ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবহার করা হতো এ্যাম্বুলেন্স

সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার হতো তৃণমূলের বারিকের হাত ধরে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

সারদার টাকা বাংলাদেশে পাচার হতো তৃণমূলের বারিকের হাত ধরে

অভ্রনীল মুখোপাধ্যায়, কলকাতা থেকে ॥ সারদার জাল শহর থেকে গ্রামবাংলা হয়ে চোরা পথে কিভাবে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের হাত ধরে তার প্রমাণ মিলল হাতেনাতে। বশিরহাটের তৃণমূল নেতা আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে বৃহস্পতিবার ইডি নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জানার চেষ্টা করছে কিভাবে, কার মাধ্যমে, কতদিন ধরে সীমান্তে অন্যান্য পাচার কার্য ছাড়াও সারদার টাকা বাংলাদেশে পাঠানোর কাজে যুক্ত। এমনতিতেই বশিরহাট মহকুমার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকার আব্দুল বারিক ছাড়া কোন ধুর সিন্ডিকেট চালানোর ক্ষমতা কারও নেই। গরু পাচার থেকে সোনা পাচার সবই চলে তার মধ্যস্থতায়। বিএসএফ ও পুলিশের একাংশ বারিকের কথাতেই ওঠে-বসে। বারিকের দাদা নিজেও তৃণমূলের জেলা পরিষদ সদস্য। সেই সুবাদে জেলা ছাড়াও রাজ্যস্তরের বেশ কয়েক তৃণমূল নেতার সঙ্গেও তার ওঠা-বসা। এমনিতেই তৃণমূলের এক সাংসদের নাম জড়িয়ে বাংলাদেশে জামায়াত নেতার অভিযোগের সঙ্গে সারদার টাকা সীমান্ত পার করে বাংলাদেশে পাঠানোর অভিযোগও আছে। ইডির হাতে আসার পর এবার বারিককে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে। সুন্দরবন এলাকার সীমান্তের চোরাপথে সারদার টাকা পাচার হতো, সে ব্যাপারে এখন আর গোয়েন্দাদের কোন সন্দেহ নেই। হাসনাবাদ-বশিরহাট-টাকী-স্বরূপনগরসহ সীমান্তের প্রায় ২০-২২টি ঘাট দিয়ে সারদার টাকা পাচারের মানিরুট। এই টাকা পাচার করা হতো বেশ কয়েকটি এ্যাম্বুলেন্সে করে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কলকাতার এক ব্যবসায়ীর মাধ্যমে সারদার মিডল্যান্ড ব্যাংকে জমা পড়া সারদার টাকার একটা বড় অংশ সীমান্তে এনে বাংলাদেশী মুদ্রায় রূপান্তরিত করে তা পাঠানো হতো বাংলাদেশে। আর এই কাজ হতো স্থানীয় তৃণমূল নেতা আব্দুল বারিক বিশ্বাসের হাত ধরে। আর মদদ পেতেন এই কাজে কলকাতার এক সাংসদের কাছ থেকে। স্বভাবতই শাসক দলের এই নেতার হাত যে অনেকদূর পর্যন্ত লম্বা ছিল তা জেনে যায় প্রশাসনের সবাই। তার ওপর নিজের দাদাও শাসক দলের জেলা পরিষদ সদস্য। তবু গত বছর ৯ মার্চ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে উত্তর চব্বিশপরগনার গোলাবাড়ী থেকে কয়েক কোটি টাকার সোনার বিস্কুটসহ কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর গ্রেফতার করে তৃণমূলের নেতা আব্দুল বারিক বিশ্বাসকে। কিছুদিন পর জামিন মিললেও ফের তাকে গ্রেফতার হতে হয়। বারিককে গ্রেফতার করে পাওয়া যায় ৪৫ কিলোগ্রাম সোনার বিস্কুট, যার বাজার মূল্য প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এছাড়াও তার বাড়ি তল্লাশি করে পাওয়া যায় আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়াও একটি গোপন ডায়রি। গোয়েন্দারা এখন সেগুলোই খতিয়ে দেখছেন। বারিকের বাড়ি বশিরহাটের সংগ্রামপুরে হলেও বারাসাত ও রাজারহাট এলাকাতেও আছে আরও দুটি বাড়ি। বশিরহাট মহকুমার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকায় এহেন পাচারের কাজে সিদ্ধহস্ত এমন একজনকে দীর্ঘদিন ধরেই কেন শাসক দল আশ্রয় দিয়েছিল, কেন তার দাদাকে জেলা পরিষদের সদস্য করা হলো সেসবই এখন সারদা তদন্তে প্রশ্নচিহ্নের সামনে।
×