ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থন মেলেনি বিএনপি এখন জঙ্গীনির্ভর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৫

বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সমর্থন মেলেনি বিএনপি এখন জঙ্গীনির্ভর

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ জঙ্গী তৎপরতা নির্ভর করেই চলছে বিএনপির কথিত আন্দোলন! শুধু দেশের মানুষের মুখেই নয়, দেশের গ-ি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পরিম-লে বিশ্ব নেতৃবৃন্দও এখন বলতে শুরু করেছেন সেই কথা। সন্ত্রাসী সংগঠন জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে দেশজুড়ে কথিত হরতাল-অবরোধের নামে পরিকল্পিতভাবে মানুষকে পুড়িয়ে মেরে বিএনপি দেশে একটি বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায় এবং তাদের জঙ্গীনির্ভর সহিংস-নাশকতামূলক আন্দোলনে দেশের এক শতাংশ মানুষেরও যে ন্যুনতম সমর্থন বা সংশ্লিষ্টতা নেই, সেই তথ্যটিও তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে তা এখন পৌঁছে গেছে ক্ষমতাধর বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে। দেশের রাজনীতিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে মাঠের খেটে-খাওয়া মানুষের কাছেও স্পষ্ট যে, গণআন্দোলন নয়, বরং জনগণকে জিম্মি করে, বীভৎস্য কায়দায় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণের অশুভ পথেই হাঁটছে বিএনপি-জামায়াত জোট। জোটের নেতাদের ধারণা, আন্দোলনে জনগণের সমর্থন না পাওয়া গেলেও মানুষের জীবন বাঁচাতে উদ্বিগ্ন হয়ে বিশ্ব নেতারা ছুটে আসবেন, সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসিয়ে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করবে। কিন্তু লাদেন-তালেবান-আলকায়দা কিংবা ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্টাইলে জঙ্গীনির্ভর প্রাণঘাতী নাশকতার আন্দোলনকে যে দেশবাসীসহ বিশ্ব নেতারাও পছন্দ করেন না, বরং ঘৃণা করেন। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানেই বিএনপি-জামায়াত নেতাদের কাছে তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশবিরোধী কিছু নির্দিষ্ট দেশের ওপর ভরসা করে বিএনপি আন্দোলনের নামে নাশকতা চালিয়ে গেলেও এখন কোন রাষ্ট্রই তাদের পাশে নেই। বিদেশীদের কাছে টানতে বিএনপির শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। বরং বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বড় বড় প্রায় সব দেশই বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তা বন্ধের জন্য বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এসব ঘটনায় সব কূল হারিয়ে বিএনপি-জামায়াতের জোটের নেতাকর্মীরা শুধু চরম হতাশই নয়, রাজনৈতিক ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির হাইকমান্ডের নেতাদের ধারণা ছিল যে, তাদের আন্দোলনে পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশই সমর্থন দেবে। একটি দেশ এখনও তাদের সমর্থন যুগিয়ে গেলেও বিএনপি নেতাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণিত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশে চলমান আন্দোলনের নামে নাশকতার মাধ্যমে শতাধিক মানুষকে হত্যার বিপক্ষে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাফ জানিয়ে দিয়েছে, আন্দোলনের নামে জঙ্গী তৎপরতা ও মানুষ হত্যার রাজনীতি তারা কোনভাবেই সমর্থন করে না, এসব কর্মকা- তারা মেনেও নেবে না। এ প্রসঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিই বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা সম্পর্কে তাঁদের দেশের অবস্থান স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনের পররাষ্ট্র দফতরে সেদেশে সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক শেষে জন কেরি সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে সহিংস হামলার নিন্দা জানিয়ে বিরোধীদলগুলোকে এ ধরনের সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রাজনৈতিক মতপ্রকাশের নামে সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে হামলা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতান্ত্রিক পথ ছাড়া অন্য কোন পথকেই যে সমর্থন করে না তাও জানিয়ে দিয়ে জন কেরি বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের ভিতে ফিরতে সহযোগিতারও প্রস্তাব রাখেন। শুধু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীই নন, জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সহিংসতা-নাশকতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই সবদলের রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করা উচিত। আর সরকারেরও দায়িত্ব সহিংসতা থেকে জনগণকে রক্ষা করা। পাশাপাশি চলমান সহিংস পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে তিনি সরকারকে কার্যকর পথ খোঁজারও আহ্বান জানান। জাতিসংঘ মহাসচিবের পাশাপাশি ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিনিধি দলও সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। কূটনীতিক পাড়ায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় মাসে