ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই বাংলার ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মমতা ব্যানার্জী

বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইন্দো-বাংলা কমিটি গঠনের পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইন্দো-বাংলা কমিটি গঠনের পরামর্শ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অনুষ্ঠানটির নাম দেয়া হয়েছে ‘স্পেশাল বিজনেস সেশন।’ এই অনুষ্ঠানের মধ্যমণি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। এপার-ওপার বাংলাসহ পুরো ভারতবর্ষের সঙ্গে কিভাবে বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হতে পারে সে বিষয়েই এই সেশনের আয়োজন। তবে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্বপূর্ণ এই দিনে মমতাকে কাছে পেয়ে যেন আরও আবেগী হয়ে উঠলেন সবাই। মমতাও নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। গেয়ে উঠলেন কালজয়ী সেই গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।’ বললেন, বাংলাদেশ-ইন্ডিয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাই এই দু’দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে হবে। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আছি। কিভাবে দু’দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া যায় সে বিষয়ে পরামর্শ দিলেন মমতা। এ জন্য খুব দ্রুত একটি যৌথ বিজনেস কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়ে তিনি জানালেন, এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দু’দেশের বাণিজ্যিক বাধাগুলো দূর হতে পারে। বাংলাদেশ হচ্ছে গেট হয়ে। এই গেটওয়ে ব্যবহার করে ভারত-বাংলাদেশের পাশাপাশি সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বিজনেস গেটওয়ে গড়ে ওঠতে পারে। তিনি বলেন, সমস্যা আছে এবার সমাধান নিয়ে ভাবুন। শনিবার বিকেলে রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন মমতা ব্যানার্জী। এফবিসিসিআই, আইবিসিসিআই ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স যৌথভাবে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। ইন্দো-বাংলা চেম্বারের (আইবিসিসিআই) সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ওই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, আইবিসিসিআইয়ের উপদেষ্টা আব্দুল মাতলুব আহমদ, আইসিসির প্রেসিডেন্ট রুপেন রায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন, ড. রাজীব সিং প্রমুখ। এছাড়া ওই অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, সাবেক প্রথম সহসভাপতি আবুল কাশেম আহমেদ ও জসিম উদ্দিনসহ দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। মমতা ব্যানার্জী বলেন, শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, সংযোগ স্থাপনে যুক্ত হতে পারে নেপাল-ভুটানও। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সব টিভি চ্যানেল ভারতে প্রচার হতে পারে। শুধু তাই নয় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ মালিকানায় একটি ব্যবসায়ী টেলিভিশন চালু করা যায়। ভারতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল প্রচারে কোন বানিজ্যিক বাধা নেই। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারাও আসুন, আমরাও আসি। আমরা সবাই আসব, সবাই যাব। দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়নে ইন্দো-বাংলা কমিটি করার আহ্বান জানান মমতা ব্যানার্জী। মমতা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ইমোশনাল। দু’দেশের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না। দু’দেশকে এক মনে করি। আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হয়েছে, এটি আমাদের দু’দেশের পথ দেখাবে। ব্যবসার উন্নয়নের দ্বার খুলে দেবে। আমরা পাঁচ বছরের ভিসা দিচ্ছি আপনারাও পাঁচ বছরের জন্য দিন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ব্যবসার নতুন দিগন্ত খুলে দেয়া হবে। দুই দেশের যৌথ উদ্যোগে কারখানা নির্মাণ করা হবে। সেখানে দুই দেশের শিল্প উদ্যোক্তারা যৌথভাবে কাজ করবেন। এর আগেও কলকাতা-শিলিগুড়িতে কারখানা নির্মাণ হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ছিল। আপনাদের যা আছে আমাদেরও তা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনাদের সুন্দরবন আছে, আমাদেরও আছে। আপনাদের সমুদ্র সৈকত আছে, আমাদেরও আছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে। তাহলে কেউ তো পেছনে পড়ে নেই। চলুন না দুই দেশ এক সঙ্গে নেমে পড়ি। দুই দেশের দুটি পা একসঙ্গে জোড়া লাগাই। আমি চাই আমাদের দুই দেশের মধ্যে কোন সমস্যা না থাকুক। ইতোমধ্যে সীমানা নিয়ে যে সমস্যা ছিল তার সমাধান হয়েছে। তিস্তা সমস্যারও সমাধান হবে। এছাড়া অন্য সমস্যারও সমাধান হবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইন্দো-বাংলা যৌথ উদ্যোগে একটি ব্যবসায়ী টিভি চ্যানেল করুন। সেটাকে আমরা স্বাগত জানাব। তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশী দুটি চ্যানেল এটিএন ও বেশাখী টেলিভিশন আমরা দেখতে পাই। অন্যরাও আসতে পারেন। আমি ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গেও কথা বলে জেনেছি, ভারতে বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলে প্রচারে কোন বাধা নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে মমতা জানান, বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ও মাঝারি নারী শিল্প উদ্যোক্তাদের জন্য কলকাতার যে কোন মেলায় স্টল ভাড়া কমানো হবে। এ সময় ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরন বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই ঢাকা সফর দুই দেশের সম্পর্কের নতুন অধ্যায় উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের পণ্য ভারতে সহজে প্রবেশ ও বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের ভারতে গিয়ে বিনিয়োগের সুযোগও বাড়ানো হবে। ওই অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কানেকটিভিটি। বাংলাদেশ-ভারতের পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কানেকটিভিটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে দু’দেশের সরকারী পর্যায়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া ল্যান্ড বাউন্ডারিং চুক্তি ও তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা পাওয়া দরকার। এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ কাজ করছে। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ধীরে ধীরে দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কও জোরদার হয়েছে। তিস্তা চুক্তির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, এটি করতে হবে। তিস্তা শুকিয়ে যাচ্ছে। দেশের একটি বড় অংশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই বাস্তবতায় তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আমরা প্রত্যাশা করছি। আশা করছি মমতাদি নিজেই উদ্যোগী হয়ে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবেন। তিনি বলেন, শূন্য শতাংশ শুল্কে ভারতে পণ্য রফতানির সুযোগ থাকলেও শুল্ক ও অশুল্কজনিত কিছু সমস্যা এখনও রয়েছে। এগুলো সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। মোহাম্মদ আলী বলেন, দু’দেশের বাণিজ্যের প্রধান বাধা হচ্ছে শুল্ক ও অশুল্কজনিত সমস্যা। এগুলো দূর হওয়া প্রয়োজন। আব্দুল মাতলুব আহমেদ বলেন, আমাদের রিজার্ভ প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার ছুঁই ছুঁই করছে। এবার বাংলাদেশী উদ্যোক্তারাও কলকাতায় বিনিয়োগ করতে চায়। রাজ্য সরকারের অনুমতি পেলে বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা কলকাতায় হোটেল ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করবে।
×