের ডিপো থেকে প্রতিদিন ১০০ গাড়ি চলাচল করে। শুক্রবারও প্রায় ৭০টি গাড়ি বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। অথচ মতিঝিল ডিপোতে শুক্রবার দুপুরে গিয়ে কোন কাউন্টার খোলা পাওয়া যায়নি। যাত্রী শূন্যও ছিল পুরো টার্মিনাল। ডিপো ম্যানেজার জানান, শুক্রবার স্টাফ বাস ছাড়া বিভিন্ন রুটের বাস সময়মতো ছেড়ে গেছে। তবে একটি রুটে ১০টি গাড়ি চলার কথা থাকলেও ৬/৭টি গাড়ি চলছে বলেও জানান তিনি। গাড়ি কম ছাড়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, যাত্রী কম থাকায় গাড়ি নামানো যাচ্ছে না। মতিঝিল ছাড়াও ঢাকায় চারটি বিআরটিসির আরও তিনিট বাস ডিপো রয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে মীরপুর, কল্যাণপুর, জোয়ারসাহারা। সারাদেশে ১২টি বাস ডিপো ও দুটি ট্রাক ডিপো রয়েছে। মতিঝিল বাস ডিপোসহ অন্যান্য ডিপো থেকে গাড়ি চলাচল নামমাত্র। নারায়ণগঞ্জ বাস ডিপো সূত্রে জানা গেছে, এ ডিপোর অধীনে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ মোট ৯টি রুটে ৮৪টি গাড়ি চলাচলের কথা রয়েছে। এরমধ্যে ১০ ভাগের এক ভাগ গাড়িও চলছে না। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ২টি, গুলিস্তান-মাওয়া ৪টি ও চিটাগাং রোড-সাভার রুটে গাড়ি চলছে নামমাত্র। রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, ফার্মগেট ও বনানীতে দেখা গেছে, বিআরটিসির টিকেট বিক্রির কাউন্টারগুলো বন্ধ। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে মতিঝিল থেকে মিরপুর, উত্তরা, গাজীপুর, গাবতলীসহ কয়েকটি রুটে অল্পসংখ্যক গাড়ি চলাচল করছে কাউন্টার টিকেট ছাড়াই। তবে এসব গাড়িতে যাত্রীসংখ্যা ছিল কম। সংস্থার কর্মকর্তারা বলেন, হামলার আশঙ্কায় দূরপাল্লার রুটগুলোতে নামমাত্র গাড়ি চলছে। যেসব রুটে বেশি নাশকতা হচ্ছে সেখানে গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ। সাধারণ সময়ে বাস ও ট্রাক থেকে প্রতি মাসে আয় হয় ২৩-২৪ কোটি টাকা। চলতি মাসে আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৭-৮ কোটি টাকা। সংস্থার মাসিক ব্যয় রয়েছে ২০-২১ কোটি টাকা।
×