হরতাল-অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতামূলক কর্মকা- বিশ্লেষণ করে বিশ্ব নেতারা মনে করছেন, বর্তমান সরকার অতীতের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিপরীতে বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলগুলো রাজনীতির নামে জঙ্গী স্টাইলে সন্ত্রাস চালাচ্ছে বলেই তাঁরা মনে করেন। আন্দোলনের নামে পেট্রোলবোমা, জ্বালাও-পোড়াও, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা এবং ন্যুনতম জনসম্পৃক্ততা না থাকা ইত্যাদি কারণে বিএনপির পক্ষে ন্যুনতম অবস্থান নিতেও পারছেন না বিশ্ব নেতারা। এছাড়া চলমান সন্ত্রাস-সহিংসতার মধ্যে বাংলাদেশে আদৌও কোন সংলাপের পরিবেশ রয়েছে কি-না, সেটা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন তাঁরা। বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও নিশ্চিত, বিএনপি আন্দোলনের নামে নাশকতা বন্ধ করে উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি না করলে কোনভাবেই সরকারের সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা নেই। এ প্রসঙ্গে জাসদের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি রাজনৈতিক আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদী ও নাশকতামূলক তৎপরতা চালাচ্ছে, তা দেশবাসীর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে পরিষ্কার। আমরা কঠিন সময়ে কঠিন শত্রু মোকাবেলা করছি। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এখন জঙ্গীবাদী আগুন সন্ত্রাসের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাদের কাছে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। আর দানবের সঙ্গে মানবের কখনও সংলাপ বা আপোস হতে পারে না। বিশ্বের সব দেশ যেভাবে সন্ত্রাসী-নাশকতাকারী ও জঙ্গীদের মোকাবেলা করে, বাংলাদেশেও সেভাবেই মোকাবেলা করা হবে। যারা সংলাপের কথা বলছেন তাদের বলব সরকারের কাছে তদবির না করে দেশ ও জনগণকে রক্ষায় আগুন সন্ত্রাস বন্ধ করতে খালেদা জিয়ার কাছে তদবির করুন। বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের মাঠের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, তারাও আন্দোলনের নামে এভাবে নৃশংস কায়দায় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যার ঘটনা কোনভাবেই সমর্থন করে না। দেড় মাসেরও অধিক সময় ধরে জনগণকে জিম্মি করে ব্যাপক সহিংসতা চালিয়েও সরকারের ওপর কোনধরনের চাপ সৃষ্টি করতে না পারায় কার্যত হতাশ মাঠের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও ধীরে ধীরে আন্তর্জাতিক সমর্থন বিএনপির ওপর থেকে প্রত্যাহারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আবার তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত দলটির কিছু নেতার মতে, তাদের আন্দোলন সফলই হয়েছে। কীভাবে সফল হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, একটি বছর গণতান্ত্রিক কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকারকে দাবি আদায়ের পথে আনা সম্ভব হয়নি। এখন হরতাল-অবরোধে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বেশ কিছু মানুষের প্রাণহানির ঘটনার পর বিশ্ব নেতাদের টনক নড়েছে। সরকারকে সংলাপের টেবিলে বসতে বাধ্য করতে বিশ্বনেতারা সরব হয়ে উঠেছেন। এ ঘটনায় সরকারও অনেকটাই চাপে রয়েছে। আর কিছুদিন এভাবে চললে সরকার সংলাপের টেবিলে বসতে এবং বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার দাবি অনুযায়ী সরকার পদত্যাগ করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে। তবে কট্টরপন্থী এসব নেতাদের অবস্থানের সঙ্গে দলটির কেন্দ্রীয় ও মাঠের অধিকাংশ নেতাই একমত হতে পারেননি। এদিকে, বিএনপির এমন পরিকল্পনা কোনদিনই বাস্তবে পরিণত হবার নয়, এমন কথাই বলছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিশ্ব নেতাদের দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা-নৈরাজ্যের কাছে সরকার কোনভাবেই নতি স্বীকার করবে না। দলটির পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, বিএনপি জোট আন্দোলনের নামে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ সারাদেশে জঙ্গী স্টাইলে সহিংস কর্মকা- চালাচ্ছে। আর সহিংসতা ও সংলাপ এক সঙ্গে চলতে পারে না। চলমান নাশকতা বন্ধ না হলে বিএনপি জোটের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না। এ প্রসঙ্গে শনিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এবং সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০ দলীয় জোট দেশব্যাপী পেট্রোলবোমা মেরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে। এই নৈরাজ্য, সহিংসতা ও নাশকতার কাছে শেখ হাসিনার সরকার নতি স্বীকার করবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন সংগ্রামে ব্যর্থ হয়ে বর্তমানে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে দেশব্যাপী পেট্রোলবোমা, অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে দেশের সাধারণ মানুষের জানমালের ক্ষতি করে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঘৃণার আগুনে আমরা পেট্রোলবোমার আগুন নিভিয়ে দেব।
×